ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোচ স্টিভ রোডসের ইচ্ছাতেই দু’জনকে নেয়া হয়েছে

আয়ারল্যান্ড সফরে দলে তাসকিন-ফরহাদ

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

  আয়ারল্যান্ড সফরে দলে তাসকিন-ফরহাদ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মাত্র ১২ দিন আগে চরম দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়েছিলেন, কেঁদেছিলেন। সবাইকে নাড়া দিয়েছিল ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদের কান্না। ইনজুরির কারণে ফিটনেস সমস্যায় স্বপ্নের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি বলেই সেই দুঃখবোধ। এমনকি বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলেও একই কারণে ঠাঁই হয়নি। তবে জাতীয় দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ গত কয়েকদিন তাসকিনকে পর্যবেক্ষণ করে সবুজ সঙ্কেত দেয়ার পর প্রধান কোচ স্টিভ রোডস ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাকে দলে নিতে। তাই শেষ পর্যন্ত তাসকিনকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়ারল্যান্ড সফরের দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। একই সঙ্গে ঘরোয়া লীগে ফর্মের তুঙ্গে থাকা পেস অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজাকে নির্বাচকরা গুরুত্ব না দিলেও রোডসের ইচ্ছায় অবশেষে তিনিও আয়ারল্যান্ড যাওয়ার জন্য ডাক পেয়েছেন। রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি বিষয়টি নিশ্চিত করে। আগামী ১ মে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের উদ্দেশে তাই ১৯ সদস্যের বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবেই যাচ্ছেন তাসকিন-ফরহাদ। ইনজুরির কারণে এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন তাসকিন। বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগে তড়িঘড়ি করে পুরোপুরি ফিটনেস ফিরে পাওয়ার আগেই নিজেকে প্রমাণ করতে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু সেটি উল্টো হিতে-বিপরীত হয়েছে। তাকে দেখে নির্বাচকরা, ফিজিও, ট্রেনার ও কোচেরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাই বিশ্বকাপ দল ও আয়ারল্যান্ডের ক্রিদেশীয় সিরিজের দলে তাসকিনকে বাদ রাখা হয়। এর মধ্যে আরও দুই ম্যাচ খেললেও গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) যে দুর্ধর্ষ ফর্মে দেখা গিয়েছিল সেই তাসকিনের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। বিপিএলে ২২ উইকেট শিকার করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন নৈপুণ্যের তালিকায়। কিন্তু গোড়ালির ইনজুরির কারণে জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় পর ডাক পেলেও যেতে পারেননি নিউজিল্যান্ড সফরে। পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে ওঠায় ডিপিএলও খেলা হয়নি। যে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন তার মধ্যে একটিতে ৪ উইকেট শিকার করলেও প্রতিটি ম্যাচেই বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন। সেটি প্রমাণ করেছে তাসকিন ম্যাচ খেলার জন্য ফিট হতে পারেননি। এর মধ্যে জাতীয় দলের বিশ্বকাপ অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হয়। তাসকিনকেও সেখানে দেখা যায়। পেস বোলিং কোচ ওয়ালশ এর মধ্যে খুব ভালভাবে পরখ করেছেন তাসকিনকে। এরপরই তিনি প্রধান কোচ রোডসকে জানিয়েছেন তাসকিনকে নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। তাই রোডসও তাসকিনকে দলে টানার জন্য নির্বাচকদের এবং বিসিবিকে জানিয়েছেন। সে জন্যই শেষ পর্যন্ত ২৪ বছর বয়সী এ গতিময় বোলার আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য ডাক পেয়েছেন। অপরদিকে গত দেড় বছর ধরেই অভিজ্ঞ পেস অলরাউন্ডার ফরহাদ বেশ আলোচনায়। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করে গেলেও তার দিকে ফিরে তাকাননি নির্বাচকরা। সদ্য সমাপ্ত ডিপিএলে ১৬ ম্যাচ খেলে ৩৮ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। তার ধারে কাছে অন্য কোন বোলারের নৈপুণ্য নেই। এছাড়া ব্যাট হাতেও ছিলেন কার্যকরী। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে করেছেন ২০৭ রান। এর আগে ডিপিএলের টি২০ ফরমেটেও দুর্বার ছিলেন ৩২ বছর বয়সী ফরহাদ। ৪ ম্যাচে ১১ উইকেট ও ২২৭.৬৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেন ১০৭। অনেকেই ভেবেছিলেন এবার ফরহাদ জাতীয় দলে ফিরবেন। কিন্তু ডাক পাননি। ঘরোয়া লীগে তার সাম্প্রতিক এই ফর্ম নির্বাচকরা এড়িয়ে গেলেও কোচ রোডস অগ্রাহ্য করতে পারেননি। তার ইচ্ছাতেই শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের পর পুনরায় জাতীয় দলে ডাক পেলেন। ফরহাদ একসময় নিয়মিত সদস্য ছিলেন জাতীয় দলের। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত খেলেছেন ৩৪ ওয়ানডে এবং ১৩ টি২০। ২০১৪ সালে টি২০ খেললেও অবশ্য সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন আরও আগে। ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন। তবে এবার সব ফরমেটের ঘরোয়া আসরে ফর্মের তুঙ্গে থাকার পরও জাতীয় দলে ডাক না পাওয়াতে হতাশা ঝরেছিল এ পেস অলরাউন্ডারের কণ্ঠে। অবশেষে সেই হতাশা ভোলার সুযোগ পেলেন রোডসের ইচ্ছাতেই। এ বিষয়ে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, ‘তাদের ব্যাপারে কোচদের খুব আগ্রহ ছিল। সেই সঙ্গে মুস্তাফিজ ও রুবেলের বিকল্প হিসেবেই তাদের বিবেচনা করা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, প্রিমিয়ার লীগে হাল্কা চোটে পড়েছেন দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন। তারা শতভাগ ফিট নন। সে জন্যই তাসকিন-ফরহাদের অন্তর্ভুক্তি। আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় সিরিজে ভাল করতে পারলে হয়তো বিশ্বকাপেও সুযোগ আসতে পারে। এ বিষয়ে আকরাম বলেন, ‘কোন খেলোয়াড় চোটে পড়লেই কেবল বিশ্বকাপ দলে পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হবে। তবে আপাতত ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দলে পরিবর্তনের কোন সুযোগই নেই।’
×