ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাসের পাতায় নাওমি ওসাকা

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

ইতিহাসের পাতায় নাওমি ওসাকা

জিএম মোস্তফা ॥ এবারও কাঁদলেন নাওমি ওসাকা। তবে আনন্দে। শনিবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের রোমাঞ্চকর ফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভাকে হারানোর পর ওসাকার চোখে দেখা গেল আনন্দ-অশ্রু! এই আনন্দ ক্যারিয়ারের প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের। এই আনন্দ ব্যাক টু ব্যাক গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জয়ের। শুধু কী তাই? বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থানটাও যে দখল করলেন জাপানের তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। শুধু জাপান নয়, গোটা এশিয়ার প্রথম প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উঠলেন একুশ বছরের এই তরুণী। নতুন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাওমি ওসাকা এদিন ৭-৬ (৭/২), ৫-৭ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা পেত্রা কেভিতোভাকে। দুইবারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন কেভিতোভার বিপক্ষে জেতাটা মোটেও সহজ ছিল না ওসাকার। রড লেভার এ্যারেনায় রোমাঞ্চ এবং নাটকীয়তার ফাইনালে শেষ পর্যন্ত চেক তারকাকে হারাতে তার সময় লাগে দুই ঘণ্টা ২৭ মিনিট। ২০ বছর বয়সেই বিশ্ব টেনিস দুনিয়ার নজর কেড়ে নেন নাওমি ওসাকা। ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতে। গত মৌসুমে আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইউএস ওপেনের শিরোপা জয়ের পরও ওসাকাকে ছাপিয়ে লাইম লাইটে চলে আসেন সেরেনা। চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে সেরেনাকে নিয়েই মাতামাতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিশ্ব গণমাধ্যম। সেরেনার কারণে চ্যাম্পিয়ন হয়েও ‘ছায়া’ ছিলেন জাপানের তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। কিন্তু ‘বিস্ময়’ বালিকা যে তার দ্যুতি আরও ভালভাবে ছড়াবেন সেটা হয়তো মনে মনেই রেখেছিলেন। নতুন বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেই সেটা প্রমাণ করলেন ওসাকা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়েই ক্যারিয়ারের প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। সেই সঙ্গে ব্যাক টু ব্যাক গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ডও গড়লেন নাওমি ওসাকা। প্রায় দেড় যুগ পর প্রথম কোন খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের ঠিক পরের গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টেও শিরোপা উঁচিয়ে ধরার রেকর্ড গড়লেন ওসাকা। তার আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন আমেরিকার জেনিফার ক্যাপ্রিয়াতি। ২০০১ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের ঠিক পরের গ্র্যান্ডস্লামও নিজের শোকেসে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। জেনিফার ক্যাপ্রিয়াতির পর সেই রেকর্ড গড়লেন ওসাকা। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে নতুন র‌্যাঙ্কিং। টানা দুই গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের পুরস্কার হিসেবে এদিন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটা দখল করে নিবেন ওসাকা। ৪৮ সপ্তাহে শীর্ষে থাকা রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপের কাছ থেকে শীর্ষস্থান দখল করবেন জাপানী তারকা। গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উঠবেন তিনি। তার আগে এই রেকর্ড ছিল ক্যারোলিন ওজনিয়াকির। ২০১০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিশ্ব টেনিসের শীর্ষে উঠেছিলেন ড্যানিশ এই টেনিস তারকা। পেত্রা কেভিতোভার বিপক্ষে এটাই ওসাকার প্রথম ম্যাচ। কোন গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে এসে প্রথম মুখোমুখি হলেন একে অপরের। এই অভিজ্ঞতাটাও দুর্দান্ত। তবে পেত্রা কেভিতোভাকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি ওসাকা। ম্যাচের শেষেই তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম ম্যাচেই এমনটা আসলে আমি চাইনি। কিন্তু আমি অবশ্যই তোমার দল এবং তোমাকে অভিনন্দন জানাই। সত্যিই তুমি বিস্ময়কর একজন খেলোয়াড়। গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনাল খেলায় আমিও সম্মানিতবোধ করছি।’ এদিকে দুটি গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জিতেছেন পেত্রা কেভিতোভা। দুটিই আবার উইম্বলডনে। দীর্ঘদিন পর আবারও ফাইনালে উঠে কোন গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন চেক তারকা। কিন্তু পারলেন না শেষের হাসিটা হাসতে। তবে ২০১৬ সালে ভয়াবহ ইনজুরিতে পড়ার পর আবারও কোন মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে পারার আনন্দটাও দারুণ উপভোগ করেছেন পেত্রা কেভিতোভা।
×