ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সানডের জোড়া গোল, ঢাকা আবাহনী ৫-১ রহমতগঞ্জ, নোয়াখালীতে বিজেএমসিকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডির প্রথম জয়

জীবনের হ্যাটট্রিকে আবহনীর আয়েশি জয়

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জীবনের হ্যাটট্রিকে আবহনীর আয়েশি জয়

রুমেল খান ॥ ‘জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প’ ... বাংলা সিনেমা ‘ভেজাচোখ’-এর অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গানের কলি এটি। এই গানের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায় ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবনের ফুটবল ক্যারিয়ার। কেননা গত দুই বছর ধরে কি জাতীয় দল, কি ক্লাব দল ... দুই জায়গাতেই গোল পাচ্ছিলেন না তিনি। সর্বশেষ কবে গোল করেছিলেন, বোধকরি সেটা তার নিজেরও মনে নেই! ফলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প ...! কিন্তু না, শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনবদ্য এক হ্যাটট্রিক করে জীবন বুঝিয়ে দিলেন- তার গল্প আর অল্প বাকি নয়, বরং আরও অনেক বাকি আছে। এক দর্শক তো মজা করেই বললেন, ‘জীবনের হ্যাটট্রিকে রহমতগঞ্জের মরণ।’ ২৯ বছর বয়সী বগুড়ার এই ফুটবলারের হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে ঢাকা আবাহনী ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটিকে। খেলার প্রথমার্ধে বিজয়ী দল ২-১ গোলে এগিয়েছিল। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলে এক লাফে তিন ধাপ ওপরে উঠে এল দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেডরা। নিজেদের চতুর্থ খেলায় এটা তাদের তৃতীয় জয়। পয়েন্ট নয়। পঞ্চম অবস্থান থেকে বর্তমান লীগ শিরোপাধারীরা এখন আছে দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে আছে নবাগত বসুন্ধরা কিংস। তাদের পয়েন্টও ৯। তবে তারা খেলেছে এক ম্যাচ কম। তাছাড়া গোল গড়েও এগিয়ে আছে (+৬) তারা। আবাহনীর গোলগড় (+৪)। এদিকে একইদিনে নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে টিম বিজেএমসিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। জয়ী দলের লুসিয়ানা পেরেজ এবং ডেভিড ব্রুস একটি করে গোল করেন। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এটা জামালের প্রথম জয়। পয়েন্ট ৪। এই জয়ে দ্বাদশ থেকে এক ধাক্কায় পাঁচ ধাপ উন্নতি হলো তাদের (সপ্তম)। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা বিজেএমসির তৃতীয় হার। এখনও জয়বঞ্চিত আছে তারা। ১ পয়েন্ট নিয়ে আছে ১৩ দলের মধ্যে ১২ নম্বরে। ২০০৬ সাল থেকে সিরিয়াসলি ফুটবল খেলতে শুরু করেন জীবন। ২০০৬ সালে মহাখালী ফুটবল একাডেমির হয়ে পাইওনিয়ার ফুটবলে অভিষেক ঘটে তার। এরপর ২০১০ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে নাম লেখান উত্তর বারিধারায়। চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে খেলেন একই দলের হয়ে। এরপর আরেক ধাপ উন্নতি, মানে প্রিমিয়ার লীগে নাম লেখান টিম বিজেএমসির হয়ে। এরপর ২০১৫ সালে যোগ দেন ঢাকা আবাহনীতে। ২০১৭ সালের ৭ জুলাই জনকণ্ঠে জীবনের একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের লীগে কমপক্ষে ১৫ গোল করতে চাই।’ কিন্তু সেবার কথার সঙ্গে কাজের কোন মিল ছিল না। করেছিলেন টেনে-টুনে মাত্র ৩ গোল। তখন থেকেই মূলত ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। ভুগতে থাকেন গোলখরায়। পড়েন ইনজুরিতেও। তবে শনিবার তার খেলা দেখে দর্শকরা মন্তব্য করেছেন, ‘জীবনের যেন পুনর্জীবন হলো।’ খেলার ১৮ মিনিটে ডিফেন্ডার রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো ব্যাকহ্যাডে বিপদমুক্ত করতে যান রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার মানডে ওসাজাই। কিন্তু বল পেয়ে যান আবাহনীর ফরোয়ার্ড জীবন। লাফানো হেডে বল জালে পাঠিয়ে আবাহনীকে এগিয়ে দেন টানা পাঁচ মৌসুম ধরে এই দলে খেলা জীবন (১-০)। এর মাত্র একমিনিট পরই আবারও জীবনের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আবাহনী। গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলের লম্বা গোল কিক ডি বক্সের বাইরে পেয়ে বাঁপ্রান্ত থেকে নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা প্রতিপক্ষের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো যে শটটি নেন তা ঝাঁপিয়ে পড়ে রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক আরিফুল ইসলাম ফিরিয়ে দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ফিরতি বলে ডান পায়ের শটে রহমতগঞ্জের জালে বল পাঠান জীবন (২-০)। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমের একেবারে শেষ মুহূর্তে (৪৫+৪ মিনিটে) গোল করে রহমতগঞ্জ। বাঁপ্রান্ত থেকে ফরোয়ার্ড সোহেল রানার ক্রসে দারুণ হেডে বল জালে পাঠান কঙ্গোর ফরোয়ার্ড সিও জুনাপিও (১-২)। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই সহজ গোল আদায় করে নেয় আবাহনী। ৫০ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড কারভেন্স ফিলস্ বেলফোর্টের থ্রু পাস বুঝে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন সানডে। গোলরক্ষক এগিয়ে আসেন বিপদ আঁচ করে। কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে তাকে পেছনে ফেলে ফাঁকা পোস্টে আয়েশ করেই বল পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন স্যাটারডেতে গোল করা সানডে (৩-১)। ৬৮ মিনিটে সোহেলের গোল কিক হেড করে বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন রহমতগঞ্জের এক ডিফেন্ডার। বাঁপ্রান্ত থেকে লম্বা থ্রু পাস দেন বেলফোর্ট। সানডে বাঁ পায়ের চিপ শটে ব্যবধান আরও বাড়ান (৪-১)। ইনজুরি টাইমে (৯০+৩ মিনিটে) সানডের জোগান দেয়া বল আলতো শটে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন জীবন (৫-১)।
×