ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মনীষার ক্যান্সার জয়ের গল্পে মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১১ নভেম্বর ২০১৮

মনীষার ক্যান্সার জয়ের গল্পে মুগ্ধ শ্রোতা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ আধ্যাত্মিক গানের সুরে শুরু হয় উৎসবের সকালটা। কবিতা আবৃত্তিতে পরিপক্ব হয়েছে সেই হেমন্ত প্রভাত। এরপর মনীষা কৈরালার ক্যান্সার জয়ের গল্পে আলোড়িত হয়েছে ঢাকা লিট ফেস্ট। মুগ্ধ হয়ে শ্রোতারা শুনেছে বলিউড অভিনেত্রীর অপ্রতিরোধ্য মানসিক শক্তির কথা। শনিবার আন্তর্জাতিক সাহিত্যাসরের সমাপনী দিনটি স্মরণীয় করে রাখলেন এই বলিউড অভিনেত্রী। বিকেলে সাহিত্য রসিকদের মোহাবিষ্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথোপকথন। এছাড়া সকাল থেকে রাত অবধি কবিতা আবৃত্তি, লেখকের স্বাধীনতা, বাংলা সাহিত্যে নারী ও পুরুষ শীর্ষক নানা অধিবেশনে শেষ হয়েছে তিন দিনের সাহিত্য উৎসব। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মনীষা কৈরালার ক্যান্সার জয়ের গল্প ॥ উৎসব আঙিনা বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে হিল্ড শীর্ষক অধিবেশনে অংশ নেন মনীষা কৈরালা। উৎসব পরিচালক সাদাফ সায় সঞ্চালিত আলোচনায় মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন মনীষা। শ্রোতায় পরিপূর্ণ মিলনায়তনে সবাইকে বাকরুদ্ধ করে শোনালেন, কেমন করে মৃত্যুকে পরাজিত করে জয় করে নেয়া যায় জীবনকে। সেই সঙ্গে বলেছেন, বহিরাগত হয়েও কেমন করে জায়গা করে নিলেন বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। আলাপচারিতায় মনীষা ফিরে যান ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর। বলেন, সেদিন মৃত্যু আমার দুয়ারে কড়া নাড়ে। কিন্তু আমি মরতে চাইনি। আমি চোখ বন্ধ করেছিলাম, চোখ মেলে দেখি কালো হয়ে আসছে আমার আকাশ। নিজেকে আশ্বস্ত করলাম, এর মধ্য দিয়েই যেতে হবে আমাকে। এক সময় জানতে পারলাম আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৪৪ শতাংশ, উল্টোপিঠে মৃত্যুর ঝুঁকি ৫৬ শতাংশ। আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। সবকিছু যেন থমকে গেল। তবে অসহনীয় শারীরিক যাতনার মধ্যেও হাল ছাড়িনি। ঝাঁপিয়ে পড়লাম জীবনযুদ্ধে। দৃঢ়চেতা কণ্ঠে মনীষা বলে যান, প্রথমে হাসপাতাল থেকে কেউই আমাকে কিছু জানাচ্ছিল না। একপর্যায়ে দেখলাম পরিবারের সবাই এসে হাজির হলো হাসপাতালে। সবার মুখে ভয় দেখলাম। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। শুরুতে চিকিৎসকরাও কিছু জানাচ্ছিল না। একপর্যায়ে পরীক্ষা করার পর জানানো হলো, লিড স্টেজে ছড়িয়ে পড়েছে আমার ক্যান্সার। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম চিকিৎসকের দিকে। এক সময় বলা হলো, আমার জরায়ুর ক্যান্সার হয়েছে এবং সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। আমি সন্তানের মা হতে চেয়েছিলাম। তখন উপলব্ধি হলো, আমি কখনও মা হতো পারব না। এভাবেই আমার জীবনের নিঃসঙ্গ রাত শুরু হলো। সেই সঙ্গে শুরু আমার ভয়ঙ্কর দিনগুলো। কথা বলতে বলতে মনীষার চোখের কোল গড়িয়ে ঝড়ে পড়ে বেদনার অশ্রুজল। চিকিৎসা পর্ব নিয়ে মনীষা বলেন, আমার বন্ধু, পরিবার সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো কোথায় আমার অপারেশন করবে। কেউ বলল যুক্তরাষ্ট্র, কেউ ব্যাংকক, কেউবা মুম্বাই। ক্যান্সার চিকিৎসায় অনিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে