ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখীএ মাসে আরও

প্রকাশিত: ১১:০০, ২ এপ্রিল ২০১৯

কালবৈশাখীএ মাসে আরও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃতিতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ মাসেই আরও একাধিক কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এছাড়া তারা জানায়, গত রবিবার দেশের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে গেলেও এখনও বিরূপ আবহাওয়া বিরাজমান। এ কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে। তারা উল্লেখ করেন এই সময় উত্তর-পশ্চিম দিকে ঘন কালো মেঘ ঘনিয়ে এলেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে হবে। কারণ এই মেঘ থেকে বজ্রপাতে আশঙ্কা বেশি থাকে। এদিকে গত রবিবার রাজধানী ঢাকসহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এতে মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি গাছপালা উপড়ে পড়ে, ডাল ভেঙ্গে এবং ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাজধানীর এই প্রথম ৭৪ কিলোমিটার গতিবেগে এই মৌসুমি কালবৈশাখী বয়ে যায়। এতে রাজধানীতে ছয়জনের মৃত্যুর পাশাপাশি রমনা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে। গাছ উপড়ে তারের ওপর পড়ায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সরেজমিনে রমনা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যোগে গিয়ে দেখা গেছে গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উদ্যানের বড় বড় গাছ ও ডালপালা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে পার্কের অনেক স্থানে হাঁটার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভ্রমণ করতে আসা লোকজন জানান, ঝড়ের পরে পার্কে ভেতরের প্রবেশের পর তারা অনেকটাই অবাক হয়েছেন ঝড়ে এমন তা-বলীলা দেখে। আগের দিন যেখানে নির্বিঘেœ চলাচল করা সম্ভব হয়েছে ঝড়ের কারণে পরের দিন সেখানে যাতায়াতের পথই বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া মানিকমিয়া এভিনিউসহ আরও অনেক স্থানে ঝড়ের কারণে গাছ উপড়ে এবং ডাল ভেঙ্গে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। অনেক প্রাইভেট কার, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনের ক্ষতি হয়। ধানম-ি তিন নম্বর সড়কেও গাছের ডাল ভেঙ্গে সড়কে পড়ে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। ঝড়ে শাহবাগ থানার সাইনবোর্ড উড়ে য়ায়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ে রাজধানীর অন্তত ২৫ স্থানে গাছ পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, রাজধানীর হেয়াররোড এলাকায় গাছ পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও মহানগরীর মিরপুর রোড, সাইন্সল্যাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধানম-ি এলাকায় গাছ উপড়ে এবং ডাল ভেঙ্গে রাস্তার ওপরে পড়ে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, চলতি মাসে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের আরও তিনটি কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া আগামী ৭২ ঘণ্টায় কালবৈশাখীর আঘাত হানার আশঙ্কা আছে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত এবং শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়াবিদ মোঃ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এপ্রিল মাসে আবহাওয়া বিরূপ থাকে এবং তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত ছাড়াও এ সময় সমুদ্রে দু’একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এই মাসে দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে দাবদাহ বয়ে যেতে পারে। কোথাও কোথাও এ দাবদাহের কারণে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যেতে পারে। তিনি বলেন, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কুমিল্লা জেলায় ৪৩ মিলিমিটার। রাজধানী ঢাকাতে এর মাত্রা ছিল ৩৮ মিলিমিটার। ঢাকা ছাড়াও তাড়াশে এ সময় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ মিলিমিটার। এদিকে সোমবার আবহাওয়া পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড় হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
×