ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য এলাকায় ভূমি জরিপ ও খতিয়ানের পূর্ণাঙ্গ আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:০৬, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 পার্বত্য এলাকায় ভূমি জরিপ ও খতিয়ানের পূর্ণাঙ্গ আইন হচ্ছে

তপন বিশ্বাস ॥ পার্বত্য জেলাসমূহের ভূমি জরিপ ও খতিয়ান তৈরির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করছে সরকার। যা ভূমি জরিপ ও খতিয়ান (পার্বত্য জেলা) আইন নামে অভিহিত হবে। আইনটি প্রণয়ন করা হলে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালীদের মধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সহজ হবে। ইতোপূর্বে পার্বত্য জেলা সমূহের ভূমি ব্যবস্থাপনায় সরকার ১৯৮৫ সালের অধ্যাদেশ অনুসরণ করত। এছাড়া পার্বত্য জেলা সমূহের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি কমিশন গঠন করেছিল। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙালীদের মধ্যে যুগ যুগ ধরে ভূমি বিরোধ চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯২ সালে পার্বত্য এলাকায় ভূমি জরিপ কাজ শুরু করা হলে একজন কানুনগোসহ ৩ সরকারী কর্মচারীকে অপহরণ করা হয়েছিল। আজ পর্যন্ত তাদের হদিস পাওয়া যায়নি। সরকার ওই সব কর্মকর্তা কর্মচারীর পরিবারকে সান্ত¡না ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। খসড়া নতুন আইনটিতে বলা হয়েছে, পার্বত্য জেলাসমূহের ভূমি খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধনের নির্দেশ সংক্রান্ত কোন আদেশের বা ভূমি খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধন সম্পর্কিত কোন বিষয় সম্পর্কে কোন আদালতে মামলা বা দরখাস্ত পেশ করা যাবে না। খসড়া আইনটিতে প্রাক জরিপ বলতে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর কর্তৃক নক্সা প্রণয়ন ও খতিয়ান চূড়ান্ত করার জন্য জরিপ কার্যক্রম শুরুর আগে সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটি ভূমির দখল ও মালিকানা সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্যাদি সংগ্রহপূর্বক প্রাক জরিপ খতিয়ান প্রস্তুতকে বোঝাবে। রাজস্ব অফিসার প্রতিটি মৌজাকে জরিপের একক ধরে তার অন্তর্গত রাস্তাঘাট, নদী-নালা, ঘর-বাড়ি, মাঠ ও অন্যান্য সকল বিবরণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে বড় আকারে একটি ম্যাপ ১৬ ইঞ্চি সমান এক মাইল স্কেলে প্রস্তুত করবেন। মৌজাভিত্তিক তৈরি খতিয়ানে এই সকল বিবরণের সঠিকতা যাচাই করে সকল বিবরণ রেজিস্ট্রারে লেখে রাখবেন। আইনটি প্রণয়নের বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আইনটি প্রণয়নের কাজ চলছে। আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা মতামত দিচ্ছি। অর্থাৎ বলতে পারেন মতামতের পর্যায়ে রয়েছে। এই বিষয়ে ভূমি সচিব মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, আইনটি প্রণয়নের কাজ চলছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিপূর্ণ মতামত পাওয়া যায়নি এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাব বলে আশা করি। আশা করি আগামী মাসে মিটিং করে আইনটি চূড়ান্ত করতে পারব। খসড়া আইনটিতে ভূমি বলতে চাষযোগ্য অনাবাদী বা বছরের কোন সময় জলমগ্ন থাকে, সে সকল ভূমি তৎসহ এর ওপর উদ্ভূত সুবিধা, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ও মাটিতে সংযুক্ত অপরাপর বস্তুকে বোঝাবে। এই যে সব এলাকার কোন মৌজার পূর্ব নির্ধারিত সীমানাভুক্ত কোন এলাকা জরিপ ও খতিয়ানের একক হিসেবে অনুপযুক্ত হয়ে গেছে ওই এলাকার স্থানীয় জনগণের মতামত এবং জেলা প্রশাসকের মতামত যাচাইয়ের পর জরিপের