ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব এ রহমান

নবীনের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

 নবীনের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস

স্কুল এবং কলেজ জীবন শেষ করে একজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখে একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় না। স্বপ্ন পূরণে নামতে হয় ভর্তিযুদ্ধ নামক এক কঠিন প্রতিযোগিতায়। যারা বেশ পরিশ্রম আর অধ্যবসায় করতে পারে কেবল তারাই সেই যুদ্ধে টিকতে পারে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে সুযোগ পায় নিজের স্বপ্নের সেই ক্যাম্পাসে হাঁটার। দেশের প্রায় সব ক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম। একঝাঁক তরুণ মেধাবী আর স্বাপ্নিকদের পদভারে প্রাণোচ্ছ্বল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো। চোখেমুখে তাদের স্বপ্নকে ছুঁতে পারার এক অনন্য তৃপ্তি। মনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নীল হাতছানি। ‘৬ তারিখ ছিল আমার প্রথম ক্লাস। স্বপ্নের মতো চোখের সামনে ভাসছিল যে, প্রথম ক্লাসটা কেমন হবে! অবশেষে ৬ তারিখে ক্লাসে এলাম। চেয়ারম্যান স্যারের ক্লাস। তিনি টানা তিন ঘণ্টা লেকচার দিলেন। কিন্তু ক্লাসে সবাই এতই মনোযোগী ছিলাম যে বুঝতেই পারলাম না কিভাবে সময় চলে গেল! এরপর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাবাজি, ঘোরাঘুরি। সবাই আমরা নতুন ফ্রেন্ড। কিন্তু মনে হয়, এরা যেন আমার কত কালের পরিচিত। নতুন ক্যাম্পাসে ক্লাস, আড্ডাবাজি, ঘোরাঘুরি। যেন স্বপ্নের মতোই কেটে যাচ্ছে। আমি গর্বিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক ক্যাম্পাস, বন্ধুর মতো শিক্ষকদের পেয়ে।’ এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়া শামীম মাহমুদ। আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাসে নিজের জায়গা করে নিতে পারার অনুভূতি জানায় লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী পূজা চক্রবর্তী ‘এই ক্যাম্পাস আমার স্বপ্ন ছিল! যা আমি পূরণ করতে পেরেছি। দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাসে সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এই ক্যাম্পাস আমাকে আপন করে নিয়েছে। এই ক’দিনেই যে আমি এভাবে চবির মায়ায় পড়ে যাব তা কখনও ভাবতে পারিনি। আশা করি চবির মান অক্ষুণ্ণ রেখে এই ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নেব। ভালবাসি প্রাণের চবিকে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়া সৈয়দা নুজহাত জাবীন বলেন, ‘আজ মনে পড়ছে সেই দিনের কথা। এসএসসি তে ৪.৩৩ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম একটি ছোট্ট কলেজে। আমি আর আমার এক বান্ধবী মিলে হিসেব করছিলাম আমাদের ভবিষ্যত কতটা অন্ধকার! কিন্তু না। অধ্যবসায়ের ফলে আজ সেই বান্ধবী জাহাঙ্গীরনগরে চান্স পেয়েছে আর আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসে আসার পর মনে হচ্ছে, এটা সেই স্বপ্নের জগৎ যেটা দেখার সাহস আমাদের ১ বছর আগে ছিল না। কিন্তু পরিশ্রমের ফলে আমার স্বপ্নের জায়গাটায় পৌঁছতে পেরেছি। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর চান্স পাওয়ার পরও পছন্দের বিষয় না পাওয়ায় আবারও পরীক্ষা দেয় পছন্দের বিষয় পড়ার জন্য। তেমনই দু’জন শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম ও নাইমুর রহমান হৃদয়। দু’জনই আগে ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। এবার সিরাজুল ইসলাম ভর্তি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। সিরাজুল বলেন, ‘অনেক সাধনার পর, নিজেকে একজন সত্যিকারের ভর্তি যোদ্ধা প্রমাণ করে ক্যাম্পাসের এই স্বপ্নসারথিদের পাশে দাঁড়ানো। সে এক অন্য রকম অনুভূতি! হাজারো সফলতার এই সুবিশাল প্লাটফর্মে এসে পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজের ভেতরে তিল তিল করে বেড়ে ওঠা স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরে সত্যিই খুব আনন্দিত। কৃতজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তার প্রতি। আর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী নাইমুরের অনুভূতিটা এরকম, ‘কষ্ট, ত্যাগ আর সার্থক পরিশ্রমের পর নতুন ক্যাম্পাসে। অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে একটি ক্যাম্পাস ছেড়ে অন্য ক্যাম্পাসে আসা। ভাল একটা স্বপ্নের মতই হোক ক্যাম্পাসের দিনগুলো। ইবিই হোক আমার স্বপ্ন পূরণের সিঁড়ি। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হওয়া তুহিনূর রহমান বলেন, ‘স্কুল আর কলেজ জীবন পেরিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় পা রাখা। তাই উত্তেজনার আর শেষ নেই। অরিয়েন্টেশনের দিনটি খুব ভালভাবেই কেটেছে। সিনিয়ররা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরিচিত হই নতুন বন্ধুদের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রাখার অনুভূতিটা আমার কাছে সত্যিই অন্যসব আনন্দ থেকে একটু বেশিই।’ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী অর্জন রায় এর অনুভূতিটা এরকম, ‘ছোটবেলা থেকে যখন খেলনার যন্ত্রাংশগুলো খুলে আবার জোড়া লাগাতে পারতাম, বাবা বলত আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। মা তা শুনে মৃদু হাসতেন। সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে আছি আমি। অনেকের টার্গেট থাকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছের বাস্তবায়নে ভর্তি হতে হয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনই একজন শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়া মাসুম বিল্লাহ। মাসুম জানায়, ‘স্বপ্ন ছিল ঢাবিতে পড়ার। কিন্তু ভাগ্য যখন সহায় না হয় তখন ভাল কোন পরিবর্তনের আশায় ভাগ্যের ডাকে সারা দিতে হয়। প্রথম দিকে কিছুটা মন খারাপ ছিল, কিন্তু পরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়ে সে আফসোস অনেকটা কেটে গেছে। এই ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করে। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা এই দৃশ্য আমার মন খারাপের বেলায় অন্তরঙ্গ তৃপ্তি দেয়। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হওয়া লামিয়া আহমেদ বলেন, ‘ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হয়ে এই ক্যাম্পাসে নিজের নাম লিখাতে পেরে আমি গর্বিত। ভর্তি সুযোগ পাওয়ার পর ক্যাম্পাস নিয়ে আমার মনে আঁকতে থাকে নানা স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। নতুন ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত অনেক কিছুই শিখছি। স্যারদের কাছ থেকে, বড়দের কাছ থেকে এমনকি ক্লাসমেটদের কাছ থেকেও। ‘শেয়ারিং জিনিসটা আসলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় না এলে বুঝতাম না। সিনিয়ররা যেমন হেল্পফুল তেমনি ক্লাসের বন্ধুগুলোও। যদিও প্রথমে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়াটা কষ্টকর ছিল সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সীমিত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে হাজারো স্বপ্নের বীজ।’ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিন বিভাগে ভর্তি হওয়া মুনতাসির রুবেল এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে।
×