ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনার প্রথম জয়, সিলেটের হার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

খুলনার প্রথম জয়, সিলেটের হার

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে মঙ্গলবার প্রথম দিনে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম জয়ের মুখ দেখেছে খুলনা টাইটান্স। প্রায় দর্শকহীন মাঠে দিনের প্রথম ম্যাচে তারা ২৫ রানে হারিয়ে দেয় রাজশাহী কিংসকে। আর সন্ধ্যায় অপর ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মধ্যে স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল। ঢাকা পর্বে উইকেট ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কারণ টি২০ ক্রিকেটের মতো ধুন্ধুমার ব্যাটিং করা যাচ্ছিল না। সে সময় সিলেটে পরবর্তী পর্বে রানের আশা করেছিলেন সবাই। যদিও মিরপুরে শেষদিকে বড় রানের দলীয় সংগ্রহ দেখা গেছে। কিন্তু সিলেটে প্রথম দিনেই দুই ম্যাচে কোন বড় সংগ্রহ দেখা যায়নি। বরং উইকেটে বল অনেক ধীরে এবং নিচু হয়ে এসেছে। তাই প্রথম ম্যাচে খুলনা ৯ উইকেটে ১২৮ রান করেও রাজশাহীকে ১৯.৫ ওভারে ১০৩ রানে গুটিয়ে দেয়। দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক সিলেট ১৪.৫ ওভারে ৬৮ রানে গুটিয়ে যায় এবং কুমিল্লা ১১.১ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয়। ঢাকা পর্বের শুরুতে বিপিএলে ছিল অনেক ধরনের অসঙ্গতি। ডিআরএস থাকলেও ছিল না ¯িœকোমিটার, আল্ট্রা এজ কিংবা হটস্পট প্রযুক্তি। শেষদিকে সেসব যোগ করা হয়। স্টাম্পে আঘাত লাগলে এলইডি লাইট জ্বলার কথা থাকলেও সেটা বাস্তবে দেখা যায়নি। সিলেটে প্রথম দিনে সেটাও যোগ করা হয়। এত আকর্ষণ এবং প্রথম দিনেই স্বাগতিক সিলেটের ম্যাচ থাকলেও দর্শক দেখা যায়নি সেভাবে। রাতের ম্যাচে অবশ্য কিছুটা দর্শক সমাগম ঘটে। টস হেরে স্বাগতিক সিলেট ব্যাটিংয়ে নামে। কিন্তু আদ্যোপান্ত ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৪.৫ ওভারে মাত্র ৬৮ রানেই গুটিয়ে যায়। ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদী হাসানের ভয়াল ঘূর্ণিতে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দ্বিতীয় বলে প্রথমবার খেলতে নামা আন্দ্রে ফ্লেচার (৪), চতুর্থ বলে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (০) বোল্ড হয়ে যান ও পঞ্চম বলে আফিফ হোসেন (০) এলবিডব্লিউর শিকার হন। দলীয় ৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়া সিলেটকে পাক পেসার ওয়াহাব রিয়াজ ও বাঁহাতি ইংলিশ স্পিনার লিয়াম ডসন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেননি। মাত্র ২২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে যখন বিপিএলে সর্বনি¤œ রানের লজ্জায় ডোবার পরিস্থিতি, তখন সাত নম্বরে নেমে অলক কাপালি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থাকলেও বাকিরা কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি। মেহেদী ৪ ওভারে ২২ রানে ৪টি, ওয়াহাব ২.৫ ওভারে ১৫ রানে ৩টি ও ডসন ৩ ওভারে ৪ রানে ২টি উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে কুমিল্লার শুরুটাও হয়েছে বিপর্যয়ে। প্রথম ওভারেই অহেতুক রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান এনামুল হক বিজয় (০)। তৃতীয় ওভারে সোহেল তানভীরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ব্যর্থতার মধ্যে থাকা তামিম ইকবালও (০)। তবে এরপর চলতি বিপিএলে প্রথমবার খেলার সুযোগ পাওয়া শামসুর রহমান অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে নিয়ে দারুণ সামাল দেন প্রাথমিক বিপদটাকে। তারা শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রানের জুটি গড়ে অপরাজেয় থেকেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। শামসুর ৩৭ বলে ৫ চারে ৩৪ এবং ইমরুল ২২ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫৩ বল হাতে রেখেই ২ উইকেট হারিয়ে ৬৯ রান তুয়ে জয় পায় কুমিল্লা। এটি কুমিল্লার ৫ ম্যাচে তৃতীয় জয় আর সিলেটের ৪ ম্যাচে তৃতীয় হার। এর আগে দুপুরে ঢাকা পর্বে চরমভাবে বিপর্যস্ত খুলনা টাইটান্স অবশেষে সিলেটে গিয়ে খেলা প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে। লো-স্কোরিং ম্যাচে বোলারদের কৃতিত্বে ২৫ রানে তারা রাজশাহী কিংসকে হারিয়ে দেয়। সিলেটের উইকেটে এটিই এবার বিপিএলের প্রথম ম্যাচ। তাই উইকেট সম্পর্কে ধারণা সব দলেরই তেমন হয়নি। এরপরও টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় খুলনা। এদিন ফর্মে থাকা জুনায়েদ সিদ্দিকীর সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন অভিজ্ঞ জহুরুল ইসলাম। টানা ব্যর্থতার জন্য পল স্টারলিং একাদশের বাইরে চলে যান। শুরুটা ভালই হয়েছিল, জহুরুল ৬ বলে ১টি করে চার-ছয়ে ১৩ রান করেই সাজঘরে ফিরলে তা আর ভাল থাকেনি। জুনায়েদও এদিন বেশি দূর যেতে পারেননি ১৪ বলে ১ চার, ১ ছয়ে তিনি ১৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। ইংলিশ অলরাউন্ডার ডেভিড মালান (২১ বলে ২ চারে ১৫) ও ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৩ বলে ৯) দ্রুত বিদায় নিলে বিপাকে পড়ে খুলনা। পরে আরিফুল হকের ২৭ বলে ১ চারে ২৬, ডেভিড উইজের ১২ বলে ১৩ এবং অতিরিক্ত ১৬ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৮ রান তোলে খুলনা। রাজশাহীর হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ইসুরু উদানা, মেহেদী হাসান মিরাজ ও আরাফাত সানি। ছোট লক্ষ্যকে তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই বিপদে পড়ে রাজশাহী। জুনাইদ খান ও তাইজুল ইসলামের ভয়ানক বোলিংয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। তিন নম্বরে নেমে অধিনায়ক মিরাজ ১৬ বলে ২ চার, ১ ছয়ে ২৩, ক্রিশ্চিয়ান জোঙ্কার ২৪ বলে ১৫ ও আরাফাত ১৩ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ১৫ রান করলেও বাকিদের ব্যর্থতায় ১৯.৫ ওভারে ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায় রাজশাহীর ইনিংস। তাদের ইনিংস মন্থর হয়েছে মূলত তাইজুলের ৪ ওভারে ১০ রানে ৩ উইকেট শিকার এবং রিয়াদের ৪ ওভারে ১২ রানে ২ উইকেট শিকারের কারণে। এছাড়া জুনাইদ ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন। ফলে চলতি বিপিএলে টানা চার ম্যাচ হার দেখার পর প্রথম জিতল খুলনা। তাইজুল হন ম্যাচসেরা।
×