জন্য সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের (ভূরেজ অধিদফতর) মহাপরিচালকের মাধ্যমে তা সরকারের কাছে পেশ করতে হবে। সরকার প্রস্তাব গ্রহণ এবং অনুমোদন করলে ম্যাপ ও ভূমি খতিয়ান, মৌজাসমূহের ম্যাপ ও খতিয়ান প্রস্তুত এবং সংশোধনের জন্য একটি মৌজা হিসেবে ঘোষণা ও গ্রহণ করা হবে। খতিয়ান তৈরির সময় অপত্তি ও আপীল নিষ্পত্তিপূর্বক প্রাক জরিপে যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হবে তার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তুতের ব্যবস্থা করা হবে। প্রণীত এবং প্রকাশিত খতিয়ানের ভিত্তিতে নির্ধারিত ভূমি মালিকানা ম্যাপ প্রণয়ন করা হবে। এই আইনের অধীনে কোন মৌজার ভূমি খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত বা সংশোধনের পর রাজস্ব অফিসার এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রসহ মুদ্রিত সকল ম্যাপ ও ভূমি খতিয়ান পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা জজ, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন তহশিল অফিস এবং জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করবেন। জেলা প্রশাসক সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করবেন। সেটেলমেন্ট অফিসার রেকর্ডসমূহ পর্যালোচনা, মতামত গ্রহণপূর্বক প্রয়োজনীয় তদন্তের পর সন্তুষ্ট হলে তিনি ভূমি খতিয়ানটি চূড়ান্ত প্রকাশের আগে সংশোধনের জন্য নির্দেশ দিতে পারবেন। পক্ষগণকে প্রাক জরিপ খতিয়ান তৈরি কমিটির উপস্থিতিতে শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোন আদেশ প্রদান করতে পারবে না। সার্বিক কার্যক্রম গ্রহণ শেষে যে আদেশ দেয়া হবে তা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। পার্বত্য জেলাসমূহের চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশের আগে যে কোন সময় ভূরেজ মহাপরিচালকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ওই রাজস্ব অফিসার ওই এলাকার জন্য এই আইনে গৃহীত যে কোন অংশ সংশোধন এবং বাতিল করতে পারবেন। নতুন করে যে পর্যায় থেকে বাতিল করা কাজটি পুনরায় শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। পার্বত্য জেলাসমূহের জন্য এই আইনের অধীনে গৃহীত যাবতীয় কাজ ভূরেজ মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে এবং নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। তিনি এই আইনের অধীনে সেটেলমেন্ট ও রাজস্ব অফিসারের যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন। জরিপের মাধ্যমে নক্সা প্রস্তুত এবং প্রকাশের তথা মুদ্রণের পর তা বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে। ভূমির খতিয়ান মুদ্রণের পর রাজস্ব অফিসার তা কমপক্ষে ৩০ দিনের মধ্যে চূড়ান্তভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। চূড়ান্ত ভূমি খতিয়ান প্রকাশের পর ভূরেজ মহাপরিচালক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজস্ব অফিসার প্রকাশনার তারিখ উল্লেখ করে প্রত্যয়ন করবেন এবং তার নাম ও সরকারী পদবি তারিখ উল্লেখ করে স্বাক্ষর করবেন। এই আইনের অধীনে তৈরি করা সংশোধিত ভূমি খতিয়ানে লেখা প্রত্যেক তথ্য তৎসম্পর্কিত বিষয়ের প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণে অশুদ্ধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তা শুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে। সরকার আইনের উদ্দেশ্য পূরণে গেজেট প্রজ্ঞাপন মূলে বিধিমালা তৈরি করতে পারবে। সমতলের ন্যায় পার্বত্য জেলাসমূহের জন্যও ১৮৭৫ সালের সার্ভে এ্যাক্ট এবং এর অধীনে প্রণীত বিধিসমূহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
×