মনীষা বলেন, মুম্বাইয়ের চিকিৎসকরা যখন বলল এই সার্জারি খুবই কমপ্লিকেটেড তখন শুভাকাক্সক্ষীদের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য গেলাম যুক্তরাষ্ট্রে । ক্যান্সার চিকিৎসা অনেক অনিশ্চয়তার বিষয়। শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। এই নিয়ে আমার ‘হিল্ড’ শীর্ষক বইয়ে একটা চ্যাপ্টার আছে, নাম ‘ইন্তেজার’। ক্যান্সার চিকিৎসায় কয়েকটি ধাপ আছে। প্রথমত, অপারেশন সফল হতে হবে। দ্বিতীয়ত অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা যথাযথ হতে হবে। সেই সঙ্গে আছে কেমোথেরাপি। সব চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি বাঁচব এখন? ছয় মাসে ক্যান্সার নিরাময় হওয়ার পর বলল, পুরোপুরি সুুস্থ হতে তিন বছর পর্যন্ত সময়। সেই সময় পার হওয়ার পরও চিকিৎসক বলল, ক্যান্সার বেড়ে ওঠার ৯০ শতাংশ চান্স আছে। কিন্তু আমি কখনও মনে করিনি আমাকে অল্প কিছুদিন বাঁচতে হবে। এ সময় মনীষা তার লেখা বইয়ের কয়েকটি লাইন তুলে ধরে বলেন, ক্যান্সার আমাকে বদলে দিয়েছে। আমি ভেতর থেকে বদলে গেছি। আমার পৃথিবীও বদলে গেছে। আমি জীবনকে উপভোগের দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছি। তাই মরতে চাই না। এক অর্থে ক্যান্সার আমার জীবনের শিক্ষক। এটাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। এই রোগ থেকে জীবনের মূল্য বুঝেছি। একই সঙ্গে নিজেকে কঠিন ও মজবুতভাবে তৈরি করতে শিখেছি। এখন জীবনটাকে ভালবাসার উপহার বলে মনে হয়। লাইফ ইজ ফুল অব পজেটিভ স্টোরিজ। কথোপকথনে বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামী অধ্যায়টিও উন্মুখ শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন মনীষা। বলেন, নেপালী হওয়ায় এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শুরুর দিকে বহিরাগত হিসেবে বিবেচিত হতাম। পাড়ি দিতে হয়েছে কঠিন একটা পথ। নার্ভাসনেস কাজ করত। কারণ, স্কুল ছেড়ে যোগ দিয়েছিলাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। নাচ করা থেকে ঘোড়া চালানোÑএমন অনেক কিছু শিখতে হয়েছে। সেই শরীরের ধকল নেয়াটাও রপ্ত করতে হয়েছে। কারণ, কখনও টানা ১৮ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়েছে। শুধু ইচ্ছাশক্তির জোরেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি বলিউডে। সুভাষ ঘাইয়ের সওদাগর ছবির মাধ্যমে বলিউডে আমার অভিষেক হয়। আমার জন্য ইতিবাচক বিষয় ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু ভাল নির্মাতা ও শুভাকাক্সক্ষী পেয়েছিলাম। এছাড়া চলচ্চিত্রে যুক্ত হতে গিয়ে প্রথম প্রতিবন্ধকতা এসেছিল পরিবার থেকে। সে সময় শুধু মা ছিলেন আমার পাশে। অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, তুমি যদি ঘাস কাটো সেখানেও তোমাকে সেরা হতে হবে। আমি সেটাই করেছি। সংসদ নির্বাচনে কোন উত্তাপ নেইÑ অর্থমন্ত্রী ॥ লিট ফেস্টের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সমাপনী বক্তব্যে আগামী সংসদ নির্বাচন কোন উত্তাপ নেই বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিল্ডা সুইন্টন ও উৎসব পরিচালক সাদাফ সায়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতন আছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাতাস আমরা সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের পালে লাগতে দেই না। নির্বাচন আমাদের খুব সন্নিকটে, পরিবেশ খুব ভাল এবং