ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জুভেন্টাসের স্বপ্ন বাঁচাতে পারলেন না রোনাল্ডো

প্রকাশিত: ১২:২১, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

জুভেন্টাসের স্বপ্ন বাঁচাতে পারলেন না রোনাল্ডো

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইতালিয়ান সিরি’এ লীগে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জুভেন্টাস। এখানকার ট্রফিটা তারা ডালভাত বানিয়ে ফেলেছে। সর্বশেষ সাত আসরের চ্যাম্পিয়ন তারা। এবারও শিরোপাটা হাতছোঁয়া দূরত্বে। কিন্তু ইউরোপ সেরার মঞ্চ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ট্রফিটা যেন তাদের কাছে সোনার হরিণ হয়ে পড়েছে। সেই ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জুভেন্টাস। এরপর গত ২৩ বছরে পাঁচ পাঁচবার ফাইনালে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতিবারই হেরে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ কারণেই চলতি মৌসুমে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে তুরিনে নিয়ে এসেছে ইতালিয়ান জায়ান্টরা। সিআর সেভেনকে নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ট্রফিটা শোকেসে ভরার স্বপ্ন বুনেছিল তারা। কিন্তু এবারও হলো না। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই তল্পিতল্পা গোছাতে হয়েছে তুরিনের ওল্ড লেডিদের। মঙ্গলবার রাতে শেষ আটের দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠেই অতিথি ডাচ ক্লাব আয়াক্সের কাছে ১-২ গোলে হেরে গেছে জুভেন্টাস। এর আগে আমস্টারডামে প্রথম লেগ ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলে জিতে ১৯৯৭ সালের পর অর্থাৎ ২২ বছর পর সেমিফাইনালের টিকেট পেয়েছে আসরের চারবারের চ্যাম্পিয়ন আয়াক্স। অথচ রোনাল্ডো প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন দলকে টেনে তুলতে। প্রথম লেগে তার গোলেই ড্র নিয়ে ফিরেছিল জুভরা। পরশু রাতেও সিআর সেভেন গোল করে জুভেন্টাসকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় হারের স্বাদ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকাকে। ইনজুরির কারণে অনুপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই জুভেন্টাস কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রি দলকে নতুনভাবে সাজান। চোট পাওয়া মারিও মানজুকিচের স্থানে দলে ফেরেন পাওলো দিবালা। অধিনায়ক জিওর্জিও চিয়েল্লিনিও ছিলেন সাইডলাইনে। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে দলের বাইরে থাকা নিকোলাস টাগলিয়াফিকোর স্থানে খেলতে নামা নোসায়ার মাজরায়িও মাত্র ১১ মিনিটে গোড়ালির ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে চলে গেলে আয়াক্সের রক্ষণভাগ চাপে পড়ে। মাজরায়ির স্থানে মাঠে নামেন ডালে সিঙ্কগ্রাভেন। ম্যাচের ২০ মিনিটে দিবালার হাফ ভলি দারুণ দক্ষতায় রক্ষা করেন আয়াক্স গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা। তবে ২৮ মিনিটে মিরালেম পাজানিজের কর্নার থেকে রোনাল্ডো ওনানাকে কোন সুযোগ দেননি। এটি পর্তুগীজ তারকা ১২৬তম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও এবারের মৌসুমে ষষ্ঠ গোল। আয়াক্সের বিপক্ষে রোনাল্ডো এই নিয়ে গত ছয় ম্যাচেই গোল পেয়েছেন। ডাচ ক্লাবটির বিপক্ষে সর্বমোট নয় গোল করেছেন সিআর সেভেন। কিন্তু ছয় মিনিট পর হাকিম জিয়েচের শট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্বাগতিক দর্শকদের নিশ্চুপ করে দেন ফন ডি বিক। এই গোলের পর আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে আয়াক্স। বিরতির পর জুভেন্টাসের হয়ে দিবালার স্থানে খেলতে নামেন টিনএজ স্ট্রাইকার মোয়েস কিন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ডাচ দলটিই সফলতা পায়। জুভেন্টাসের পোলিশ গোলরক্ষক সিজিচনি জিয়েচের শট খুব কাছে থেকে এক হাতে প্রতিহত করার মিনিট খানেক পর ফন ডি বিকের কার্লিং শট অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। উড়ন্ত গতির ডাচ দলের আক্রমণভাগের কারণে জুভেন্টাসের ব্যাক-লাইন বেশ সমস্যায় পড়ে। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে লাসে শোচেনের কর্নার থেকে গোল করে আয়াক্সকে এগিয়ে দেন ১৯ বছর বয়সী ডি লাইট। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে আয়াক্স চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয় করেছিল। ২২ বছর আগে এই জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল ডাচ ক্লাবটি। ম্যাচ শেষে আয়াক্সের কোচ এরিক টেন হাগ বলেন, আয়াক্সের জন্য এটা একটি স্মরণীয় রাত। শুধু খেলোয়াড় নয় পুরো ডাচ ফুটবলের জন্যই এটা একটি গর্বের বিষয়। আরও একবার আমরা ফেবারিটদের বিদায় করলাম। আগেও আমরা বলেছি এই টুর্নামেন্টে আমরা ফেবারিট নই, যে কারণে আমাদের হারানোর কিছু নেই। কিন্তু আমাদের দর্শন হচ্ছে সামনে এগিয়ে যাওয়া। আবারও আমরা নিজেদের সীমানা অতিক্রম করেছি। গত পাঁচ মৌসুমে তৃতীয়বারের মতো শেষ চারে খেলার স্বপ্ন নিয়েই মাঠে নেমেছিল জুভেন্টাস। কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ শিরোপা জয়ের পথে ফাইনালে এই আয়াক্সকেই পরাজিত করেছিল জুভেন্টাস। ম্যাচ শেষে জুভ কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রি বলেন, শেষ চারে যাওয়াটা আয়াক্সের প্রাপ্য। আমরা আরও ভাল খেলতে পারতাম। কিন্তু আয়াক্স আমাদের সেটা খেলতে দেয়নি। দুই বছর আগে তারা ইউরোপা লীগের ফাইনালে খেলেছিল। রিয়ালের বিপক্ষে এবার পাঁচ গোল করেছে। এটা আমাদের সবচেয়ে বাজেভাবে বিদায় নেয়া।
×