ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুব সমাজ বিরোধিতা করলেই কেউ দুর্নীতি করার সাহস পাবে না ॥ প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 যুব সমাজ বিরোধিতা করলেই কেউ  দুর্নীতি করার  সাহস পাবে  না ॥ প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে অবমাননা করছে। সমাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আদর্শ ও নৈতিকতা। দেশের যুবসমাজ অসততা, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরোধিতা শুরু করলেই কেউ অনিয়ম বা দুর্নীতির সাহস পাবে না। দুর্নীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধূলিসাত করছে। সবাইকে একযোগে দুর্নীতিকে ‘না’ বলতে হবে এবং দুর্নীতিপরায়ণদের বয়কট করতে হবে। দেশপ্রেমের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী’ দিবস উপলক্ষে রবিবার দুদক আয়োজিত ‘সততা সংঘের সমাবেশে এ মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধূলিসত করছে। সবাইকে একযোগে দুর্নীতিকে না বলতে এবং বয়কট করতে হবে। দেশপ্রেমের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে অবমাননা করছে। সমাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আদর্শ ও নৈতিকতা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন প্রধান বিচারপতি। দুর্নীতি দমনের জন্য সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্য শেষের আগে হযরত আলীর (র.) একটি উক্তি তুলে ধরেন। উক্তিটি হলো, দেশের বিদ্যান ব্যক্তিরা লোভী হলে, নেতৃবৃন্দ ঐশ্বর্যের পেছনে ছুটলে, ব্যবসায়ীরা অসাধু হলে, দেশের প্রশাসন এবং ন্যায়দ-ধারী বিচারকরা দায়িত্বহীন হলেÑ দেশ এবং দেশের নিপীড়িত জনগণকে কে রক্ষা করবে?’ প্রধান বিচারপতি বলেন, শুরুতেই বিজয়ের এ মাসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, মহান স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি। আরও স্মরণ করছি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ৩০ লাখ শহীদদের। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের বৈশ্বিক অভিযাত্রার অংশ হিসেবে এই মহতী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিনন্দন জানাই। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আজকের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমার বিশ্বাস আজকের এ অনুষ্ঠানে সততা সংঘের সদস্যসহ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আমাদের দুর্নীতিমুক্ত করার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণে জাতির আগামী প্রজন্মকে সম্পৃক্তকরণে দুদকের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। দুর্নীতি আমাদের একটি জাতীয় ব্যাধি। এটি সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে ও সুষম রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাহত করে। জাতীয় এই সমস্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুদককে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির ফলে ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, দেশপ্রেম, আদর্শ ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধের আন্দোলনকে সর্বজনীন করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ বছরের একটি দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আজ এই দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে অবমাননা করছে। সমাজ হতে দূরে সরে যাচ্ছে আদর্শ ও নৈতিকতা। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে এদেশের যুবসমাজ সবচেয়ে বড় শক্তি এবং অপার সম্ভাবনা। অদম্য আগ্রহ, সৃজনশীলতা এবং সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তাদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ আজ সময়ের দাবি। আমি প্রবীণদের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের উদ্দেশে কিছু কথা বলতে চাই। প্রাজ্ঞ প্রবীণরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অভিজ্ঞতা, সততা, দক্ষতা ও ন্যায়নিষ্ঠার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কিন্তু জাতির ভবিষ্যত গতিপথ নির্ভর করে দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের যে জোয়ার আজ সৃষ্টি হয়েছে তার মূলেও রয়েছে তরুণ শিক্ষার্থী। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের ছাত্রসমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আমাদের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করেছে। আত্মশক্তি বিকাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী সমাজ তথা তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য। ছাত্রসমাজ আগামী দিনে যেমন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে, তেমনি আজকের বাংলাদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মোঃ শামসুল আরেফিন, সততা সংঘের সদস্যসহ প্রমুখ।
×