ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী শ্রমিক নেবে জাপান

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

বিদেশী শ্রমিক নেবে জাপান

জাপানে বিদেশী শ্রমিক নেয়া সহজ করার লক্ষ্যে শনিবার একটি বিল পাস হয়েছে। দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা হ্রাস কর্মক্ষেত্রে শ্রমশক্তির ঘাটতি দেখা দেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কৃষি, নার্সিং, নির্মাণ, হোটেল ও জাহাজ নির্মাণের মতো এখন বিদেশী শ্রমিকদের জন্য দরজা খুলছে। বিবিসি ও ইয়াহু নিউজ। জাপান দীর্ঘদিন ধরে কর্মক্ষেত্রে বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ না করার নীতি অনুসরণ করে এসেছে। এখন আইন সংশোধনের ফলে এপ্রিল থেকে শ্রমিকরা নির্মাণ, কৃষি ও নার্সিং খাতে যোগ দিতে পারবে। খসড়া আইন অনুযায়ী, যেসব খাতে শ্রমিক স্বল্পতা রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সেখানে কাজ করার জন্য বিদেশী দক্ষ শ্রমিকদের পাঁচ বছরের জন্য ভিসা দেয়া হবে। যেসব বিদেশী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে অধিক দক্ষতা প্রদর্শন করবে এবং জাপানী ভাষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের পরিবার নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ দেয়া হবে। একই সঙ্গে তাদের জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাসেরও অনুমোদন দেয়া হবে। নতুন আইনে দক্ষতার ভিত্তিতে দুটো ক্যাটাগরিতে ভিসা পাবে শ্রমিকরা। অদক্ষ শ্রমিকরা প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছর মেয়াদী ভিসা পাবে। দক্ষ শ্রমিকরা যে ক্যাটাগরিতে ভিসা পাবে তাতে তাদের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ থাকবে। জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে শনিবার বিলটি ১৬১-৭৬ ভোটে পাস হয়। এর আগে গত সপ্তাহে বিলটি পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষে পাস হয়। জাপান ঐতিহ্যগতভাবে অদক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে বিষয়ে বেশ সতর্ক। দেশটিতে অধিক দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশী পেশাজীবীদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতির হার এখনও বেশ সীমিত। কিন্তু বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এত বেড়েছে যে আইন পরিবর্তন করে ঘাটতি শ্রমিকের সংখ্যা পূরণ করতে হচ্ছে। বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইন পরিবর্তন করা হলে দেশটি বিদেশী শ্রমিকের ঢল নামবে। নয়া ব্যবস্থায় জাপানে প্রায় ৩ লাখ বিদেশী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সরকারও চলমান অভিবাসী নীতির আমূল পরিবর্তন চায় না। একই সঙ্গে তারা অধিক অভিবাসীর দেশ হয়ে ওঠারও বিরোধী। কারণ জাপান কখনই বিদেশী শ্রমিকনির্ভর দেশ ছিল না। ব্যবসায়ী শিল্পোদ্যোক্তারা অনেকদিন ধরেই বিদ্যমান অভিবাসী আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে এসেছেন। দেশটিতে নারীদের সন্তান জন্মদান হার ১৯৭০- এর দশকে যেখানে ২.১ তা এখন কমে ১.৪ এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের যে কয়টি দেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু অনেক বেশি তার মধ্যে জাপান অন্যতম (৮৫.৫ বছর)। অন্যদিকে দেশটিতে জনসংখ্যা প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ জনসংখ্যা কমছে। দেশটির ২৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ৬৫ বছরের ওপর। বিরোধী রাজনীতিকদের অভিযোগ নতুন করে বিদেশী শ্রমিক আসার ঢালাও সুযোগ না দিয়ে বিদ্যমান আইনটি নতুন করে পর্যালোচনা করা হোক। কারণ বিদ্যমান আইন অনুসারে একজন শ্রমিককে অনেক দীর্ঘসময় কাজ করতে হয়। নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে বিদেশী শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আরও বেশি করে ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। কম দক্ষ শ্রমিকদের অবশ্যই জাপানী ভাষা পরীক্ষায় পাস করতে হয় এবং তাদের পরিবার পরিজনকে নিয়ে আসার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে দেশটিতে ব্যবসার রীতিগুলো একটি বাধা। ছাত্র বা ট্রেইনি ভিসায় যাওয়া বিদেশীদের নানাভাবে শোষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠানে মেধার চেয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হয় এবং যেসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘসময় ধরে কাজ করাটাই রেওয়াজ সেসব প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
×