ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সামরিক সহায়তা বন্ধে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির শঙ্কা, রিপাবলিকানরাও ভোট দিয়েছেন

কংগ্রেসে ইয়েমেন যুদ্ধ বিল পাস

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ৬ এপ্রিল ২০১৯

  কংগ্রেসে ইয়েমেন যুদ্ধ বিল পাস

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান যুদ্ধ অবসানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল পাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার পাস হওয়া ওই বিলে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র আর সহায়তা দেবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলটির পক্ষে ২৪৭ ও বিপক্ষে ১৭৫ ভোট পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা হ্রাসে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের এই উদ্যোগ অভূতপূর্ব হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্য কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি তার পররাষ্ট্রনীতিও সমালোচনার মুখে পড়ল। বিলটি পাসের পর ট্রাম্পের দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে যে বিলটিতে ট্রাম্প ভেটো দিতে পারেন। -খবর গার্ডিয়ান ও আলজাজিরা অনলাইনের। মজার বিষয় হচ্ছে, ডেমোক্র্যাটদের এই উদ্যোগের সঙ্গে ১৬ রিপাবলিকান সিনেটর প্রথা ভেঙ্গে অংশ নেন। শুধু তাই নয়, সাত রিপাবলিকান সিনেটর এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। বিলটি পাসের ফলে মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটল। কারণ ট্রাম্প ইতোমধ্যে এই ধরনের বিলে ভেটো দেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বড় ধরনের সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করতে পারে। মার্কিন কংগ্রেস এই প্রথমবারের মতো ওয়ার পাওয়ার আইন ১৯৭৩ ব্যবহার করল। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আইনটি করা হয়েছিল। এই আইনে, কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতীত সেন্য মোতায়েনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হ্রাসের কথা বলা আছে। ইয়েমেনে চলমান দীর্ঘ দিনের যুদ্ধ অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা বন্ধের জন্য বিলটি পাস করা হল। মার্কিন জনগণ ও কংগ্রেসের প্রবল চাপের মুখে গত বছরের নবেম্বর থেকে পেন্টাগন ইয়েমেনে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত সৌদি যুদ্ধবিমানগুলোর তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বেঞ্জামিন ফ্রায়েডম্যান বলেন, ইয়েমেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান গোয়েন্দা সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, স্যাটেলাইট, বিমান ও ড্রোনের সাহায্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান চলবে। তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি সৌদি আরবের সরকার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর নির্ভর করছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঠিক কি ধরনের সহায়তা চায়। ইয়েমেন যুদ্ধ সম্প্রতি পঞ্চম বছরে পড়েছে। এই যুদ্ধে অনুমানিক ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার আলোচিত বিলটি পাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসম্যান রো খান্না। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, আজ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ অবসানে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিল। পাশাপাশি কংগ্রেসে বিলটি পাস হওয়ায় ইয়েমেন যুদ্ধের মতো একটি অমানবিক কাজে আমাদের সহায়তাও বন্ধ হল। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম ওয়ার পাওয়ার আইন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে পাস হয়ে ইতিহাস তৈরি করল। বিলটিকে এখন প্রেসিডেন্টের ডেস্কে পাঠানো হয়েছে। আর এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন কংগ্রেস যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ে এটির সাংবিধানিক কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করতে পারল। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে বৃহস্পতিবারের এই ঐতিহাসিক ভোটের পর সংবাদ সম্মেলনে রো খান্না বলেন, আমি ভিষণভাবে আশাবাদী যে, ট্রাম্প এই বিলে স্বাক্ষর দেবেন। তিনি বলেন, উভয় দলের আইন প্রণেতারা চিঠি দিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠকের অনুরোধ জানাবেন। তারা ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে বিলটি রাজনৈতিক কারণে নয় ¯্রফে মানবিক কারণে পাস করা হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস এখন পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি। তবে ওই বিলে যুক্তরাষ্ট্র যে রিয়াদের কাছে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে-তা বন্ধে কিছু বলা হয়নি। ইয়েমেনে শিয়া ধর্মাবলম্বী হুতি বিদ্রোহীদের দমনে রিয়াদ এই যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। সৌদি সরকার মনে করে, হুতি বিদ্রোহীদের ইরান সহায়তা করে।
×