ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিদিনই পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ নভেম্বর ২০১৮

প্রতিদিনই পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনা কনসোর্টিয়ামের টাকা বিতরণের খবরেও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। একদিন উর্ধমুখী হলে বাজার তিনদিন পতনে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। প্রতিদিনই বাজারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। যার জেরে বাড়ছে বিও এ্যাকাউন্ট। গত চার মাসে পুঁজিবাজারে নতুন বিও খোলা হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, মূলত দুই কারণেই নতুন বিও এ্যাকাউন্ট বাড়ছে। প্রথমত, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়া। দ্বিতীয়ত, বাজারে কয়েকটি কোম্পানির আইপিও থাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ দুই কারণেই পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে বিও এ্যাকাউন্টে। বিষয়টিতে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, অক্টোবর শেষে বিও এ্যাকাউন্ট দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৩৭ হাজার ২০০টি। চার মাসে আগে অর্থাৎ জুলাই শেষে বিও এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪০৪টি। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে বিও এ্যাকাউন্ট বেড়েছে এক লাখ ১৭ হাজার। বর্তমানে সচল বিও এ্যাকাউন্টের মধ্যে পুুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও রয়েছে ১৯ লাখ ৯৭ হাজার। একইভাবে নারীদের বিও রয়েছে ২৭ লাখ ৭৭ হাজার পাঁচটি। এর আগে সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ এ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সে সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব এ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বর্তমানে বাজারচিত্র পরিবর্তন হয়েছে। তাছাড়া প্রায় প্রতিমাসেই রয়েছে আইপিও। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় পুঁজিবাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি কল্যাণ বয়ে আনবে। তাদের যুক্তি, চীনা কনসোর্টিয়াম দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা মালিকানা পেয়েছে। এখন অবশ্যই তারা এ মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করবে। মার্কেটে যুক্ত হবে নতুন নতুন পণ্য। আসবে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা। তাদের মতে, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইতে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশীদের আগ্রহ বাড়বে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে তাদের বিনিয়োগ, যা পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে। চীনের টেকনোলজি যুক্ত হলে সার্ভিলেন্স আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তারা। তাদের অভিমত, এর ফলে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতার জায়গাটি আরও পরিষ্কার হবে। চীনের পুঁজিবাজারে অসংখ্য বড় বিনিয়োগকারী রয়েছেন। তাদের কিছু অংশ যদি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন, তবে এ বাজার আরও শক্তিশালী হবে। যে কারণে বাজারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে আইপিওর অফার থাকলে এমনিতেই বিও এ্যাকাউন্ট বাড়ে। এছাড়া চীন কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার বিষয়টি সবাই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সে কারণে অনেকেই পুঁজিবাজারে আসছেন। যার প্রভাব পড়ছে বিও এ্যাকাউন্টে। নিয়মানুযায়ী জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব এ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
×