ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিল থেকে বিজিএমইএ ভবন যাচ্ছে উত্তরায়

প্রকাশিত: ১০:০৩, ৩০ মার্চ ২০১৯

 হাতিরঝিল থেকে বিজিএমইএ ভবন যাচ্ছে উত্তরায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বিদায় নিচ্ছে বহুল আলোচিত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩ এপ্রিল বুধবার রাজধানীর উত্তরায় নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হচ্ছে বিজিএমইএয়ের সদর দফতর। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বিজিএমইএয়ের উত্তরার নতুন ভবন আগামী ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সম্মতি দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বিদায় নিচ্ছে বহুল আলোচিত বিজিএমইএ ভবন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় এই ভবনের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছি।’ তিনি জানান, উত্তরার নতুন ভবনের চারতলার কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আমাদের কাজ সেখানে চালিয়ে নিতে পারব। তবে ভবনে চলাচল উপযোগী সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই টাওয়ারসমৃদ্ধ বিজিএমইএ নতুন বহুতল ভবনটি উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। নতুন ভবনটি হবে ১৩ তলা বিশিষ্ট। এরই মধ্যে ভবনের বেইসমেন্টসহ ভবনের চারতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। জানা গেছে, ভবনের প্রতি তলার আয়তন হবে ৪০ হাজার বর্গফুট। ৪০ হাজার বর্গফুটের একটি প্রদর্শনী হলও রয়েছে নতুন এই বিজিএমইএ ভবনে। লেকসাইট ভিউয়ের সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে নতুন এই ভবন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে বর্তমান ভবন খালি করে দেয়া হবে এই মর্মে বিজিএমইএয়ের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে মুচলেকা দেয়া আছে। রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবনটি ভেঙে ফেলার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য বিজিএমইএ যে আবেদন করেছিল সেই আবেদন ২০১৭ সালের ৫ মার্চ খারিজ করে দেন আপীল বিভাগ। আদালতে বিজিএমইএয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর এমিকাস কিউরি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রিভিউ খারিজের এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারের সব ধাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিজিএমইএ এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করেছিল। সেই সময় শেষ হচ্ছে এ বছরের ২ এপ্রিল। এর আগে ২০১৬ সালের ২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি মুলতবি করে আদালত ‘নট টুডে’ আদেশ দেন। ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আপীল বিভাগের রায় স্থগিত চেয়ে রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ। সেই সঙ্গে বহুতলভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য তিন বছরের সময় চাওয়া হয়। এর আগে দেয়া আপীলের রায়ে বলা হয়, অবিলম্বে এই অবৈধ বহুতল ভবন ভাঙ্গতে হবে। ভবন ভাঙ্গার যাবতীয় খরচ বিজিএমইএকেই বহন করতে হবে। বিজিএমইএ না ভাঙ্গলে রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ। এজন্য যে অর্থ প্রয়োজন তা বিজিএমইএর কাছ থেকে নিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কাওরানবাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর দেশের একটি ইংরেজী দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই প্রতিবেদনটি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ডিএইচএম মনিরউদ্দিন আদালতে উপস্থাপন করেন। এর পরদিন বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙ্গার নির্দেশ দেয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএয়ের ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন। রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএয়ের আবেদনে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে আপীল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির পর লিভ টু আপীল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। যেটা ২০১৬ সালের ২ জুন খারিজ হয়ে যায়। এরপর বিজিএমইএ আবার রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) আবেদন করেন। তাও শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২ জুন সেই সময়কার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বিভাগ খারিজ করে দেন। ১৯৯৮ সালের ২৮ নবেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
×