শান্ত। যারা এখানে বিদেশী অতিথি এসেছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা কি বুঝতে পেরেছেন যে দেশে ইলেকশন সামনে? দেয়ার ইজ নো ইলেকশন ফিভার, এ্যান্ড ইট ইজ গুড। এর মানে হলো আমরা ভাল আচরণ করছি এবং ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে ৭১ কবিতা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে গল্পকার থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় লেখা কবিতার সংকলন ‘পিস এ্যান্ড হারমনি : সেভেন্টিওয়ান পোয়েমস ডেডিকেটেড টু শেখ হাসিনা’। কাব্যগ্রন্থটি নিয়ে কসমিক টেন্টে আলোচনা করেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, মুহাম্মদ সামাদ, কামাল চৌধুরী, আবুল আজাদ, সংকলনের সম্পাদক আহমেদ রেজা, সংকলনের ইংরেজী অনুবাদক আনিস মুহাম্মদ প্রমুখ। রফিকুল ইসলাম বলেন, কবিতা সবাইকে নিয়ে লেখা যায় না, সব বিষয় নিয়েও লেখা যায় না। কিন্তু পদ্য লেখা যায়। পদ্যে শব্দের অর্থ আক্ষরিক নয়, কিন্তু কবিতায় শব্দের অর্থ আক্ষরিক। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায়ও কবিতা লেখা হয়েছে তাকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যখন তার নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ ছিল তখনও একজন কবি তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। তিনি হচ্ছেন নির্মলেন্দু গুণ। সুতরাং আমাদের দেশের কবিদের নিয়ে যতই হাসি-ঠাট্টা, তামাশা করি না কেন, আমাদের দেশের কবিরা জাতির দুঃসময়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান। সাহিত্যে ‘মিটু’ আন্দোলনের প্রভাব ॥ সাহিত্যে ‘মিটু’ আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে ‘নো নোবেল : মি টু ইন লিটারেচার’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জার্মান লেখক ওলগা গ্রাসনোয়া, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক অধ্যাপক ফিলিপ হেনশার, ব্রিটিশ লেখক রিচার্ড বিয়ার্ড, আমেরিকান লেখক রস পটার এবং ভারতীয় লেখক ও সমাজকর্মী হিমাঞ্জলি শংকর। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অধিবেশনটিতে সঞ্চালক ছিলেন ভারতীয় লেখক চন্দ্রবিভাস চৌধুরী। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার স্থগিতের প্রভাব নিয়ে বক্তারা বলেন, সুইডিশ একাডেমির এই পদক্ষেপ তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সাহায্য করবে। নোবেল পুরস্কার ও তাদের কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে এই আন্দোলনের ফলের ওপর। আগে অনেকেই কণ্ঠস্বর না তুললেও এখন সবাই কণ্ঠস্বর তুলছে। ব্যক্তি ও শিল্পকে আলাদা করা যায় তার কাজের ভিত্তিতে। যদি কোন পুরুষ তার কাজের ক্ষেত্রে কোন নারীকে হয়রানি করেন, তাহলে সেটা সাহিত্যের ক্ষেত্রে হোক কিংবা সাধারণ মানুষের জীবনেই হোক, সোচ্চার হওয়া জরুরী- এমন কথাই বলেন বক্তারা। ‘প্যারাসাইটস লাইক আস’ ॥ পুলিৎজারজয়ী সাহিত্যিক এ্যাডাম জনসনের প্রথম উপন্যাস ‘প্যারাসাইটস লাইক আস’। এ শিরোনামে আলোচনা করেন অ্যাডাম জনসন ও ফিলিপ হেনশার এক হন। সঞ্চালনায় ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক মন্ময় জাফর। এ্যাডাম জনসন বলেন, সাহিত্যের অঙ্গনে ফিকশনই একমাত্র জনরা যেখানে প্রাণ খুলে সব কথা বলে ফেলা যায়। আর ব্যক্ত এই কথাগুলো বলা হয় অন্য কারো কণ্ঠে। সবচেয়ে মজার বিষয়টি হলো, পাঠক যখন এই লেখা পড়েন তখন ওই কণ্ঠটিকে নিজের কণ্ঠ হিসেবেই মনে করেন। ফিলিপ হেনশার এফ হন বলেন, কোন সাহিত্যিক একজন সাধারণ মানুষের মতোই সমাজের বিভিন্ন স্তর প্রত্যক্ষ করেন। সব মানুষের মতো এই ঘটনাগুলোর আতিশয্য তাকেও নাড়া দেয়। সেই চরম বাস্তবতাই সাহিত্যিক তুলে আনেন ফিকশন নামের ‘মুখোশ’ পরিয়ে। ভাষার বৈচিত্র্যবিষয়ক আলোচনা ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এবং লিঙ্গুইস্টিকস সার্ভে অব বাংলাদেশের যৌথ গবেষণায় প্রকাশিত হতে যাওয়া ২০ খ-ের ভাষা বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ নিয়ে ভাষার বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলেন কবি কামাল চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ আলী এবং ভাষা গবেষক সৌরভ শিকদার। এ আলোচনার সূত্রধর ছিলেন গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গর্গ চট্টপাধ্যায়। বক্তারা বলেন, ভাষা আসলে কল্পনার মাধ্যম, তাই একটি ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে মানব সমাজের পৃথিবীকে দেখার একটি দৃষ্টিকোণ হারিয়ে যায়। কোনোভাবেই ভাষাকে হারিয়ে যেতে দেয়া হবে না। প্রথমে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ করে চর্চা ও প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে। ‘এখনও কেন কবিতা’ ॥ এখনও কেন কবিতা’ শিরোনামের আলোচনায় অংশ নেন কবি আসাদ চৌধুরী, রুবি রহমান, পশ্চিমবঙ্গের সুমন গুণ এবং ড. নিখিলেশ রায়। সঞ্চালনা করেন কবি শামীম রেজা। আসাদ চৌধুরী বলেন, কবিতা আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই আছে। মানবমুক্তির শাশ্বত পথ হলো কবিতা। একমাত্র কবিতাই শেষ পর্যন্ত পথ দেখায়। মানবতার কোন অবমাননা কবিরা মেনে নেন না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তৈরির পরিস্থিতি যদি হয় কবিতাই তা ঠেকাবে। যতদিন জড়া-ক্লান্তি-ভয় থাকবে, ততদিন টিকে থাকবে কবিতা। ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখে কবিতা। অন্যান্য অধিবেশন ॥ সকাল দশটায় উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছিল আসলাম সানীর সঞ্চালনায় ‘কিশোর মনন ও আবৃত্তি’। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল সম্পাদনা নিয়ে রিচার্ড বেয়ার্ডের পরিচালনায় কর্মশালা। কসমিক টেন্টে ছিল ‘মুভিং পিকচারস এ্যান্ড বর্ডার’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন সাল ইমাম। আলোচনা করেন প্রবার রিপন ও সাবাহাত জাহান। নজরুল মঞ্চে বাচ্চাদের বিভা সিদ্দিকী শোনান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ গল্প। বেলা সাড়ে বারোটায় কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিল ‘ডেডলি লিগাসি অব ইন্ডিয়াস পার্টিসন’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে মাহ্্রুখ মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন নিশিদ হাজারি। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছিল ‘বাংলা সাহিত্য : নারী ও পুরুষ’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন শামীম রেজা। আলোচনা করেন সেলিনা হোসেন, সালমা বানী, শাহনাজ মুন্নী ও অদিতি ফাল্গুনী। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল স্যালি পমির শিশুতোষ পরিবেশনা ‘দ্যা কিং উইথ ডার্টি ফিট’। কসমিক টেন্টে ছিল এ কে রহিমের গবেষণামূলক পরিবেশনা ‘দ্য রোহিঙ্গা : এ লিঙ্গুস্টিক হিস্টোরি’। