ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ঠেকাতে ৩২ উপজেলায় ইসির বিশেষ কমিটি

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ঠেকাতে ৩২ উপজেলায় ইসির বিশেষ কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোটার তালিকা হালনাগাদে রোহিঙ্গারা যাতে কোনভাবেই অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেজন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশ ছাড়া কেউ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। এছাড়াও রোহিঙ্গা এলাকায় ভোটার হতে বিশেষ ফরমও ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও এবারের ভোটার তালিকায় হিজড়ারা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। তাদের জন্য থাকছে আলাদা ভোটার তালিকা। লিঙ্গ পরিচয়ের স্থানে পুরুষ, নারীর পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের নামও ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানায়, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কোন বিদেশী যাতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় কুসংস্কার এড়াতেও বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, অনেক নারী ধর্মীয় কারণে ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে চান না। ছবি তুলতেও চান না। এ ধরনের বাধা দূর করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকেই তারা এই কার্যক্রম চালাবে। আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। প্রায় দুই বছর পর নতুন করে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এবারের হালনাগাদে এক সঙ্গে চার বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম হয়েছে সেসব নাগরিকদের তথ্য এক সঙ্গে নেয়া হবে। এর মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তারা ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত ভোটার তালিকায় স্থান পাবেন। বাকিদের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ১৮ বছর পূর্ণ হলে সরাসরি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচী সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ৩২ উপজেলায় রোহিঙ্গা রয়েছে। এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সুপারিশ ছাড়া কাউকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আজ শুক্রবার থেকে মুসল্লিদের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অনেক মহিলা ছবি তুলতে চান না। এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে প্রচারমূলক সভা করে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের পাহাড়ী ও দুর্গম এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, যাতায়াত সহজীকরণ এবং তাদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে। হালনাগাদে দশ আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ নেয়া হবে। বিদেশী নাগরিকরা যাতে ভোটার হতে না পারেন সেজন্যও যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইসি সচিব জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রামের ৩২ উপজেলার বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব উপজেলার মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারের সদর, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙ্গামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, এসব এলাকায় ভোটার হওয়ার উপযুক্ত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সব জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসমূহ অনলাইনে যাচাই করা হবে। যাচাইকালে ভাই, বোনের ডাটাবেইজে পিতা/মাতার নামের সঙ্গে আবেদনকারীর ফরম-১ এ উল্লিখিত পিতামাতার নামের মিল থাকতে হবে। চাচা ও ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সঙ্গে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে। প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চত হতে হবে। উপজেলা বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম যাচাইবাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত দেবেন। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের সপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা মিথ্যা, জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারও গাফিলতি থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে। ইসি সচিব জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচী নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের, মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে, নারী ভোটারদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আলাদা আলাদা প্রচারমূলক কার্যক্রম চালাতে বলা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহকারী যাতে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে সে বিষয়েও তদারকি করা হবে। শুধু একটি জায়গায় বসে যেন তথ্য সংগ্রহ করা না হয়। তথ্য সংগ্রহকারীদেরও নজরদারিতে রাখা হবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এবার হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররা আগামী ৩১ জানুয়ারি তালিকাভুক্ত হবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের সময় তাদের হাতে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে। ইসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ৪২ লাখ। এবারের হালনাগাদে আরও ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য তারা আগামী বছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। বাকিদের বয়স পর্যায়ক্রমে ১৮ বছর পূর্ণ হলেই সরাসরি তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত হবেন।
×