ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেট টেস্টে বাংলাদেশকে ১৫১ রানে হারিয়ে লজ্জা দিল জিম্বাবুইয়ে

অসহায় আত্মসমর্পণ টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৭ নভেম্বর ২০১৮

অসহায় আত্মসমর্পণ টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ দেড়দিনও খেলতে পারল না বাংলাদেশ! একদিনে ৯০ ওভার খেলা হয়। দেড়দিনে সেই হিসেবে খেলা হওয়ার কথা ১৩৫ ওভার। বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলিয়ে খেলল ১১৪.১ ওভার। জিম্বাবুইয়ের কাছে প্রথম টেস্টে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারেতো লজ্জা পেলই বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের উঠতি ক্রিকেট সময়ে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে ২২ জন ব্যাটসম্যান মিলে দেড়দিনও খেলতে না পারার লজ্জাও মিলল। ম্যাচ শেষ হলো সাড়ে তিনদিনেই। তারমধ্যে জিম্বাবুইয়ে পুরোটা সময়জুড়ে দাপট দেখিয়ে গেল। বাংলাদেশ তাতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়েও পড়ল। সিলেটে স্মরণীয় ম্যাচে দুঃস্মৃতির মুখেই পড়ল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে যখন ৩২১ রানের টার্গেট দেয় তখনই বাংলাদেশের হারের পথ যেন দেখা হয়ে যায়। কখনই যে ৩০০ রান বা তারবেশি রানের টার্গেট নিয়ে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। জিততে হলে বাংলাদেশকে ইতিহাস গড়তে হতো। এ জন্য ব্যাটসম্যানদেরই হাল ধরতে হতো। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হার হলো। নিজ দেশে ২০১৩ সালে জেতার পর, পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট জিতল জিম্বাবুইয়ে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে হারিয়ে পাঁচ বছর পর যে কোন দলের বিপক্ষে টেস্ট জয়ও করল জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশের মাটিতে ২০০১ সালের নবেম্বরের পর, প্রায় ১৭ বছর পর টেস্ট জিতল জিম্বাবুইয়ে। বিদেশের মাটিতেও ১৭ বছর পর টেস্ট জিতল জিম্বাবুইয়ে। যে দল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে প্রতিটি ম্যাচে ধরাশায়ী হয়েছে, সেই দলটিই বাংলাদেশকে টেস্টে নাজেহাল করেছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জিততে ৩২১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তৃতীয়দিন বাংলাদেশ ২৬ রান করতেই দিন শেষ হয়। তখন ১০ উইকেট হাতে থাকে। ২৯৫ রান জিততে লাগে। হাতে থাকে দুইদিন। ম্যাচে যে হার-জিত হবে তা নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু জিম্বাবুইয়ের জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকলেও বাংলাদেশের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়নি। বড় এক দুটি ইনিংস, বড় এক দুটি জুটি হলেইতো হয়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা নৈপুণ্যের ধারে কাছেই যেতে পারেননি। চতুর্থদিন প্রথম সেশনটা কষ্ট করে পার করা গেলেও। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই কাত হয়ে গেল বাংলাদেশ। ১৬৯ রানেই অলআউট হয়ে গেল। তিন স্পিনার অভিষিক্ত মাভুতা (৪/২১), সিকান্দার রাজা (৩/৪১) ও অভিষিক্ত ওয়েলিংটন মাসাকাদজার (২/৩৩) ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে দলকে লজ্জায় ডোবালেন ব্যাটসম্যানরা। ইমরুল কায়েস অনেক কষ্টে ৪৩ রান করতে পারলেন। এটিই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। এই রান দেখলেই বোঝা যায়, লিটন, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, শান্তরা কতটা ব্যর্থ হয়েছেন। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই আরিফুল হক (৪১* ও ৩৮) যা নিজেকে একটু মেলে ধরতে পেরেছেন। বাংলাদেশ বোলাররা, বিশেষ করে তাইজুল ইসলাম (৬ ও ৫ উইকেট) কি দুর্দান্ত বোলিং করলেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা হতাশ করলেন। জিম্বাবুইয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে যেখানে ৪৬৩ রান (২৮২ ও ১৮১ রান) করল, সেখানে বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলিয়ে করল ৩১২ রান (১৪৩ ও ১৬৯ রান)। কী দুর্বিষহ অবস্থা! বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানের গুটিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের চিত্র ফুটে উঠেছিল। বড় টার্গেট যখন দাঁড় হয় তখন হারের নিয়তিরই যেন অপেক্ষা থাকে। এরপর লিটন, ইমরুল, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, শান্ত, আরিফুল, মিরাজদের মতো ব্যাটসম্যানরা থাকায় আশা থাকে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি ছিটিয়ে দেন ব্যাটসম্যানরাই। লিটন ও ইমরুল মিলে বড় জুটির আশা জাগান। কিন্তু ৫৬ রানে লিটন আউটের পর থেকেই যে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হয় এবং তা চলতে থাকে। প্রথম সেশনে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ১১১ রানে লিটন, মুমিনুল, ইমরুল, মাহমুদুল্লাহ, শান্ত আউট হয়ে যান। এরপর মুশফিক ও মিরাজের ওপর ভরসা করা হয়। কিন্তু দুইজন শুধু ব্যর্থই হননি, দলকেও ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। দ্বিতীয় সেশন শুরু হওয়ার পর ১৭ ওভারের বেশি খেলতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ৫৮ রানেই শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কি বেহাল দশা হয় ব্যাটসম্যানদের। তৃতীয়দিন ১০.১ ওভার খেলেছিল। চতুর্থদিন ৫০ ওভারের বেশি খেলতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশ এর আগে কখনই এমন টার্গেট নিয়ে জিততে পারেনি। ২১৫ রানের টার্গেটে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রানাডায় জিতেছিল বাংলাদেশ। সেটিই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের টার্গেটে জেতার রেকর্ড ছিল। ৪ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের ছুড়ে দেয়া বিশাল টার্গেটের ভারই যেন নিতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। মুখ থুবড়ে পড়েছেন। তাতে করে টেস্ট সিরিজে জিম্বাবুইয়ের হার এড়ানো নিশ্চিত হয়ে গেল। উল্টো টেস্ট সিরিজে হারের মুখে পড়ে গেল বাংলাদেশ। এখন ১১ নবেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে যদি বাংলাদেশ জিতে তাহলে সিরিজ ১-১ ড্র হবে। আর হারলে সিরিজ হার হবে। দ্বিতীয় টেস্ট ড্র হলেও সিরিজে হারবে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ২০১৪ সালে হওয়া তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৫ সালে হওয়া দেশের মাটিতে সিরিজেও জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার আর জেতা হলো না। জেতা হলো না দেশের মাটিতে কোন স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নেমেও। হারের নিয়তিই ধরা দিল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। আশা ছিল, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এবার বোধহয় জয় আসবে। কিন্তু সেই হারের পথেই হাঁটল বাংলাদেশ। স্মরণীয় টেস্টে দুঃস্মৃতিই ধরা দিল। দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। এর আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ও খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম টেস্ট আঙ্গিনায় পা রেখেছে। প্রতিটি স্টেডিয়ামেই বাংলাদেশ যখন প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নেমেছে তখনই হেরেছে। এবারও সেই ধারা থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে ৯ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের ১৫ নবেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমে ৮ উইকেটে হারে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমে ৮ উইকেটে হার হয়। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে একটি টেস্টই হয়। ২০০৬ সালের ৮ মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমে ১০ উইকেটে হারে। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ২০০৬ সালের ৯ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে ৩ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০০৭ সালের ২৫ মে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে ইনিংস ও ২৩৯ রানে হারে। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেও একই হাল হয়। এই স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে ২০১২ সালের ২১ নবেম্বর শুরু হওয়া টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের কাছে লজ্জা পেয়ে হারল বাংলাদেশ।
×