ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরবঙ্গে নেই মঙ্গা, নেই মফিজ

সবার হাতে স্মার্ট ফোন

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

সবার হাতে স্মার্ট ফোন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষজনকে মফিজ আখ্যায়িত করে অবহেলার চোখে দেখা হয়েছিল। তারা কখনও চায়নি এই অঞ্চলের মানুষজনের ভাগ্য পরিবর্তন হোক। মঙ্গা ও মফিজ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নীলফামারী-২ সদর আসনের সংসদ সদস্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একান্ত সাক্ষাতকারে এমন কথা উল্লেখ করে বলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন এই অঞ্চলের মানুষজনকে মফিজ বলে আখ্যায়িত করেছিল। ফলে বিএনপি সময় উত্তরবঙ্গকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছিল মফিজ আখ্যা দিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে গত দশ বছরে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূর করেছে এবং সাধারণ মানুষজনের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যাদের মফিজ বলেছিল, তারা আজ মফিজ নেই। তাদের সবার হাতে স্মার্ট মোবাইল ফোন। এখন আর উত্তরাঞ্চলে অভাব নেই। মঙ্গা গিয়েছে জাদুঘরে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অবদান বলে উল্লেখ করে নুর। বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় উত্তরবঙ্গে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থীদের সমর্থকদের কাছে মফিজ ও মঙ্গা ইস্যুটি স্থান পেয়েছে। তারা বিভিন্ন উঠন-বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় এসব কথা তুলে ধরছেন। এক দশক আগেও উত্তরবঙ্গে বিরাজ করত ‘মঙ্গা’র চরম দুর্দশা। কায়িক শ্রমিক পরিবারগুলো কচু সিদ্ধ ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করত। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটত। কারণে-অকারণে ঝগড়া-মারামারি আর অশ্রাব্য ভাষায় গালি বিনিময় করেই কাটত ‘মঙ্গা’ আক্রান্তদের দিন। মঙ্গার সেই রূঢ় দৃশ্য এখন সত্যিই দুর্লভ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দশ বছরে দিন দিন শ্রমশক্তির অপচয় যে হারে হ্রাস পেয়েছে ‘মঙ্গা’র দুর্দশাময় চিত্রও সেই হারে পাল্টাচ্ছে। আমরা জানি ‘মঙ্গা’ সৃষ্টি হতো মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকায়। সারাবছর নয়, আশ্বিনের শুরুতে আমন ধান রোপণের পর যখন কৃষি শ্রমিকদের হাতে কোন কাজ থাকত না, তখন এ পরিস্থিতি শুরু হতো। আর তা চরম আকার ধারণ করত ‘কার্তিক’ মাসে। দরিদ্র কৃষি শ্রমিকরা অল্প দামে গৃহস্থালির জিনিসপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি বিক্রি করত। যাদের এসব সম্পদ নেই, তারা মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা ধার অথবা অগ্রিম মজুরি নিত কৃষি মৌসুমে কাজ করার প্রতিশ্রুতিতে। কেউ কেউ কাজের সন্ধানে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও যেত। উত্তরের কৃষিবিদরা বলছেন ‘মঙ্গা’ উত্তরণে বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগ বিশেষ করে কৃষির সফল বৈচিত্রায়ন, অধিক উৎপাদনশীল ফসল উদ্ভাবন, সামাজিক সুরা কর্মসূচী ইত্যাদি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিকল্প উপার্জনের পথ সৃষ্টি করে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ফলে বদলে গেছে উত্তরবঙ্গ। অজপাড়াগাঁয়ের বাড়িগুলোতে এখন চকচক করছে টিন, কর্মমুখর মানুষের কোলাহলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি, এক ফসলা জমিতে চাষ হচ্ছে ৩-৪টি ফসল, ফসলের সঙ্গে চাষ হচ্ছে মাছ, পায়ে হেঁটে চলা মানুষরা ছুটছে বাইসাইকেলে, হুহু করে বাড়ছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। ঘরে ঘরে জ্বলছে বিদ্যুত বা সৌরবাতি। ইউনিয়ন পরিষদের গ-ি পেরিয়ে তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি কড়া নাড়ছে গ্রামের ঘরে ঘরে। প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে উত্তরবঙ্গের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। উত্তরবঙ্গের মানুষকে দশ বছর আগে ‘মফিজ’ বা ‘মফস্বল ফিরতি জনতা’ বলা হতো। অবশ্য কিছু নির্বোধ মুনাফাভোগী ‘মফিজ’ শব্দটি পণ্যের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গের মৌসুমী বেকারদের ব্যঙ্গ ও হেয় করে উপস্থাপন করেছিল। মফিজ ও ‘মঙ্গা’ মুক্ত উত্তরবঙ্গের কর্মঠ মানুষরা ‘কার্তিক’ মাসের ‘মফিজ’ গ্লানি থেকেও মুক্ত আজ। উত্তরের আরও উন্নয়নে শুরু হয়েছে রংপুর বিভাগের নীলফামারী পর্যন্ত পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের কর্মযজ্ঞ। স্থাপিত হয়েছে কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের বেড়েছে পরিসর। কর্মসংস্থান পেয়েছে এখানে ৩২ হাজার নারী পুরুষ।
×