ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন, সামান্থার প্রথম ভোট নৌকায়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

  নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন, সামান্থার প্রথম ভোট নৌকায়

আজাদ সুলায়মান ॥ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে ঢাকা-১৭ ও ১৮ আসনে। সকাল ৮টা থেকেই শীতের কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোটাররা ছুটে যান নিজ নিজ কেন্দ্রে। সকাল থেকে লম্বা লাইন ধরে ভোট দিতে দেখা গেছে নারীদের। রবিবার এ আসনের আশকোনা উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, ভাটারা, বসুন্ধরা, খিলক্ষেত, কুড়িল জোয়ার সাহারা এলাকার ভোটকেন্দ্র ঘুরে নারী ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে দেখা গেছে। সাত থানা এলাকার ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩২১ ভোটারের ২১৫টি কেন্দ্র নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ আসন। এখানকার বর্তমান সাংসদ এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। এ আসনের আশকোনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাবিদ্যালয় ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় সকাল নয়টার মধ্যে। পৌষের রৌদ্রোজ্জ্বল আলোতে সবুজ মাঠে বিশাল লাইনে দাঁড়ানো ছিলেন শতাধিক নারী ভোটার। তাদের একজন মানসুরা জানান, তারা দেশকে বদলে দিতে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে এসেছেন। কারোর তাগিদ বা আহ্বান নয়, নিজ উদ্যোগেই ভোট দিতে হাজির হয়েছি। হাসনা হেনা নামের এক ভোটার জানান, প্রথমবার ভোট দিলাম। একেবারে নির্ভয়ে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। দেখলাম সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে দেশ বদলের ভোট দিচ্ছেন। কোন ভয়ভীতি ছিল না কোন গ-গোলও ছিল না। এ কেন্দ্রের নৌকার মার্কার এজেন্ট হেলাল উদ্দিন জানান, ভোটারদের ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। লাইন ধরে এক একজন করে বুথে ঢুকছেন আর হাসি মুখে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ফিরে যাচ্ছেন। উত্তরা মালকা বানু উচ্চ বিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমন্বয়কারী এ এইচ মানিক জানান, সকাল থেকেই এখানে এক তালে ভোট চলছে। আওয়ামী লীগ বিএনপি ছাড়াও চরমোনাই পীরের দলের সমর্থকরা যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। কারও কোন অভিযোগ নেই। সকাল দশটার দিকেই উত্তরার ল্যাবরেটরি স্কুলে ভোট দিতে আসেন এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ভোট দেয়ার পর তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলার জনগণ আর কখনও কোন মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদের উত্থান দেখতে চায় না। এ কারণে এবারও জনগণ বিপুল ভোটে বর্তমান সরকারকে আবারও ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। আজকের দিনটিও জাতির জন্য আরেক ইতিহাস গড়ার দিন। তিনি জানান, তার এলাকার জনগণ ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিচ্ছে। এতেই বোঝা যায় বর্তমান সরকারের অধীনেও মানুষ কতটা আগ্রহ নিয়ে ভোটের প্রতি আস্থাশীল। একই সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা ভোট দিতে আসেন উত্তরার ৫নং সেক্টরের আইইএস স্কুলে। এ কেন্দ্রের ভোটার মুজিবুর রহমান বলেন, আমি সৌভাগ্যবান এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে একত্রে ভোট দিতে পারলাম। মাজহার নামের একজন বলেন, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে, নিরাপদ কক্ষে ঢুকে সিল মেরে, ব্যালট পেপার নিজ হাতে বাক্সে ফেলে জাতীয় নির্বাচনে আমার প্রথম ভোট প্রদান করলাম। অন্যান্য ভোটকেন্দ্র ঘুরে নারী ও পুরুষ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে দেখা গেছে। ঢাকা-১৭ আসনেও ভোটারের মাঝে একই ধরনের উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। কূটনীতিপাড়া বলে খ্যাত গুলশান, বারিধারা, বনানী নিয়ে গঠিত আসনে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের আকবর পাঠান ফারুক ও বিএনপির আন্দালিব রহমান পার্থর সমর্থক ভোটাররা মিলেমিশে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। এখানে জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার পর সামান্থা বলেন, প্রথম ভোটটা নৌকায় দিয়েছি। আমার বাবা মাও সারাজীবন নৌকার সমর্থক। নির্বাচনের আগের রাতে একটা ভয়ভীতি কাজ করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রে এসে দেখলাম এক ভিন্ন পরিবেশ। বেলা দুটোর দিকে কড়াইল বস্তির ভোটার ময়না বেগম বলেন, ‘ভোট দিতে এসে কোন সমস্যা হয়নি। তবে বেশ লম্বা লাইন। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যশনাল স্কুলে অবস্থিত কেন্দ্রটি নারী কেন্দ্র। এখানে ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ১০৮টি। প্রিসাইডিং অফিসার ধূসর প্রকৃতি গাইন জানান, সকালে ঠা-ার কারণে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটাররা আসতে শুরু করেন। এই কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট লাইজু জানান, ভোটের পরিস্থিতি খুব ভাল। এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। শিক্ষিকা সামিয়া জামান বলেন, ভোট দিতে সমস্যা হয়নি। সমস্যা আসলে আমাদের মনে। সবকিছু ওভারকাম করে প্রতিবছরই আমি ভোট দেই। দেশ আমার। ভোট আমার। আমার ভোট আমি দেবই।
×