ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

অসহায় শিশুদের সহায় আব্বাস আলী

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১৬ মার্চ ২০১৯

 অসহায় শিশুদের সহায় আব্বাস আলী

নীরবে মানুষের সঙ্গে থেকে সেবার মানসিকতা নিয়ে বিশেষ করে শিশুদের কল্যাণে এগিয়ে আসেন তিনি। বিশেষ করে যাদের বাবা নেই, মা নেই। যাদের বাবা-মায়ের সংসার টিকেনি, তাই আলাদা থাকেন। প্রিয় সন্তানের দায়িত্ব নেয়নি দু’জনের কেউ-ই। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এমন শত শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন তিনি। অসহায়দের সহায় হিসেবে তাদের প্রতি নীরবে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। এ মানুষটির নাম আব্বাস আলী। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র। প্রচারবিমুখ এ মানুষটি মেয়রের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনসেবা ও এতিম শিশুদের যত্ন-আত্তি নিয়েই থাকেন। রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে কাটাখালিতেই তার বাড়ি। সেখানে মাসকাটাদীঘি স্কুল এ্যান্ড কলেজের পাশেই থাকেন সময় পেলেই। স্কুলে গিয়ে শিশুদের খোঁজ খবর রাখেন নিয়মিত। ওই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, পৌর মেয়র আব্বাস আলী এই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। প্রায় ১০ বছর ধরে স্কুলের উন্নয়নে কাজ করছেন। তবে এজন্য অন্যের ওপর ভরসা করেন না তিনি। দিনের মধ্যে যখনই সময় পান ছুটে আসেন স্কুল আঙিনায়। নিজেই ক্লাসরুমে গিয়ে গিয়ে খোঁজ নেন। জানতে চান কার কী সমস্যা। বিশেষ করে বাবা-মা হারা এতিম শিক্ষার্থীদের অভিভাবক তিনি। কারও বাবা নেই। কারও আবার মা নেই। কারও বাবা-মার হয়তো সংসার টিকেনি, তাই আলাদা থাকেন। কিন্তু প্রিয় সন্তানের দায়িত্ব নেয়নি দু’জনের কেউই। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এমন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন আব্বাস আলী। নগরের অদুরে কাটাখালির মাসকাটাদীঘি স্কুলে গিয়ে এর প্রমাণ মিলেছে। ওই স্কুলের এতিম শিশুদের একজন জান্নাতুল মীম। পড়ছে ক্লাস সিক্সে। বাড়ি মাসকাটাদীঘি। অসুস্থ হয়ে দেড় বছর আগে মারা গেছেন বাবা। পরিবারে আয় উপার্জনের মতো আর কেউ নেই। মা গৃহিণী। ফলে স্কুলের বিভিন্ন ফি দেয়া ও ইউনিফর্ম কেনার কথা সে ভাবতেই পারে না! সহপাঠীদের বেশিরভাগই স্কুলড্রেস পরে আসে। কিন্তু মীম আসে বাড়ির পোশাকেই। নেই প্রাইভেট পড়ার সুযোগও। আর দুপুরে টিফিনের সময় অন্যরা যখন দোকানের দিকে ছোটে, মীমের পা তখন থমকে যায় স্কুলের বারান্দায়। কারণ টাকার যোগান দেবে কে! একই ক্লাসে পড়ে শ্যামপুর মধ্যপাড়ার নাবিলা ইয়াসমিন। তারও বাবা বেঁচে নেই। মরে যাওয়ায় বাবার জীবন হয়তো থেমে গেছে, কিন্তু ছোট্ট নাবিলার জীবনের পথ কেবল শুরু। একমাত্র মা-ই নাবিলার ভরসা। কিন্তু আয় নেই মায়ের। তাই মীমের মতই অবস্থা তারও। কেবল মীম কিংবা নাবিলাই নয়, একই ক্লাসের এতিম শিশু সৈয়দ খালিদ বিন রাজ্জাক ও শাহরিয়ার ইসলাম তপুদের অবস্থাও এমনই। তবে তাদের পাশে অভিভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছেন কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। তিনি নিজেই ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে উপবৃত্তির জন্য নামে তালিকা তৈরি করেন। যাদের বাবা-মা নেই তাদের স্কুলড্রেস (ইউনিফর্ম) বানিয়ে দিয়েছেন। অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিনে দিয়েছেন খাতা কলমও। মীম, নাবিলা, তপু ও রাজ্জাক জানায়, স্কুলের খরচ আর লেখাপড়া টাকা নিয়ে তার তাদের চিন্তা করতে হয় না। মেয়র সাহেবই তাদের সব দেন। ফলে ঠিকঠাক মতোই তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেন। পরে স্কুলের অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে দেখা গেল, ষষ্ঠ ১৬ জন এতিম শিশুকে সঙ্গে নিয়ে নাস্তা করছেন মেয়র। নিজহাতে তুলে খাওয়াচ্ছেন পেয়ারা, কলা, আঙুর, বিস্কিট আর কমলার কোয়া। প্রত্যেকের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন আর জানতে চাইছেন, কার কী লাগবে? কার কার স্কুলড্রেস এখনো বাকি আছে? কার প্রাইভেট শুরু হয়নি। এমন পরম মমতায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে শিশুরাও। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন মেয়র। এরই মধ্যে কান্নায় চোখ বেয়ে পানি ঝরে পড়ল বাবা হারা এক শিক্ষার্থীর। মাসকাটাদীঘি স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আখতার হাসান জানান, এখানে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এরই মধ্যে কেবল ষষ্ঠ শ্রেণীতেই ১৬ এতিম শিশু রয়েছে। -মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×