ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাশোগি হত্যার পরও সৌদি যুবরাজের ক্ষমতা সুদৃঢ়

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৭ নভেম্বর ২০১৮

খাশোগি হত্যার পরও সৌদি যুবরাজের ক্ষমতা সুদৃঢ়

সৌদি বিরুদ্ধবাদী জামাল খাশোগির নৃশংস হত্যাকা-ের প্রায় এক মাস হলো। এই হত্যা কেলেঙ্কারি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে অনেক উত্তাপ সঞ্চারিত হলো। অনেক সমালোচনা, ধিক্কার সৃষ্টি হলো। সন্দেহের তীর সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহম্মদ বিন সালমানের দিকে নিক্ষিপ্ত হলো। কিন্তু বিরুদ্ধবাদী খাশোগির হত্যা সৌদি যুবরাজের সুদৃঢ় অবস্থানকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। সৌদি এ সাংবাদিকের হত্যাকা-ের কিছুদিন পর সৌদি আরব জুড়ে এমন গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিল প্রিন্স মোহাম্মদকে বরখাস্ত করা হবে। প্রথম দু’সপ্তাহ সৌদি সরকার থেকে জোর দিয়ে দাবি করা হয় যে খাশোগি নিরাপদে সৌদি কনস্যুলেট ভবন ত্যাগ করেছিলেন। অতঃপর ১৯ অক্টোবর সৌদি সরকার বলে যে শান্ত মেজাজের এই সাংবাদিক হঠাৎ করে ঝগড়া ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং পরিণতিতে তার মৃত্যু হয়। সৌদি মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনাকে জঘন্যতম ধামাচাপা দেয়ার ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। অন্যরাও শাণিত সমালোচনায় বিদ্ধ করেন সৌদি সরকারকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় প্রিন্স মোহম্মদ বিন সালমানকে নিজ অবস্থানের ওপর আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতার ওপর নিজের বজ্র আঁটুনিকে এতটুকু ম্লান করতে পারেনি। সেটা যে করেনি তার প্রমাণ গত ২৩ অক্টোবর সৌদি মরুতে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনে যেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়করা উপস্থিত ছিলেন। জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ ও দুবাইয়ের শাসক মোহম্মদ বিন রশিদ তার পাশে সুদৃঢ় অবস্থান নেন। এমনকি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি যাকে গত বছর সৌদি আরবে দু’সপ্তাহ আটক রাখা হয়েছিল তাকেও মঞ্চে যুবরাজের পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে। তার চেয়েও বড় কথা প্রিন্স মোহম্মদের কথাবার্তার সুর থেকে বোঝা যাচ্ছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে তার একটা সমঝোতা হয়ে গেছে। কিছুদিন মনে হচ্ছিল খাশোগির মৃত্যুর নগ্ন সত্য উন্মোচন করে প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রিন্স মোহম্মদকে অতিমাত্রায় বিব্রতকর ও নাজুক অবস্থায় ফেলবেন। তুর্কী কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এই হত্যার লোমহর্ষক বিস্তারিত বিবরণ উন্মোচন করেছিলেন এবং বলেছিলেন এক সৌদি ঘাতক স্কোয়ার্ড এ কাজটি করেছে। কিন্তু ২৩ অক্টোবর এক ভাষণে এরদোগান পিছু হটেন। হত্যাকা-কে তিনি সুপরিকল্পিত বলে অভিযান আখ্যা দেন এবং যে মানুষটি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তাকে থেকে শুরু করে যে সেই নির্দেশ কার্যকর করেছিল সেই লোকটি পর্যন্ত দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে সৌদি আরবের প্রতি দাবি জানিয়েছিলেন কিন্তু প্রকৃত দায়-দায়িত্ব কার তা তিনি উল্লেখ করেননি এবং খাশোগির শেষ মুহূর্তে কথোপকথনের রেকর্ডিং যে তুর্কী তদন্তকারীদের হাতে আছে তাও তিনি বলেননি। হয়ত এরদোগান যুবরাজ মোহম্মদের সঙ্গে খেলছেন যাতে এই হত্যায় সন্দেহভাজনরা তুরস্কের ভঙ্গুর অর্থনীতিতে অর্থ যোগায় এবং ইসলামী বিরুদ্ধবাদীদের মুক্তি দেয়। ইরান-সৌদি সংঘাত, কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি অবরোধ এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইসলামী সরকারগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা নিয়ে সৌদি নেতাদের সঙ্গে এরদোগানের মতভিন্নতা আছে। তুর্কী কর্মকর্তারা প্রিন্স মোহম্মদকে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী শক্তি হিসেবে দেখেন। এরদোগান তাকে বাদশাহ হিসেবে দেখতে চান না। তবে খাশোগি হত্যার গোপন তথ্যাবলী ফাঁস যদি বন্ধ হয় তাহলে বুঝতে হবে দু’পক্ষের সম্পর্কের সত্যিই উন্নতি হয়েছে। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দিক থেকে সৌদিদের মিশ্র বার্তা পাঠাচ্ছেন। প্রথমদিকে খাশোগিকে হত্যার সৌদি তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও এখন সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য বলছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও বলেছিলেন হত্যায় অংশগ্রহণকারীদের আমেরিকায় আসার ভিসা দেয়া হবে না তবে প্রিন্স মোহম্মদকে নয়। এর পেছনে কারণ হলো ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিকে অগ্রাধিকার দিতে চান এবং ইরানের সঙ্গে বিরোধে সৌদি আরবকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে চান। আমেরিকার আইন প্রণেতা ও ইউরোপীয় সরকারগুলো সৌদিদের বিরুদ্ধে কঠোরতর শাস্তির হুমকি দিয়েছে। জার্মানিতে সম্প্রতি রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তার কোন প্রভাব সৌদি সরকারের ওপর পড়েনি। বরং যুবরাজ মোহম্মদকে আস্থাবানই মনে হচ্ছে। রাজ পরিবারের অভ্যন্তরে তার যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তাদের তিনি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন। সমালোচক ধর্মীয় নেতাদের কণ্ঠরোধ করেছেন এবং দেশের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল গার্ডের আনুগত্য কিনে নিয়েছেন। খাশোগি হত্যা প্রথমদিকে তার অবস্থান একটু নড়বড়ে করলেও এখন ক্ষমতার ওপর তার বজ্র আঁটুনি অটুট রয়েছে বলে মনে হয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×