ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

পুকুরে ফিরছে বিলুপ্ত ভ্যাদা মাছ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 পুকুরে ফিরছে বিলুপ্ত ভ্যাদা মাছ

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো উত্তর জনপদের বৃহত্তর বগুড়া ও নওগাঁ জেলার খাল-বিল ও নদী-নালাসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে মিলত সু-স্বাদু ভ্যাদা মাছ (স্থানীয়ভাবে নুনা মাছ নামে অধিক পরিচিত) পাওয়া গেলেও গত প্রায় ৩ দশক ধরে তা মেলে না। মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে এ অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ প্রজাতির মাছটি। তবে শীঘ্রই এ মাছ হাতের নাগালে মিলবে বলে সু-খবর জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিস্টিউট (বিএফআরআই) প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র সান্তাহারের উর্ধতন বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা ড. ডেভিট রেন্টু দাস। তিনি দাবি করেছেন ৩ বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় ভ্যাদা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন। ফলে এখন থেকে সু-স্বাদু প্রজাতির এ মাছ পুকুরে চাষ করা যাবে। তিনি জানান, এই উপকেন্দ্রে বর্তমানে বৈদেশিক অর্থ অর্জন করা কুচিয়া মাছের কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে গবেষণা চলছে। কুচিয়া মাছের কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ে গবেষণার নিয়মিত কাজের বাইরে নিজ উদ্যোগে বিলুপ্ত ভ্যাদা মাছের কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এর আগে ২০০০ সালের প্রথম দিকে এখানে ভ্যাদা মাছের কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ে গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করা হলেও সফলতা মেলেনি। সে সময় গবেষকরা গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে মা মাছ ছেড়ে দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া পোনা স্থানীয় বিশালাকারের রক্তদহ বিলে অবমুক্ত করে বংশ বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। ড. ডেভিট রেন্টু দাস জানান, এর পর থেকে এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে নতুন করে গবেষণা করা হয়নি। বর্তমানে নতুনভাবে করা গবেষণায় সফলতা পাওয়ার ফলে প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ ভ্যাদা মাছ এখন খামারিরা ছাড়াও যে কেউ তাঁর পুকুরে চাষ করতে পারবেন। তিনি জানান, ভ্যাদা মাছ মাংশল ও চর্বিহীন এবং খেতে খুব সু-স্বাদু। অথচ, ফসলে অপরিকল্পিতভাবে ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কারণে এ অঞ্চলের জলাশয় থেকে এ মাছটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সে কারণে পুকুর পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রর বিজ্ঞানীদের চেষ্টা ছিল এবং তাঁরা সফলও হয়েছেন। উদ্ভাবিত নতুন কৌশল কাজে লাগিয়ে সান্তাহার প্লাবন ভূমি গবেষণা কেদ্র এলাকা; মাছ চাষে দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করা আদমদীঘি উপজেলার মৎস্য চাষীরা এই মাছ পুকুরে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেছেন। উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রেন্টু দাস আরও বলেন, চলতি প্রজনন মৌসুমে পুকুরে চাষের জন্য দুই লাখের বেশি পোনা উৎপাদন করে চাষীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রের গবেষকরা জানান, এ মাছের পোনা পুকুরে ছাড়ার পর ছয় মাস বয়সে প্রতিটি ভ্যাদা মাছের ওজন হবে প্রায় ৪০০ গ্রাম। ফলে এ মাছ চাষ করে লাভবান হবেন চাষীরা। বর্তমানে এ মাছের বাজারদর প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। ভ্যাদা মাছটি ছোট প্রজাতির মাছ হওয়ায় দেশের অন্যান্য ছোট মাছে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে তার প্রায় সব পুষ্টিই এতে রয়েছে। এছাড়া বড় মাছ যেমন শোল, চিতল, বোয়ালসহ একাধিক বড় মাছে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে ভ্যাদা মাছেও একই পুষ্টি রয়েছে। ভ্যাদা মাছের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এতে কোন চর্বি নেই। ফলে বর্তমান প্রেক্ষিতে এমাছের চাহিদা অনেক বেশি হবে বলে দাবি করেছেন। -মোঃ হারেজুজ্জামান হারেজ, সান্তাহার, আদমদীঘি, বগুড়া থেকে
×