ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের

সব দূতাবাস কর্মী প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৩ মার্চ ২০১৯

সব দূতাবাস কর্মী প্রত্যাহার

ভেনিজুয়েলা থেকে মার্কিন দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো টেলিভিশনে দেয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর অভিযোগ আনেন এবং বিদ্যুত বিভ্রাটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক হামলা’কে দায়ী করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস খালি করার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে ভেনিজুয়েলার কংগ্রেস ‘বিদ্যুত বিভ্রাট’ কেন্দ্র করে দেশে সতর্কতা জারি করেছে। পাঁচ দিন বিদ্যুতবিহীন অবস্থার পর সোমবার বিরোধীদলের নিয়ন্ত্রণে থাকা কংগ্রেস এ সতর্কতা জারি করে। বিদ্যুত বিভ্রাটের ফলে দেশটিতে তেল রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষ পানি ও খাবার সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সোমবারও অনেক এলাকা বিদ্যুতবিহীন ছিল। তবে রাজধানী কারাকাসের বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুত এসেছে। অন্যদিকে মাদুরোকে সমর্থন করায় কিউবা ও রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর গার্ডিয়ান ও ইয়াহু নিউজের। ভেনিজুয়েলা থেকে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রত্যাহারের বিষয়টি টুইটারের মাধ্যমে ঘোষণা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ভেনিজুয়েলায় পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর উপসংহার হচ্ছে- বর্তমানে ভেনিজুয়েলায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান মার্কিন নীতির পরিপন্থী। মাদুরোর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অনেক বিশ্লেষকের মতে, দেশব্যাপী গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বিদ্যুত বিভ্রাট কয়েক বছরের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অদক্ষতার ফল। স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়েইদো রবিবার সিএনএনকে বলেন, আমরা এমন একটি দুর্যোগের মধ্যে পড়েছি যেটা কোন হারিকেন বা সুনামির কারণে নয়। এই দুর্যোগ অদক্ষতা, অক্ষমতা এবং প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে। এই প্রশাসন ভেনিজুয়েলার জনগণের জীবনের কোন তোয়াক্কা করে না। এদিকে সোমবার রাতে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট মাদুরো দেশের চলমান অস্থিরতার জন্য হোয়াইট হাউসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। সমালোচকরা এটাকে তার সরকারের দায়িত্ব এড়ানোর সমালোচনা থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত ৩৫ মিনিটের ওই ভাষণে মাদুরো বলেন, ‘এই হামলার নির্দেশ দিয়েছিল মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদী সরকার।’ তিনি বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যুদ্ধের কৌশল নিয়ে এগিয়েছে। তারা ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ লিপ্ত আছে এবং সেসব দেশ ও দেশের জনগণকে ধ্বংস করেছে। মাদুরো অভিযোগ করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার বিরোধী ‘ভাঁড় ও পুতুল’দের যোগসাজশে এই হামলা চালিয়েছে। কারণ তারা ভেনিজুয়েলায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে ব্যাপক অভাব ও সংঘর্ষ বাধাতে চায়, যাতে বিদেশী হস্তক্ষেপের পথ সুগম হয়। তারা ভেনিজুয়েলার সামরিক বাহিনীকেও বিতর্কিত করতে চায়। তবে হুগো শ্যাভেজের উত্তরাধিকারী মাদুরো প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ভেনিজুয়েলার বিদ্যুত গ্রিডের ওপর এ ধরনের পরিকল্পিত হামলা দুঃখজনক। মাদুরো বলেন, ‘বিজয় আমাদেরই’। তিনি ঘোষণা করেন, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগামী দিনগুলোতে আমরাই নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হব। যেটা একটু হতে পারত, তোমাদের কারণে সেটা একটু বিলম্বে হবে।... আমরা বিজয়ী হব এবং এই বিজয় হবে ভেনিজুয়েলার জনগণের। আমরা এটা করব আমাদের দেশের জন্য। আমরা এটা করব তোমাদের জন্য...আমরা এটা করব, আমাদের জনগণের সুখে থাকার অধিকারের কারণে। এদিকে স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের স্পীকার হুয়ান গুয়েইদো সোমবার অধিবেশন চলাকালে বলেন, ভেনিজুয়েলায় কোন কিছুই স্বাভাবিক নয়। আমরা এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বিবেচনা করার সুযোগ দেব না। আর এ কারণেই দেশব্যাপী সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন। সংবিধানে জাতীয় সতর্কতা জারির ক্ষমতা দেয়া আছে প্রেসিডেন্টকে। হুয়ান গুয়েইদোকে ভেনিজুয়েলার নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাদুরোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মাদুরোকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া ও চীনসহ মিত্র দেশগুলো। অধিবেশন চলাকালে গুয়েইদো মাদুরোর রাজনৈতিক মিত্র দেশ কিউবায় তেল রফতানি স্থগিত রাখার আহ্বান জানান। কিউবা প্রায় দুই দশক ধরে ভেনিজুয়েলা থেকে কমমূল্যে ক্রুড কিনছে। গুয়েইদো বলেন, এই মুহূর্তে জাতীয় জরুরী পরিস্থিতিতে ভেনিজুয়েলাবাসীর তেল খুবই প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
×