ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় ইনিংসেই এলোমেলো ব্যাটিং

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

দ্বিতীয় ইনিংসেই এলোমেলো ব্যাটিং

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ইনিংসে কি সুন্দর ব্যাটিং করল বাংলাদেশ। প্রথমদিনই ৩১৫ রান তুলে ফেলে। শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ৩২৪ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ব্যাটিং উধাও হয়ে যায়। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৫ উইকেট নেয়া নাঈম হাসানের অসাধারণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানেই অলআউট করা গেছে। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের এলোমেলো ব্যাটিং দেখা মেলে। ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যুক্ত হন। তাতে করে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রান করতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়দিন শেষ হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে ৫৫ রান যোগ হয়। তাতে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ১৩৩ রানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সব ঠিকমতোই চলছিল। প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটি বাংলাদেশের হয়ে যায়। মুমিনুল হকের ১২০ রানের অসাধারণ ইনিংসে প্রথমদিনই ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান করে বাংলাদেশ। ২ উইকেট বাকি ছিল। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা নাঈম হাসান (২৪*) ও তাইজুল ইসলাম (৩২*) ব্যাট হাতে ছিলেন। দুইজন মিলে নবম উইকেটে ৫৬ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয়দিন আর ২ রান যোগ করেই আউট হন নাঈম। আর তাইজুল ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। মুস্তাফিজুর রহমান রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান। দিনের শুরুতেই মাত্র ৫ ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়। প্রথমদিনের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে আর ৯ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। এরপর ব্যাট হাতে নেমে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজও বিপদে পড়ে। ২৪৬ রানেই অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে ৭৮ রানে পিছিয়ে পড়ে। পাঁচ উইকেট নেয়া নাঈম হাসান ও ৩ উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি জাদুর সামনে এমনই বিপর্যস্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা, ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। ৮৮ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন মনে হচ্ছিল, ১৫০ রানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকে রাখা যাবে। কিন্তু হেটমায়ারা ও ডওরিচ মিলেই স্কোরবোর্ড বাড়িয়ে তুলেন। ষষ্ঠ উইকেটে দুইজন মিলে ৯২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। নাঈম, সাকিব, ১ উইকেট করে নেয়া তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন ফাঁদে যেখানে প্রত্যেকেই পড়েন সেখানে হেটমায়ার ও ডওরিচ উল্টো পথে হাঁটেন। নিজেরাও এগিয়ে যান। দলকেও এগিয়ে নিয়ে যান। হেটমায়ার ৬৩ রান করেন। ডওরিচও একই রান করেন। তবে শেষ পর্যন্ত থাকেন অপরাজিত। ১৮০ রানে গিয়ে হেটমায়ারকে আউট করে দিয়ে মিরাজ স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ২৪৬ রান করতে পেরেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এমন রানে আটকে রাখার পেছনে আসলে স্পিনাররা মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তবে বিশেষ করে নাঈমের কথা বলতেই হয়। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নিয়ে যে বিশ্বরেকর্ডই গড়ে ফেলেন এ অফস্পিনার। ১৪ ওভার বল করে ২ মেডেনসহ ৬১ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন নাঈম। ১৮ বছরে পা দিতে এখনও ৯ দিন বাকি তার। এরই মধ্যে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখে ফেললেন নাঈম। সাকিব, তাইজুল, মিরাজদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে একটু অপেক্ষা করতে হয়েছে নাঈমকে। ২৫ ওভারের পরে বোলিং করার সুযোগ পান। তবে টপাটপ ৫টি উইকেট শিকার করতে দেরি করেননি। রোস্টন চেইসকে ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের স্বাদ নেন। এরপর থেকে এক এক করে সুনীল আমব্রিস, দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ ও সর্বশেষ জেমস ওয়ারিক্যানকে সাজঘরে ফেরান। এর আগে অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন প্যাট কামিন্স। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৯ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার। বয়স ছিল ১৮ বছর ১৯৩ দিন। নাঈম সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক ইনিংসেই ৫ উইকেট নিলেন। বাংলাদেশের হয়ে শুধু অভিষেকে নয়, সবমিলিয়েই সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড এটিই। রেকর্ডটি এতদিন ছিল এনামুল হক জুনিয়রের। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ৪৫ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনারের বয়স ছিল ১৮ বছর ৩২ দিন। সবমিলিয়ে অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়া বাংলাদেশের অষ্টম বোলার নাঈম। নাঈমের প্রশংসাই চতুর্দিকে। কিন্তু সেই প্রশংসা যখন মিলছে, তখন ব্যাটসম্যানরা এ কী করলেন! আত্মঘাতী সব শট খেলেন। স্পিন ধরছে। তা দেখেও নিজেদের সামলে রাখতে পারলেন না। একের পর এক ভুল শটে ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুন দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন। বাংলাদেশের ৫ উইকেট পড়ায় একদিনেই ১৭ উইকেট পড়ে। উইকেটে যে বল কি অসাধারণভাবে ঘুরছে। তার সুফল বাংলাদেশ ভালভাবেই নিয়েছে। সুফল পাচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনাররাও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১০ উইকেটই যেমন বাংলাদেশ স্পিনাররা নিয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশের পড়া ৫ উইকেট নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনাররা। এখন মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে (১১*) মিরাজ আছেন। আজ তৃতীয়দিনে দুইজন ব্যাট হাতে নামবেন। মুশফিক, মিরাজের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। এ দুইজন যদি হাল ধরতে না পারেন তাহলে বাংলাদেশের ঘাড়েই বিপদ ধরা দিতে পারে। প্রথমদিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করায় যেখানে স্বপ্ন বড় করে দেখা হচ্ছিল, সেখানে দ্বিতীয়দিনই সেই স্বপ্ন ধোঁয়াশা হতে শুরু করে দেয়। টার্গেট ২৫০ রান না হলে বিপদই সামনে চলে আসতে পারে।
×