ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যসেবার আলোকবর্তিকা কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ৪ মে ২০১৯

 স্বাস্থ্যসেবার আলোকবর্তিকা কমিউনিটি ক্লিনিক

এখন স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ ঝুঁকির মধ্যে থাকতে চান না। গ্রামীণ জনগণের অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সেবা বিতরণে প্রথম স্তর হিসেবে নীলফামারীর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যেন আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ব্যাপক সারা ফেলেছে নিরাপদ প্রসব কেন্দ্র হিসেবেও। প্রয়োজনীয় পরামর্শ, চেকআপ করাসহ প্রতি মাসে মাসে গিয়ে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) সহযোগিতা নিচ্ছেন গ্রামীণ জনপথের গর্ভবতী মায়েরা। দেশের স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম আলোচিত বিষয় ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প বা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছে স্বাস্থ্য মানুষের অমূল্য স¤পদ। প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিক। সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, জেলার ১৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৬টি নিরাপদ প্রসব কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান, প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে সিএইচসিপিদের। সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মণ জানান, গ্রামীণ জনপদের বাড়িতে প্রসব শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা মাঠপর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণসহ বাড়িতে প্রসবের ঝুঁকির বিষয় অবহিত করছেন জনগণের মাঝে। তিনি জানান, শুধু নিরাপদ প্রসব নয় সরকার বরাদ্দ দেয়া ৩২ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে রোগীদের জন্য। তিনি জানান নীলফামারী জেলায় যে সমস্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারি করা হয়, সে সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিগণকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কামাল আজাদ নীলফামারী এসে তাদের পুরস্কৃত করেন। সেই সঙ্গে ডেলিভারি কিট বিতরণ করা হয়। চলতি বছরের মধ্যেই জেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিককে নিরাপদ প্রসব কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ক্লিনিকে আগত সেবা গ্রহণকারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটেশন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, টিকার সাহায্যে রোগ প্রতিরোধ, কৃমি প্রতিরোধ, বুকের দুধের সুফল, ডায়রিয়া প্রতিরোধ, পুষ্টি সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। শুধু প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে যে এই আয়োজন তা নয়। সেবাগ্রহীতারা জানান এমন সেবা তারা প্রতিনিয়ত পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া সময়মতো প্রতিষেধক টিকা যেমন- যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া ইত্যাদিসহ কমিউনিটি ক্লিনিকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। ১৫-৪৯ বছর বয়সের সন্তানধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মায়েদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন, জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে শিশুর জন্ম নিবন্ধন, এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের ৬ মাস পর পর প্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ খাওয়ানো এবং রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের খুঁজে বের করা ও তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারগণ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণকারীদের জটিল কেসগুলোকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানপূর্বক দ্রুত উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করে। রোগী পরিবহনে এ জন্য স্থানীয় ভাবে রাখা হয়েছে ইজিবাইক। নীলফামারী সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের তছির উদ্দিন ক্লিনিকের সিএইচসিপি মনসুরা আক্তার জানান, আমার এখানে প্রতি মাসে দুই একজন করে গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসব করে থাকি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এখানে এ কর্মসূচী শুরু হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের ফলে দক্ষতার সঙ্গে মায়েদের সেবা কার্যক্রম দেয়া হয়। তিনি বলেন, গর্ভবতী মায়েদের খোঁজ খবর রাখার জন্য মোবাইল ফোন নম্বর খাতায় লিখে রাখা হয়েছে। কোন মাসে যদি না আসেন তাহলে ফোন করে খোঁজ খবর নেয়া হয়। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা দুলালী বেগম জানান, আমি প্রতি মাসে মাসে ক্লিনিকে গিয়ে আপার সঙ্গে পরামর্শ করে আসি। চেকআপ করা, খাদ্যগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন আপা। কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি স্বপ্না রানী রায় জানান, আমার ক্লিনিকে ২০১৪ সাল থেকে নিরাপদ প্রসব কেন্দ্র হিসেবে চালু হয়। প্রতি মাসেই ডেলিভারি হয়ে থাকে এখানে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সচেতনতা সৃষ্টির ফলে গ্রামের কেউ আর বাড়িতে সন্তান প্রসব করান না। প্রসব বেদনা শুরু হলেই ক্লিনিকে নিয়ে আসেন গর্ভবতী মাকে। কচুকাটা গ্রামে রাশেদা বেগম জানান, গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই আমি ক্লিনিকে নিয়মিত যাতায়াত করে সেবা গ্রহণ করি। সেখানেই আমার সন্তান প্রসব হয়। এখন আমি ও আমার সন্তান ভাল রয়েছে। একই এলাকার জাহানারা বেগম বলেন, আগোত বাড়িতে বাড়িতে দাই দিয়ে সন্তান প্রসব করানো হতো। এখন আর কেউ ঝুঁকি নেয় না। কোন সমস্যা হলে ক্লিনিকে যায়। ওখানে ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায়, এমনকি বিনামূল্যে ওষুধও দেন ডাক্তার আপা। গ্রামের নারীদের এক বাক্যে বলতে শোনা যায় শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক আমাদের এনে দিয়েছে আলোকবর্তিকা। -তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে
×