ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সব উপজেলা হাসপাতালে ৮ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১০ এপ্রিল ২০১৯

সব উপজেলা হাসপাতালে ৮ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই

নিখিল মানখিন ॥ জরুরী প্রসূতিসেবা নিশ্চিত করতে দেশের সকল উপজেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় আট ধরনের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগ গত দুবছরেও বাস্তবে রূপ নেয়নি। দেশের সরকারী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জরুরী প্রসূতিসেবা ব্যাহত হচ্ছে। নেই গাইনি ও এ্যানেসথেসিওলজিস্ট। দেশের প্রায় ৫শ’ উপজেলা হাসপাতালের অধিকাংশগুলোতে ভাল যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ অস্ত্রোপচার কক্ষও নেই। কিছুসংখ্যক অত্যাবশ্যক যন্ত্রপাতি থাকলেও গাইনি ও এ্যানেসথেসিওলজিস্টের অভাবে তা ব্যবহৃত হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের ধারা ধরে রাখতে সরকারী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জরুরী প্রসূতিসেবা নিশ্চিত করা দরকার। থানা পর্যায়ে বেসরকারীভাবেও জরুরী প্রসূতিসেবা সুবিধা তেমন নেই। কিছু এলাকায় থাকলেও নির্ধারিত উচ্চ ব্যয় গ্রামাঞ্চলের অনেক দরিদ্র পরিবার বহন করতে পারে না। জরুরী সেবা না পেয়ে অনেক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে গর্ভবতী মহিলার প্রাথমিক জরুরী প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য মফস্বল এলাকার সরকারী হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে সুযোগ-সুবিধা নেই। দেশের অধিকাংশ সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে গর্ভকালীন ও গর্ভোত্তর জরুরী প্রসূতিসেবা এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ খুবই সীমিত। কিন্তু সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ও প্রণোদনা প্রকল্প কর্মসূচীর মাধ্যমে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মায়ের গর্ভবতী মায়ের জরুরী প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও অকাল মাতৃমৃত্যুরোধ করা সম্ভব। আইসিডিডিআর’বির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী পরিচালিত জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি শীর্ষক এক জরিপ ফলাফলে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থায়ন করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনি এ্যান্ড অবস্ট্রেটিকস গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা ফলাফল অনুসারে- দেশের মোট জেলার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ জেলায় প্রসূতিসেবার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তবে বেসরকারী পর্যায়ে সমসংখ্যক জনসংখ্যার জন্য ৬টি হাসপাতালে জরুরীসহ প্রসূতিসেবার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশে এখনও মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা পান না প্রায় ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। দরিদ্র পরিবারের মাত্র ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারী এই সেবা পান। আর ধনী পরিবারের ক্ষেত্রে এ হার ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস)’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ সেবা প্রাপ্তির হার ৫৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩.১ মিলিয়ন (৩১ লাখ) প্রসব সংগঠিত হয়, যার প্রায় ৩৭.৪ শতাংশ (১১ লাখ) প্রসব হয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা (পিএইচসি বিভাগ এক চিঠিতে বিভাগ দেশের সকল উপজেলা হাসপাতালে জরুরী প্রসূতিসেবার যন্ত্রপাতির চাহিদা রয়েছে কি-না তা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাত মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান। বেশিরভাগ সরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক জরুরী প্রসূতিসেবা প্রদানের সুযোগ-সুবিধা নেই। গর্ভকালীন অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। ফলে গর্ভবতী মায়েরা সরকারী হাসপাতালে যেতে আগ্রহী হন না। আর জরুরী সেবা না পেয়ে অনেক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। জানা গেছে, জরুরী প্রসূতি সেবার জন্য ডায়াথারমি মেশিন, ডেলিভার টেবিল, ওটি টেবিল, পোর্টেবল ওটি লাইট উইথ চার্জার/সেন্টার স্পট লাইট, লেরিংগোস্কোপ, অটোক্লেব (ইলেকট্রিক) টেবিল টপ স্টিম স্টেবিলাইজার, প্রেসার স্টিম স্টেরিলাইজার (ইলেকট্রিক) ও স্টেরিলাইজার ফুয়েল হিটেট ২৪ লিটার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জরুরী প্রসূতি সেবায় ব্যবহৃত এসব যন্ত্রপাতি বর্তমানে সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোর ডিপোর্ট (সিএমএসডি)-তে মজুদ রয়েছে। সিএমএসডি থেকে এসব যন্ত্রপাতি দ্রুত সরবরাহ করার তাগিদ দেয়া হলে স্বাস্থ্য অধিদফতর এগুলো উপজেলা হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। অত্যাবশ্যক এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করাই বড় কথা নয়, এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত সম্ভব হলেই কেবল জরুরী প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু গত এক বছরেও ওই সব যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সংশ্লিষ্ট সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছেনি।
×