ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মা জননীর নৌকার জয়

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

মা জননীর নৌকার জয়

১৯০২ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম তার। নাম ময়মন বেগম। ২০১৯ ১ জানুয়ারি ১১৭ বছরে পা দিলেন এই বৃদ্ধা। তিনি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা। স্বামী বাবর আলী মারা গেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের পর। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সাবেক ছিটমহল ২৮ নম্বর মুজিবনগরে নাতি পুতি ও পুতির সন্তানদের নিয়ে তার বসবাস। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই সাবেক ছিটমহলবাসী প্রথম ভোট দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ময়মন বেগম এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব থেকে বেশি বয়সের ভোটার। তিন প্রজন্ম একই সঙ্গে ভোটও দিয়েছেন তারা। নাগরিকত্বহীন অবস্থায় সাড়ে ছয় দশক কাটানোর পরে এবারই প্রথম নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন তাঁরা। ডিমলা উপজেলার চারটি ছিটমহল নীলফামারী ১ আসনে অন্তর্ভুক্ত। আসনটিতে তারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। নৌকার প্রার্থী ছিলেন আফতাব উদ্দিন সরকার। ময়মন বেগম জন্মের পর থেকে ভারত, পূর্ব পাকিস্তান, শেষমেশ ভারতের ভূখন্ডে থাকতেন। কিন্তু সাড়ে ছয় দশক কোন দেশের নাগরিকত্বের কোন অধিকারই পায়নি। ছিটমহলগুলোর অন্যান্য মানুষের মতো। ‘বাপ-দাদারা যা পায়নি, সেই নাগরিকত্বের প্রমাণই হাতে পেয়েছেন ৬৭-৬৮ বছর পরে। গর্ব হচ্ছে এই ভোটার কার্ড পেয়ে,’ বলছিলেন ময়মন বেগম। ৬৮ বছরের বন্দী জীবন হতে উদ্ধার পাওয়া সাবেক ছিটমহলবাসীদের মুক্তির নেতা মা জননী শেখ হাসিনার দলের প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়েছেন তারা। এটিও বললেন ময়মন বেগম। বললেন মা জননীর নৌকার জয়। সাবেক ছিটের ভোটাররা সকলেই ৩০ ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দল বেঁধে ভোট দিয়েছেন, জানালেন নগর জিগাবাড়ির জয়নাল আবেদীন। বাংলাদেশ সরকার গঠনের জন্য প্রথমবার ভোট এদের নৌকায় সিল পড়েছে, জানালেন নয়া বাংলা সাবেক ছিটমহলের রহমান মিয়া। আনন্দপুর সাবেক ছিটমহলের ৫৫ বছরের ফরাদ মিয়া বললেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেই সাবেক ছিটমহল এলাকাগুলোতে ঢুকে পড়েছে রাজনীতিও। তবে আমাদের মুক্তিদাতা মা জননী শেখ হাসিনার বাইরে আমরা কেউ নই। ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে সবাই যেমন আগে জোটবদ্ধ ছিলাম, সেই ঐক্যে চিড় ধরাতে অনেকেই চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সরকার গঠনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বেইমানী করতে পারব না কোন দিন। তিনি আমাদের মুক্ত করেছেন। দিয়েছেন নাগরিকত্ব, দিয়েছে ভোটের অধিকার। দিয়েছেন ঘরে ঘরে বিদ্যুত, পাকা সড়ক, ঘরে ঘরে নলকূপ। আরও দিয়েছেন ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ও বিধবাভাতা ও চাকরি। ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য দিয়েছেন ক্ষুদ্রঋণ। আমরা আছি থাকব মা জননী শেখ হাসিনার সমর্থনে। মা জননীর বিজয়ে আমরা বিজয় মিছিল করেছি বলে জানালেন ফরহাদ। প্রসঙ্গত ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস। দীর্ঘ ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে উঠে যায় ছিটমহল। তারা বিচ্ছিন্ন কোন আর ভূখ-ের নয়, স্বাধীন দেশের নাগরিক বনে যায়। বাংলাদেশ-ভারতের মূল ভূখন্ডে মিশে যায় ১৬২ ছিটমহল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের নাম হয়ে যায় বাংলাদেশ। আর নাগরিকদের পরিচয় হয় বাংলাদেশী। অপরদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও বিলীন হয়ে যায়। ভারতীয় ভূখ-ে নাগরিকরা হয় ভারতীয়। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর থেকে বঞ্চিত থাকে ছিটমহলের অধিবাসীরা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সমস্যাটি থেকে যায়। মুজিব-ইন্দিরার স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৬৮ বছরের শোষন-বঞ্চনার ইতিহাসের অবসান ঘটিয়েছেন ছিটমহলবাসীর। -তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে
×