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন সারাহ্্ মজুমদার। দুপুর পৌনে দুইটায় কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিলো ‘টেকনোলজি এ্যান্ড দ্য ফিউচার’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে রুবায়েত খানের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন ডেভিড বিয়েলো। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ‘রিবেল, রোল মডেল’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে মুনিজে মানজুরের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন জয়শ্রী মিশ্র। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল ‘টেলস অব এন আর্ট লাভার’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন ফকরুল আলম। আলোচনা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, সৈয়দ মনজরুল ইসলাম ও খুশি কবির। বিকেল সোয়া তিনটায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ও লেখিকা টিল্ডা সুইন্টনের ‘অন ড্রামদোয়ান হিল’ শিরোনামে কথোপকথন। তার সঙ্গে অংশ নেন উৎসবের অন্যতম পরিচালক আহসান আকবর। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছিল কবিতা পাঠের আসর ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন হাসান মাহমুদ। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল ‘পেন : লেখকের মুক্তি, লেখার স্বাধীনতা’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন উদিসা ইসলাম। আলোচনা করেন কুমার চক্রবর্তী, আখতার হোসেন ও মুম রহমান। বিকেল সাড়ে চারটায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল ‘রাইটস ইন দ্যা এইজ অব ফেক নিউজ’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন চন্দ্রহাস চৌধুরী। আলোচনা করেন ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, আফসান চৌধুরী, হুগো রেস্টল ও এ্যানি জায়েদি। কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিল ‘আফটার দ্য ফল’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন কেলি ফকনার। আলোচনা করেন ওলগা ওজানোয়া, আরিফ আনোয়ার ও অ্যানি জায়েদি। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছিল ‘ছয় নারী’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন জ্যাকি কবির। অংশ নেন ফরিদা হোসেন, শাহনাজ মুন্নী, জাহানারা পারভীন, আফরোজা সোমা ও সাকিরা পারভীন। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল পাঠের আসর। যাতে অংশ নেন রুমানা হাবীব ও ডোমিনিকং গোমেজ। কসমিক টেন্টে ছিল ‘রোহিঙ্গা : সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স টেস্টিমোনিস’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে সঞ্চালনা করেন উৎসবের অন্যতম পরিচালক সাদাফ সায। আলোচনা করেন রাজিয়া সুলতানা, শিরিন হক, গুয়েন রবিনসন ও মারিয়াম মোল্লা। তিনি নারী বাউল ফকির আকলিমা, কোহিনূর আক্তার গোলাপি ও সূচনা শেলীর পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় ঢাকা লিট ফেস্টের অষ্টম আসর। কথাসাহিত্যিক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশসহ ১৫ দেশের তিন শতাাধিক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অভিনয়শিল্পী, চিন্তাবিদ, গবেষক। যাত্রিক আয়োজিত উৎসবের সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি। এবারের উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলো ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউন। সহপৃষ্ঠপোষক ছিল ব্র্যাক ব্যাংক।
×