ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয় চাইলেন ব্যাঙ্ককে আটক সৌদি নারী

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

আশ্রয় চাইলেন ব্যাঙ্ককে আটক সৌদি নারী

থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক বিমানবন্দরে আটক সৌদি নারী সোমবার আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে তাকে সহায়তা করার জন্য অপর যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হোটেল রুমে নিজেকে আটকে রাখা ওই নারী টুইটারে হতাশাব্যঞ্জক টুইট করে এই আহ্বান জানান। এএফপি। গত বছর অক্টোবরে ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার তদন্ত ও বিচার পরিচালনা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের কর্মকা-ের তীব্র সমালোচনা চলাকালে এই ঘটনা ঘটল। যা নতুন করে দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড নিয়ে সমালোচনা সবার সামনে উঠে এলো। রাহাফ মোহাম্মদ মুতলাক আল-কুনুন (১৮) জানান, কুয়েত সফরকালে তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে পালাতে চান। কেননা তার পরিবার তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। তিনি বলেন, তার পরিকল্পনা রয়েছে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া এবং সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করা। এখন তিনি আশঙ্কা করছেন তাকে মেরে ফেলা হতে পারে যদি থাই অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে ফেরত পাঠায়। রবিবার ট্রানজিট নেয়ার সময় তাকে থাই কর্মকর্তারা আটক করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কুনুনের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সৌদি ও কুয়েতী কর্মকর্তারা তাকে থামায় এবং তার কাছ থেকে জোর করে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়েছে। টুইটারে কুনুন জানিয়েছেন, কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে (০৪১৫ জিএমটি) তিনি এসেছেন। তিনি বলেন, আমি থাইল্যান্ডের সরকারকে বলব-আমাকে কুয়েত ফেরত পাঠানো বন্ধ করুন। আমি থাই পুলিশদের বলছি আমার আশ্রয় প্রক্রিয়া শুরু করুন। বিমানে না ওঠার জন্য তিনি টুইটারে যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কক থেকে তাকে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। তিনি লেখেন, আপনাদের সবাইকে এখন আমার প্রয়োজন। আমি মানবিক সহায়তার জন্য চিৎকার করছি। তিনি আরও বলেন, যদি আমাকে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে আমাকে আটকে রাখা হবে। এ বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত যে, আমার পরিবার আমাকে খুন করবে। সারারাত কুনুন তাকে কুয়েতে প্রত্যার্পণ না করার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন। তিনি এমন একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন যেখানে দেখিয়েছেন যে, হোটেল রুমের দরজায় আসবাবপত্র রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, জাতিসংঘ শরণার্থী কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। উর্ধতন এক থাই অভিবাসন কর্মকর্তা রবিবার জানিয়েছেন যে, কুনুন তাদের তার রুমে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না কেননা তার কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। যেমন রিটার্ন টিকেট অথবা অর্থ। থাইল্যান্ড এখন সৌদি আরবের দূতাবাসের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য যোগাযোগ করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেছেন, যদি কুনুনকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তার গুরুতর ক্ষতি হবে। থাই কর্তৃপক্ষের উচিত তাকে ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর রেফুজিস (ইউএনএইচসিআর) এর সঙ্গে দেখা করতে দেয়া এবং আশ্রয় প্রার্থনার জন্য আবেদন করতে দেয়া। তিনি বলেন, সৌদি আরবের তথাকথিত পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে পরিবারের অভ্যন্তরে সহিংসতার ঘটনা অন্য উপায়ে ঘটানোর দীর্ঘদিনের রেকর্ড রয়েছে। ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, দ্য প্রিন্সিপ্যাল অব নন-রিফাউলমেন্ট অনুসারে আশ্রয় প্রার্থীর জীবন যদি হুমকির মুখে পড়ে তবে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং চেষ্টা করছে থাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রাহাম মোহাম্মদ আল-কুনুনের সঙ্গে দেখা করতে, যাতে তাকে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা দিতে পারে। নন-রিফাউলমেন্ট হচ্ছে এমন একটি আন্তর্জাতিক আইন যাতে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীকে এমন কোন এলাকা থেকে বহিষ্কার করা থেকে মুক্তির অধিকারসহ একজন শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে অধিকার দেয়া হয়। অতিরক্ষণশীল সৌদি আরবে দীর্ঘকাল ধরে নারীর ওপর বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার জন্য সমালোচিত হয়ে আসছে। যার মধ্যে একটি অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা। যা পুরুষদেরকে তাদের নারী আত্মীয়দের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কর্তৃত্ব প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই অভিভাবকত্ব ব্যবস্থায় নারীদের নৈতিক অপরাধের শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি তাদেরকে পরিবারের সম্মানহানির জন্য পরিবারের সদস্যদের হাতে ‘সম্মান রক্ষার্থে হত্যার’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। ব্যাঙ্ককে সৌদি দূতাবাসের শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স আবদুলিল্লাহ আল-শোউইবি সৌদি মালিকানাধীন চ্যানেল রোতানা খালিজিয়ালের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে, কুনুনের বাবা তাকে ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে তিনি কুনুনের পাসপোর্ট জব্দ করা এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী কোন নারী তার পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন না।
×