ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ জামাল ২-২ রহমতগঞ্জ

শেখ জামালকে রুখে রহমতগঞ্জের চমক

প্রকাশিত: ১২:০২, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

শেখ জামালকে রুখে রহমতগঞ্জের চমক

রুমেল খান ॥ শক্তির বিচারে শেখ জামাল ধানম-ির চেয়ে অনেক পিছিয়ে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। কাজেই মাঠের খেলায় কি ফল হবে সেটা মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। কিন্তু সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবলপ্রেমীদের সেই অনুমান আরেকটু হলেই পাল্টে দিতে যাচ্ছিল জায়ান্ট কিলার রহমতগঞ্জ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে এদিন তারা আগে গোল করে এগিয়ে যায়, পরে আবার পিছিয়েও পড়ে। কিন্তু খেলা শেষ হবার ঠিক আগে গোল করে রুখে দেয় প্রতিপক্ষ, কেড়ে নেয় মূল্যবান পয়েন্ট। ম্যাচটি ড্র করে ২-২ গোলে। এই ড্রয়ে টানা তিন ম্যাচ ধরে জয়বঞ্চিত আছে তিনবারের লীগ শিরোপাধারী এবং বেঙ্গল ইয়োলোস খ্যাত জামাল। দুটিতেই হেরেছে তারা। পয়েন্ট মাত্র ১। পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান ১৩ দলের মধ্যে দশম। পক্ষান্তরের ১৯৭৭ সালের লীগ রানার্সআপ এবং ডাইলপট্টি খ্যাত রহমতগঞ্জ ৩ খেলায় ২ ড্র ও ১ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে অবস্থান করছে শেখ জামালের ঠিক ওপরেই। ‘আজ বোধহয় রহমতগঞ্জের ওপর সৃষ্টিকর্তার রহমত বর্ষিত হয়েছিল।’ গ্যালারিতে খেলা দেখতে আসা এক রসিক ফুটবলপ্রেমীর মন্তব্য এটি। তার কথায় যুক্তি আছে। কেননা ম্যাচে জামালের ১টি গোল বাতিল হয়েছে এবং ১টি পেনাল্টি মিস হয়েছে। সবশেষে অন্তিম মুহূর্তে গোল করে জামালকে রুখেও দিয়েছে। খেলা শুরুর ২ মিনিটের মধ্যে ম্যাচের প্রথম গোলটি হয়। তবে সেটা ‘বৈধ’ গোল নয়। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের বাইরে বাঁপ্রান্ত থেকে শেখ জামালের অধিনায়ক ও গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড সলোমন কিং কানফর্ম ডান পায়ের মাঝারি উচ্চতার যে ক্রসটি করেন তা ধরার চেষ্টা করেন রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক আরিফুল ইসলাম। কিন্তু তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে বল জালে পাঠান জামালের ফরোয়ার্ড সাখাওয়াত হোসেন রনি। কিন্তু রেফারি ফাউলের কারণে গোলটি বাতিল করে দেন। ৮ মিনিটে ‘বৈধ’ গোল করে এবার এগিয়ে যায় রহমতগঞ্জ। মাঝমাঠ থেকে রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডার রকিবুল ইসলাম উঁচু সেন্টার করেন প্রতিপক্ষের বক্সে। সেখানে আগেই পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কঙ্গোলিজ ফরোয়ার্ড সিও জুনাপিওকে বল রিসিভ করতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন জামালের ডিফেন্ডার আরিফুল ইসলাম। তাকে ছিটকে ফেলেন জুনাপিও। বিপদ দেখে সামনে এগিয়ে আসেন গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম। তাকেও ডজ দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন জুনাপিও। ততক্ষণে উন্মুক্ত হয়ে গেছে গোলপোস্ট। শরীরটা একটু বাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বাঁ পায়ের উঁচু জোরালো শটে বল জালে পাঠান জুনাপিও (১-০)। অবশ্য এই সময়ে জামালের এক ফুটবলার গোলপোস্টে এসে দাঁড়িয়ে জুনাপিওর শট ঠেকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক। ২১ মিনিটে গোল পরিশোধের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে জামাল। জামালের সলোমন ডি-বক্সে ঢুকে উড়ন্ত ক্রস করেন সতীর্থ আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লুসিয়ানো পেরেজকে। পেরেজ সেই বল হেড করতে গেলে তাকে ফাউল করে ফেলে দেন রহমতগঞ্জের অধিনায়ক নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার মানডে ওসাইজাই। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি আনিসুর রহমান সাগর। জামালের সলোমন কিং পেনাল্টি শট নেন। কিন্তু তার নেয়া শটটি রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক আরিফুল অসাধারণভাবে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁ হাতে ঠেকিয়ে দেন। আবারও গোলবঞ্চিত হয় জামাল। অবশেষে ৪০ মিনিটে গোলের দেখা পায় জামাল। তাদের ডিফেন্ডার মঞ্জুরুর রহমান মানিকের সেন্টার হেড কিরগিজ ফরোয়ার্ড ডেভিড ব্রুস টেথ হেড করে পাস দেন সতীর্থ সলোমন কিংকে। সলোমন সেই উড়ন্ত বল চমৎকারভাবে বাইসাইকেল কিক করে জালে পাঠান (১-১)। ৮৩ মিনিটে আবারও গোল করে লিড নেয় জামাল। লুসিয়ানা পেরেজ ডি-বক্সের ভেতরে বল পেয়ে প্রতিপক্ষের তিন ডিফেন্ডারকে চমৎকারভাবে কাটিয়ে ডান পায়ের গড়ানো ও কৌণিক শটে ফিনিশ করেন (২-১)। যখনই মনে হচ্ছিল পূর্ণ তিন পয়েন্ট পেতে যাচ্ছে জামাল, তখনই তাদের সেই স্বপ্ন চুরমার করে দেয় পুরনো ঢাকার দল রহমতগঞ্জ। ম্যাচ শেষ হতে তখন আর মিনিটখানেক বাকি (৯০+৩ মিনিট)। রহমতগঞ্জের জুনাপিও উড়ন্ত ক্রস করেন জামালের বক্সে। মানডে ওসাজাই লাফিয়ে উঠে হেড করে জামালকে ডোবান একরাশ হতাশায় (২-২)।
×