ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবারের মতো দুই মুসলিম ও কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গ নির্বাচিত

কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচন গড়ল নতুন ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৮ নভেম্বর ২০১৮

কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচন গড়ল নতুন ইতিহাস

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রথমবারের মতো দুজন মুসলমান নারী প্রতিনিধি সদস্য পেল। মঙ্গলবারের ভোটে মিনেসোটা ও মিশিগানের ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইলহান ওমর (৩৬) ও রাশিদা তালিবকে (৪২) নির্বাচিত করেছে বলে মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যখন মুসলমানবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই নির্বাচনী বিজয় মাইলফলক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এছাড়া কংগ্রেসে সবচেয়ে কম বয়সী নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ (২৯)। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রতিনিধি হয়েছেন আয়ানা প্রেসলি। খবর এএফপি, সিএনএন ও গার্ডিয়ানের। গৃহযুদ্ধের কারণে সোমালিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া ইলহান ওমর একজন সাবেক শরণার্থী ও তালিব ডেট্রয়েটে জন্মগ্রহণকারী ফিলিস্তিন-আমেরিকান পিতামাতার সন্তান। তারা দুজনেই ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত ইলহান ওমর সোমালিয়া থেকে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। তিনি মিনিসোটা অঙ্গরাজ্যের আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। শিশু বয়সে তিনি চার বছর কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে ছিলেন। দুই বছর আগে যে রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সেই রাতে প্রথম সোমালি-আমেরিকান হিসেবে ওমর দেশটির একটি অঙ্গরাজ্যের আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ওই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প সব মুসলিমের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রথম হিজাব পরা সদস্য হলেন ওমর। অপরদিকে তালিবও ইতিহাসের ধারা পাল্টে দেয়া আরেক নারী। ২০০৮ সালে প্রথম মুসলমান নারী হিসেবে তিনি মিশিগান আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফিলিস্তিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া এক পরিবারের ১৪ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ডেট্রয়েটে তার পিতা ফোর্ড মোটর কোম্পানির একটি প্রকল্পের কর্মী ছিলেন। ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ দুই নারীই ব্যাপকভাবে ডেমোক্র্যাট প্রভাবিত এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ওমর বিরাট ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার সব বাধাকে টপকে গেছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেসে ইতিহাস সৃষ্টি করে পুরনো প্রার্থীদের বাদ পড়ার মাধ্যমে পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভাগুলোতে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ও প্রার্থী হিসেবে জয়লাভের মধ্য দিয়ে পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। নেটিভ আমেরিকান, মুসলমান, লাতিন, অভিবাসী, শতবর্ষী ও সমাজের সবচেয়ে অনগ্রসর গোষ্ঠীর মানুষও প্রার্থী হয়েছেন। তারা তাদের প্রচারাভিযানে ইতোমধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আলেকজান্দ্রিয়া। তিনি প্রগতিশীল প্রতিদ্বন্দ্বী ও ডেমোক্র্যাট দলের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা পোষণকারী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি বলেছিলেন, আমার মতো নারীরা ক্ষমতার জন্য সমর্থন পায় না। এর আগে সর্বকনিষ্ঠ কংগ্রেস সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালে এলিসি স্টিফানিক (৩০) নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সে রেকর্ড ভেঙ্গে দেন আলেকজান্দ্রিয়া। পুয়ের্তোরিকান মা ও ব্রোনক্স বাবার সন্তান হিসেবে তিনি কর্মীশ্রেণীর সমাজে বড় হন। আয়ানা প্রেসলি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী সদস্য হিসেবে ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত হন। তিনি বোস্টন সিটি কাউন্সিল থেকে নির্বাচিত হন। দশবারের প্রতিনিধি মাইকেল কাপুয়ানোকে হারিয়ে তিনি নির্বাচিত হন। প্রথম সমকামী গবর্নর হিসেবে নির্বাচিত হন জারেড পোলিস। কলোরাডো থেকে বামপন্থী নেতা হিসেবে ডেমোক্র্যাট দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। কেট ব্রোন প্রথম হিজড়া হিসেবে ওরেগন থেকে নির্বাচিত হন। তিনি জিম ম্যাকগ্রীভিকে পরাজিত করেন। প্রথম নেটিভ আমেরিকান নারী কংগ্রেস প্রতিনিধি হয়েছেন শেরাইস ডেভিস। প্রথম লেসবানিয়ান প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কানসাস থেকে নির্বাচিত হন।
×