ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়ায় কারাগার থেকে জঙ্গী রিক্রুট

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ইন্দোনেশিয়ায় কারাগার থেকে জঙ্গী রিক্রুট

ইন্দোনেশিয়ায় কারাগারগুলো জিহাদীদের রিক্রুট করার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জিহাদীরা কারাগার থেকে অবাধে রিক্রুট করতে ও সংগঠিত করতে পারছে। ইন্দোনেশিয়ায় ৪৭৭টি কারাগার আছে। সেগুলোর বন্দী ধারণ ক্ষমতা সোয়া লাখ। অথচ ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দী সেগুলোতে ঠাসাঠাসি অবস্থায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে কয়েদি ও হাজতী মিলে আছে ২ লাখ ৫৪ হাজার। দক্ষিণ কালিমান্টান প্রদেশের একটি জেলখানায় ৩৬৬ বন্দী রাখার জায়গায় রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪৫৯ জন। ৯ বর্গমিটারের একটি সেলে যেখানে ৩ জন বন্দী রাখার কথা সেখানে ১৫ জন বন্দী প্রায়শই রাখা হচ্ছে। এ রকম ঠাসাঠাসি কারাগারগুলোতে আবার ঘুষ-দুর্নীতিরও ডালপালা মেলে বিস্তৃত হচ্ছে। ঘুষ দিয়ে কোন কোন সেলে এসি, ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি ও প্রাইভেট বাথরুমেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জিহাদীরাও এর সুযোগ নিয়ে জঙ্গী রিক্রুট করতে পারছে। আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি এই সেদিন পর্যন্ত তাঁর সেল থেকে জঙ্গী প্রচারাভিযান চালাতে পেরেছিল। ইসলামিক স্টেট (আইএস)এর প্রচারমূলক বইপত্র থেকে সে ১১৫টি নিবন্ধ ইন্দোনেশীয় ভাষায় অনুবাদ করে অনলাইনে আপলোড করেছিল। জেল থেকেই সে সিরিয়া যুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভলান্টিয়ার রিক্রুট করেছিল। জাকার্তার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইপাকের ভাষায় আবদুর রহমান ইন্দোনেশিয়ায় আইএসএর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রচারকে পরিণত হয়েছিল ২০০২ সালে বালিতে এক বোমা বিস্ফোরণে দুই শতাধিক নারী-পরুষ-শিশু নিহত হয়েছিল। সে ঘটনার মূল হোতা বর্তমানে ফাঁসিতে ঝোলার অপেক্ষায় থাকা আবু বকর বশিরের সঙ্গে আবদুর রহমানের বন্ধুত্ব কারাগারেই হয়েছিল। ২০১৬ সালে জাকার্তায় সিভিলয়ানদের ওপর হামলায় জড়িত একজন জঙ্গী একসময় কারাগারে ছিল এবং সেখানেই সে জিহাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়। আবু হুসনা হল আরেক ব্যক্তি যে কারাগারে থেকে সন্ত্রাসবাদ সংঘটিত করেছিল। ইন্দোনেশিয়ায় আইএসের সমর্থক দুটি প্রধান উপদলের একটির নেতৃত্বে রয়েছে এই হুসনা। অপরটির নেতৃত্বে আবদুর রহমান। হুসনা এক সময় বশিরের সঙ্গে একই সেলে বন্দী জীবন কাটিয়েছিলেন। আচেহ প্রদেশে জিহাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে আগে অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় করে দিতেন বাইম মাত্তলানা। সেখানকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি কারাগারের কিছু কিছু অংশ আবু হুসনা ও তাঁর সঙ্গী আইএস সমর্থকরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করত তার বর্ণনা দিয়েছেন বাইম মাওলানা। তিনি জানান সেই নিয়ন্ত্রিত অংশগুলোর মধ্যে এক পর্যায়ে রান্নাঘরও ছিল। আবু হুসনা একদিন কারাগারে বাইম মাওলানাকে দাওয়াত দেন এবং তার পক্ষে কাজ করতে বলেন। ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস বিল্ডিংয়ের তৌফিক আন্দ্রাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী কারাগারে সন্ত্রাসবাদী বন্দীদের নৈতিকতার স্তরগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্তরে স্থান দেয়া হতো। অন্য বন্দীরা তাদের অন্য অপরাধীদের তুলনায় জ্ঞানী-গুণী বলে গণ্য করে থাকে। তারা এদের কাছে মাদ্রাসার ইমামের মতো এবং কারাগারে বন্দীদের মধ্যে এদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। ২০০৯ সালে জাকার্তায় এক হামলায় ব্যবহৃত বোমা তৈরিতে সাহায্যকারী আমীর আবদুল্লাহর দেয়া তথ্য অনুযায়ী জিহাদী বন্দীরা অন্য বন্দীদের নিয়ে একত্রে নামাজ আদায় করত এবং তাদের পাপের প্রায়শ্চিও করার কথা বলত। আমীর আরও জানায় যে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয় তখন তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সে আল্লার পথে কাজ করছে এবং কারাগারেও তাঁকে মর্যাদা দেয়া হবে। উগ্রপন্থীদের জেলখানায় আলাদা করে রাখা হলে অন্য বন্দীদের মধ্যে ব্যারিকেড ভাবধারা ঠেকানো যেতে পারত। কিন্তু মাঝারি মানের নিরাপত্তা আছে এমন কারাগারে কিংবা যেসব জেলে হাজতীরা বিচারের অপেক্ষায় থাকে সেখানে এটা সম্ভব নয় বলে এক কারা কর্মকর্তা বলেন। ২০১৬ সালে আমানকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। তার আগ পর্যন্ত ভক্ত-অনুসারীরা তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে পারত। এ ধরনের দেখা-সাক্ষাতের সময় অনুসারীদের বিভিন্ন নির্দেশ দেয়া হতো এবং এভাবেই মে মাসে সুরাবায়ায় গির্জা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×