ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্য নিয়ে বিপাকে দুই সিটি কর্পোরেশন

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 বর্জ্য নিয়ে বিপাকে দুই সিটি কর্পোরেশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ডাম্পিংয়ের ল্যান্ডফিল মাতুয়াইল ও আমিন বাজার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এটি সম্প্রসারণ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পৃথক প্রকল্পও গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রকল্পগুলো সময়মতো অনুমোদন না হওয়ায় অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে ঢাকার বর্জ্য শোধন নিয়ে। দুই সিটির ল্যান্ডফিল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এতে পাহাড়সম বর্জ্যরে স্তূপ। পরিচ্ছন্নকর্মীরা বর্জ্য অপসারণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফেলোডার ও এস্কেভেটরসহ ভারী যন্ত্রপাতি দিয়েও বর্জ্য অপসারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বর্জ্যরে গন্ধে আশপাশের এলাকার পারিবেশও খারাপ হচ্ছে। দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলটি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আমিন বাজারের তুলায় দ্বিগুণ। এটি ১৯৯০ সালে ৫০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আরও ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ১০০ একরে সম্প্রসারণ করা হয়। এতে প্রতিদিন দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। উত্তর সিটির ল্যান্ডফিলটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৫০ একর জমির ওপর নতুন করে নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। জাপানি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় নির্মিত এই প্ল্যান্টের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এখনও এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চলছে। এতেও প্রতিদিন তিন হাজার টনের কম বেশি বর্জ্য অপসারণ করা হয়। মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে এর আয়তন বাড়ানো হয়নি। ফলে এ ল্যান্ডফিল্ডটি ভরাট হয়ে আশপাশের আরও ২০ একর জমি ভরাট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ভূমি মালিকরা। এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের ল্যান্ডফিলটি ভর্তি হয়ে গেছে। এর পাশে নতুন করে আরও ৮১ একর জমি অগ্রিহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।’ ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক একজন ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘আসলে আমিন বাজারে বর্জ্য ফেলানোর নিরাপদ কোন জায়গা নেই। বর্জ্য ফেলার পর ফেলোডার দিয়ে চাপ দেয়ার পর সেটি উঠানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।’ ডিএসসিসির মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল ২০১৬ সালের মধ্যে ভরাট হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সিটি কর্পোরেশন ভাগ হওয়ায় উত্তরের বর্জ্য এখন আর এখানে ফেলা হয় না। সে কারণে এখনও কিছু জায়গা ফাঁকা রয়েছে। তবে আগামী বছরের মধ্যে ভরাট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে বর্জ্য ডাম্পিংয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৮১.০৯ একর জমি অধিগ্রহণ করছে ডিএসসিসি। কিন্তু নগরীর জনসংখ্যার পাশাপাশি প্রায় দ্বিগুণ আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জায়গাটুকু আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভরাট হয়ে যাবে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, নতুন সম্প্রসারিত ৮১ একরের মধ্যে ৫০ একর ল্যান্ডফিল ও ৩১ একর জায়গা বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। এতে বড় ধরনের একটি দগ্ধকরণ অংশ নির্মাণ করা হবে। এর আবার দুটি পৃথক অংশ থাকবে। একটিতে সাধারণ বর্জ্য এবং অন্যটিতে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য দগ্ধ করা হবে। ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য পোড়ার পর যে নির্যাস থাকবে তা দিয়ে কয়লা জাতীয় দ্রব্য উৎপাদন করা হবে। সেটি ‘বর্জ্য থেকে উৎপাদিত জ্বালানি’ (রিফিউজড ডিরাইভ ফুয়েল) হিসেবে ব্যবহারের কথা রয়েছে। পাশাপাশি এই বর্জ্য দগ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় যে তাপ বা শক্তি উৎপাদন হবে তা থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই অংশ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে। এই বিদ্যুত উৎপাদনে মালয়েশিয়া, চীন, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র সংস্থাটির কাছে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৯ কোটি টাকা। তবে ভূমি অধিগ্রহণে সরকারী ব্যয় বাড়ায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের ২৮ মার্চ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ অংশটি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের বাকি অংশ একনেক অনুমোদন দিলেই পরামর্শক নিয়োগ দেবে ডিএসসিসি।
×