ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গভীর সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১১ নভেম্বর ২০১৮

গভীর সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা

গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙ্গে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর ফলে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও দুমাস দীর্ঘ হলো। এএফপি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সিরিসেনা শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার পর শনিবার ৫ জানুয়ারি নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। বিরোধীরা তার এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছে। সিরিসিনা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে রনিল বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে তার জায়গায় সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে বসান। রাজাপাকসে পর্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবেন না নিশ্চিত হওয়ার পর সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন। বিক্রমাসিংহে তার পদ ছাড়তে অস্বীকার করেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য লড়ে যাচ্ছেন। এসব ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ বেড়েছে। দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সিরিসেনা শুক্রবার এক ডিক্রী বলে ২২৫ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন। এরপর নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ের দুই বছর এগিয়ে ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। যেকোন ধরনের বিদ্রোহের আশঙ্কায় তিনি পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছেন। এ বিষয়ে বিক্রমাসিংহের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে তার ইউনাউটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) টুইটারে এক বিবৃতিতে একে অবৈধ ও সংবিধান বিরোধী বলে মন্তব্য করেছে। বিবৃতিতে দলটি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। কোন প্রধানমন্ত্রী বৈধ এ বিষয়ে পার্লামেন্টকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সিরিসেনা চাপের মুখে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ এ বিষয়ে তাকে অব্যাহত চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। নিজেকে ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে বিক্রমাসিংহে সিরিসেনার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। সংবিধান অনুসারে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি ছাড়া প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারেন না। পার্লামেন্টে ভোট হলে বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো যাবে না। কারণ সিরিসেনার দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম এ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) ও রাজাপাকসের দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির মিলিত আসনের সংখ্যা ৯৫ এবং বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপির আসন সংখ্যা ১০৬। সমর্থন বেশি থাকায় ভোটাভুটিতে বিক্রমাসিংহের পক্ষে ভোট বেশি পড়বে। পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার তাৎক্ষণিক সমালোচনা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, ‘এর ফলে রাজনৈতিক সঙ্কট আরও জটিল হবে। শ্রীলঙ্কার একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগী হিসেবে আমরা মনে করি স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতির প্রতি সম্মান দেখানো প্রয়োজন।’ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড বিবৃতিতে পার্লামেন্ট বহাল করে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য কলম্বোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরীক্ষা এড়ানোর জন্য সিরিসেনা নির্বাচন পর্যন্ত কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৭ জানুয়ারি নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন বসবে। ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহের প্রতি এখনও ১২০ জনের সমর্থন আছে, রাজাপাকসেকে পাশে পেতে পারেন বড়জোর ১০৪ জন সদস্যকে। স্পীকারকে নিরপেক্ষ ধরা হলেও তিনি বিক্রমাসিংহে সরিয়ে রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানোর তীব্র সমালোচনা করেছেন।
×