ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

লৌহজংয়ে ভোট কেন্দ্রগুলো পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

 লৌহজংয়ে ভোট কেন্দ্রগুলো পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ। রবিবার সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রের দিকে ছুটতে শুরু করে ভোটাররা। ভোট জালিয়াতি হতে পারে! আমার ভোটটা আমি দিতে পারব তো ? না অন্যে দিয়ে ফেলবে। এমনই সব ভাবনা নিয়ে সকাল সকালই ভোট কেন্দ্রগুলোর দিকে ভোটারদের ছুটতে দেখা যায়। ভোট কেন্দ্রেগুলো পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়। ভোট কেন্দ্রে যেমন সারিবদ্ধভাবে ভোট দিয়েছে ভোটাররা, তেমনি কেন্দ্রের আশপাশেও দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ব্যতিব্যস্থতা। তবে বিএনপি প্রার্থীর তেমন কোন লোকজন চোখে পড়েনি। বেলা সাড়ে ১১টা মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার উয়ারি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে ভোট দিচ্ছে। একদিকে পুরুষ ভোটারদের লাইন, অন্যদিকে নারী ভোটাররা দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘলাইনে ভোট দেবার জন্য। খুব শান্ত স্বাভাবিক পরিবেশে ভোট দিচ্ছে ভোটাররা। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান জানান, এখানে ২৮শ’ ৩৯ জন ভোটার রয়েছে। এ সময় প্রায় ৪০ ভাগ ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে। ভোটাররা তাদের ভোট সঠিকভাবে দিতে পারছে। এখানে কোন প্রকার প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ নেই। বেলা ১২টার জশলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। যেন মানুষের মিলন মেলা। সকলের মুখে উৎসবের আমেজ। সারিবদ্ধভাবে দীর্ঘলাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছে ভোটাররা। এখানে পুরুষদের থেকে মহিলাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা যায়। এখানে কথা হয় এ প্রজন্মের নতুন ভোটার সুবর্ণা আক্তারের (১৯) সঙ্গে। তার স্বামীর নাম রাকিব মৃধা। গ্রামের নাম কান্দিপাড়া। তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, জীবনে প্রথম ভোট প্রয়োগ করতে পেরে নিজেকে বেশ গর্বিত মনে করছি। ভোট দিতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি। ভেবেছিলাম ভোট কেন্দ্রে গ-গোল হবে। অনেকটা টেনশনও কাজ করছিল ভেতরে। কিন্তু এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন এক মিলন মেলা। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সকলেই আমরা নিজেদের ভোট দিয়েছি। কেউ কোন বাধা দেয়নি। এ কেন্দ্রে আরও আলাপ হলো ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আলী আকবরের সঙ্গে। তিনি জানালেন, বেশ কিছু দিন ধরে শুনেছিলাম, আওয়ামী লীগ নাকি ছিল মাইরা ভোট নিয়া যাইব। তাই সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে আইয়া পরি ভোট দিতে। যাতে কেউ আমার ভোটটা জালিয়াতি কইরা ছিল মারতে না পারে। কিন্তু আমি আসার অনেক আগে আরও লোকজন চইলা আইছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আমার ভোট আমি দিয়েছি। যা শুনছিলাম তার কিছুই তো দেখলাম না। আমার মতো সবাই ভোট দিয়েছে। কারও মুখে শুনি নাই যে, আমি ভোট দিতে পারি নাই। এমনকি কাউকে ছিল মারতেও দেখি নাই। তবে বিএনপির তেমন কোন লোকজন দেখি নাই। হেগো দলের মধ্যে নাকি অনেক ঝামেলা। তাই হেগো নেতায়ও নাকি ভোট কেন্দ্রে আহে না। নিজেরা নিজেরা কোন্দল কইরা শেষমেশ ভোট কেন্দ্রেও আইলো না। হেরা আইলে আরও ভাল অইতো। তবে ভোট ভালই দিছি। একটু লাইনে দাঁড়াইয়া থাকলেও আমার ভোট আমি দিতে পারছি। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হলদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাশেদুল হক জানালেন, কেন্দ্রটিতে মোট ৪ হাজার ১৭টি ভোটার ছিল। দুপুর ১২টা নাগাদ এ কেন্দ্রে ৫৫ ভাগের ওপরে ভোগ গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে তাদের ভোট প্রদান করেছেন। সম্পূর্ণ প্রভাব মুক্ত ভাবেই এখানে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে কোন সহিংসা ছিল না। শুধু ওই দুটি কেন্দ্রেই নয়। সারাদিনে প্রায় ৩৫টি ভোট কেন্দ্র ঘুরে একই অবস্থা দেখা যায়। তবে কখনও কখনও কোন কোন কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেলেও ক্ষণিক পরেই আবার ভোটারের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। উৎসবমুখর পরিবেশেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়েছে মুন্সীগঞ্জে। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, নির্বাচনে জেলার কোথায় কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। সংখ্যালঘু ভোটাররাসহ সকলে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে। ভোট কেন্দ্রের বাইরেও বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা উল্লেখ করার মতো নয়। ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর।
×