ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে তামিমের তান্ডব

প্রকাশিত: ১০:১১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  ফাইনালে তামিমের তান্ডব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আক্ষেপটা বাড়ছিল দিনকে দিন। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে ৫টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বিদেশী ক্রিকেটাররা। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বড় কোন ইনিংস না পাওয়ার কারণে সবার মধ্যেই ছিল আফসোস। অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন দেশসেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। শুক্রবার বিপিএলের ফাইনালে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফুঁসে উঠলেন তিনি। ব্যাটে আগুনের ফুলকি ছুটিয়ে রীতিমতো তান্ডব চালিয়েছেন। যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেছেন এ বাঁহাতি ওপেনার। ৫০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর শেষ পর্যন্ত ৬১ বলে ১০ চার, ১১ ছক্কায় ১৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এটি তামিমের টি২০তে দ্বিতীয় শতক। চলতি আসরে এটি ষষ্ঠ শতক হলেও বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের প্রথম। শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল ও সাব্বির রহমানের পর চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে বিপিএলে শতক পেলেন তামিম। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের পক্ষে যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত এবং দ্রুততম শতকের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। আর বিপিএলের ইতিহাসে ক্রিস গেইলের অপরাজিত ১৪৬ রানের পরই দ্বিতীয় অবস্থানে তামিমের ইনিংসটি। একইদিনে ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান একটি উইকেট নিয়ে আসরে ২৩ উইকেটের মালিক হয়েছেন। ফলে এক আসরে সর্বাধিক উইকেট দখলের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। বিপিএলের এক আসরে সর্বাধিক ৪ সেঞ্চুরি হয়েছিল প্রথম আসরে। এবার সেই রেকর্ডটি ভেঙ্গে যায়। লরি ইভান্সের পর এ্যালেক্স হেলস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, রাইলি রুশো ও এভিন লুইস সেঞ্চুরি হাঁকান। কিন্তু বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান কোনভাবেই পারছিলেন না তাদের ইনিংসটাকে বড় করতে। একমাত্র সাব্বির রহমানই ৫১ বলে ৮৫ রানের যে ইনিংস খেলেছিলেন সেটিই চলতি বিপিএলে বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস ছিল। সর্বশেষ বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০১৬ সালে শতক পেয়েছিলেন সাব্বির রহমান, করেছিলেন ৬১ বলে ৯ চার, ৯ ছক্কায় ১২২ রান। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের উইলো থেকে সেঞ্চুরির অপেক্ষাটা তাই যেন দীর্ঘতর হচ্ছিল। কিন্তু বিপিএলের শুরুর দিকে তামিম অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিলেন। তবু ফাইনালের আগে ২ ফিফটিতে ১৩ ম্যাচে ২৭.১৬ গড়ে ৩২৬ রান করে এখন ব্যাটিং পারফর্মেন্সে চলতি আসরে ৫ নম্বরে ছিলেন তিনি। শুরুর কয়েকটি ম্যাচে ব্যর্থতা দেখানোর পর নিজের চতুর্থ ম্যাচে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ৪২ বলে ১২ চার, ১ ছক্কায় ৭৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে দলকে জয়ী করেন। এরপর থেকেই বেশ রানের মধ্যেই আছেন তামিম। পরের ৩ ম্যাচে ২৫, ৩৪, ২৫ রান করেন। এরপর চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে মাত্র ৫১ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৫৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলকে বিজয়ী করেন তামিম। সর্বশেষ ৩ ম্যাচে অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারেননি- ৩৮, ০ ও ১৭ রান করেন। এরপরও ফাইনালে তামিমের দিকেই চোখ ছিল সবার। কারণ আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তামিমই শতক হাঁকিয়েছিলেন ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে। সেদিন ধর্মশালায় ৬৩ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। তবে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন শাহরিয়ার নাফীস। তিনি ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে খেলেছিলেন ৬৯ বলে ১০২ রানের হার না মানা ইনিংস। ওই আসরেই মোহাম্মদ আশরাফুল দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ৫৮ বলে অপরাজিত ১০৩ করেছিলেন তিনি খুলনার বিপক্ষে। অবশ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে (আইসিএল) টি২০ ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতক হাঁকিয়েছিলেন অলক কাপালী। কিন্তু আইসিএল নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে সেটি এখন বিবেচনায় আনা হয় না। গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের টি২০ সেঞ্চুরির অপেক্ষা ঘোচালেন তামিম। শুক্রবার তিনি মাত্র ৫০ বলে শতক ছুঁয়ে ফেলেন আন্দ্রে রাসেলকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের পক্ষে চতুর্থ, বিপিএলে ১৩তম হিসেবে ১৮তম বিপিএল শতকের মালিক হয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম শতক ছিল সাব্বিরের। তিনি ২০১৬ বিপিএলে ৫৩ বলেই শতক ছুঁয়েছিলেন। এবার সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দেন তামিম। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬১ বলে ১০ চার, ১১ ছক্কায় ১৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। এর আগে সাব্বিরের ১২২ রানই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে সেরা। সেটিকে পেরিয়ে গেইলের করা ৬৯ বলে অপরাজিত ১৪৬ রানের ব্যক্তিগত সেরাকে অল্পের জন্য ছুঁতে পারেননি। তবে বাকি সব সেঞ্চুরিয়ানকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন তামিম। গেইল ১৪৬ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন গত আসরে রংপুরের হয়ে ঢাকার বিপক্ষে মিরপুরেই ১২ ডিসেম্বর। শাহরিয়ার, আশরাফুল, সাব্বির শতক হাঁকালেও বাংলাদেশের পক্ষে টি২০ ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কার রেকর্ডটাও তামিম নিজের দখলে নিয়েছেন। সাব্বির ৯ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশী যে কোন ব্যাটসম্যানের জন্য রেকর্ডময় একটি ইনিংসই এদিন খেলেছেন তামিম। সবদিক থেকেই যা বাংলাদেশের পক্ষে সেরা। তার এমন ইনিংসের জন্য সাকিবের রেকর্ড ম্লান হয়ে গেছে। তিনি এনামুল হক বিজয়ের উইকেট তুলে নিয়ে চলতি আসরে ২৩তম শিকারের মালিক হয়ে যান। বিপিএলের এক আসরে কোন বোলারের এটাই সর্বাধিক উইকেট শিকারের রেকর্ড। সাকিব থেমেছেন ১৫ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়ে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার আলফোনসো থমাস ২০১৫ সালে ৯ ম্যাচে ২২টি এবং গত আসরে সাকিব ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে ছিলেন। এখন অনন্য রেকর্ডের মালিক হয়ে গেলেন সাকিব।
×