ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন যাবে ট্রাম্পের দ্বিতীয়ার্ধ

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

কেমন যাবে ট্রাম্পের দ্বিতীয়ার্ধ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকালের দ্বিতীয়ার্ধ কিছু অনভিপ্রেত ঘটনার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। নিজের সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প ‘বন্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছেন যার ফলে ফেডারেল সরকারের এক-চতুর্থাংশ অচল হয়ে পড়ে আছে। প্রায় ৮ লাখ কর্মচারীর বেতনের চেক পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫৭০ কোটি ডলার না পাওয়া পর্যন্ত এই বন্ধ চলবে বলে ট্রাম্প জানান। এ ছাড়া দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাজারগুলোর উত্থান-পতন ঘটেছে এবং জেনারেল জন কেলি ও জেনারেল জেমস মাটিসের মতো আস্থা রাখার উপযোগী কেবিনেট মন্ত্রীদের বের করে দেয়া হয়েছে। ট্রাম্পবিরোধীরা এসব ঘটনাকে বিপর্যয় আখ্যা দিলেও তার সমর্থকরা তা মানতে রাজি নন। প্রথম দু’বছরে ট্রাম্পের অর্জন যে তেমন কিছু ছিল না তা নয়। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার পৌঁছেছিল ৪.২ শতাংশ। ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ৩৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। মহামন্দার পর থেকে মার্কিন ইতিহাসে দীর্ঘতম টানা প্রবৃদ্ধির নতুন রেকর্ড হয়। আমেরিকার ইতিহাসে বৃহত্তম কর হ্রাস ঘটনা তিনি যার পরিণতিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের চল ফিরে আসে। তাঁর কার্যকালের প্রথমার্ধে ভাগ্যদেবী ট্রাম্পের সহায় ছিল। দুই পূর্বসূরিকে দারুণ দারুণ অভিঘাতের যেসব ধকল সইতে হয়েছিল ট্রাম্পকে তা সইতে হয়নি- যেমন নাইন ইলেভেন, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সিরিয়া যুদ্ধ ইত্যাদি। অন্যদিকে নির্বাচনে বিজয়, অর্থনীতির তেজীভাব এবং অর্থলগ্নি বাজারগুলোর চাঙ্গা অবস্থা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য অনেক স্বস্তিদায়ক থেকেছে। প্রথম দুটি বছর এভাবে কাটানোর পর ট্রাম্পের কার্যকালের দ্বিতীয়ার্ধটা কেমন যাবে? অর্থনীতিবিদদের মতে ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি দারুণ মন্থর হয়ে পড়বে এবং তারপর ২০২০ সালে মন্দা দেখা দেয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। শেয়ার বাজারের হাবভাব, বিনিয়োগকারীদের আচরণ এবং অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে কোন কোন অর্থনীতিবিদ এমনও বলছেন যে, চলতি বছরেই আমেরিকায় মন্দা কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯১ ভাগ। মন্দা কখন দেখা দেবে এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে দ্বিমত থাকতে পারে। তবে এক জরিপে ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধির গড় পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছে ২.৪ শতাংশ যদিও কারও কারও মতে তা ২ শতাংশের কাছাকাছিও হতে পারে। প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে আসার পেছনে তিনটি বড় কারণ কাজ করবে। প্রথমত কর হ্রাসের সুবিধা ফিকে হয়ে আসা, দ্বিতীয়ত বাণিজ্য যুদ্ধ ও শুল্ক বৃদ্ধি এবং তৃতীয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির নীতি। প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে আসার কারণে মন্দার আশঙ্কা থেকেই শেয়ার বাজারের সূচক কমেছে। ক্রেতারা শেয়ার কেনা বাদ দিয়ে অধিকতর নিরাপদ ট্রেজারি বন্ড কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনীতিবিদদের ধারণার চেয়েও নিরানন্দ। গোল্ডম্যান শ্যাস এবং জেপি, মরগ্যানের মতো ফার্মগুলোর পূর্বাভাস হলো এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। একই সঙ্গে দুটো ফার্মই ধারণা ব্যক্ত করেছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ৪ গুণ বাড়াতেও পারে। গত দু’বছরে ট্রাম্প দেখিয়েছেন যে যে কোন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলে তিনি পাল্টা আঘাত হানতে পিছপা হন না এবং পরিণতি কি দাঁড়াবে তারও তোয়াক্কা করেন না। সামনের দুটি বছরে তিনি একইভাবে চলবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। ইতোমধ্যে তিনি সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আপগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা থেকে পরে সরে আসা হয়। আর সিরিয়া থেকে সরানো হবে কিনা সেটাও এখন অস্পষ্ট। ফল দাঁড়িয়েছে এই যে এ দুটি দেশের প্রতি মার্কিন নীতি কি তা কেউ বলতে পারে না। এই অস্পষ্টতা বা দ্ব্যর্থবোধকতায় আমেরিকার ক্ষতি ছাড়া লাভ হচ্ছে না। এখন মন্ত্রিসভা থেকে দুই দক্ষ জেনারেলকে সরিয়ে দেয়ার ফলে সামনের দিনগুলোতে ট্রাম্পের নীতির প্রশ্নে দ্ব্যর্থবোধকতা বিপজ্জনকভাবে বাড়বে। আগামীতে ট্রাম্পের জন্য আরও বিপদ অপেক্ষা করছে। কারণ ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুটি গুরু অপরাধের অভিযোগ আছে। তার বেশ ক’জন সাবেক উপদেষ্টা জেলখানায় রয়েছেন বা জেলে যাওয়ার পক্ষে আছেন। ওদিকে ফেডারেল কৌঁসুলি মুয়েলারের তদন্তের ফলাফল কি দাঁড়াচ্ছে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে রুশ কানেকশন দেখিয়ে মুুয়েলার তার পরিবারের কোন সদস্যকে অভিযুক্ত করতেও পারেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ট্রাম্প শেষ অবধি তার ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই সমস্যাকে রক্ষা করতে পারেন। ওদিকে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তাদের পক্ষে এখন ট্রাস্টি প্রশাসনের কাজকর্ম খতিয়ে দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা ট্রাম্পকে ইমপিচ করার উদ্যোগও নিতে পারে। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট সেই উদ্যোগে বাদসাধতে পারে। যাই হোক সামনের দিনগুলো ট্রাম্পের জন্য খুব সুখকর হবে বলে মনে করার কারণ নেই। তার পরও ট্রাম্প প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামাল দিয়ে নিতে পারবেন। কারণ ভাগ্য এ যাবতকাল তার সহায় থেকেছে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×