ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তেহরানের বিরুদ্ধে কাল থেকে কার্যকর

ইরান ও কিউবার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৪ নভেম্বর ২০১৮

ইরান ও কিউবার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

তিন বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তির সুবাধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল, সোমবার থেকে তা পুনরায় বহাল হচ্ছে। ইউরোপীয় মিত্রদের অনুরোধ উপেক্ষা করে ট্রাম্প মে মাসে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব এ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এদিকে কিউবার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হাভানা। -বিবিসি ইরানের জাহাজ নির্মাণ, বাণিজ্য, ব্যাংক ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, এটি হবে তেহরানের শাসকগোষ্ঠীর ওপর আরোপ করা সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। ৭ শ’র বেশি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বৃহৎ ব্যাংক, জাহাজ ও তেল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এবারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তেহরানকে ১২টি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে ইরানের পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী পুরোপুরি বন্ধ এবং সিরিয়া-ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা। তবে মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তেহরান খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয় বলে জানিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত জেসিপিও চুক্তি অনুযায়ী, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচীর লাগাম টানার শর্তে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। ট্রাম্প শুরু থেকেই এ চুক্তিটির বিরোধিতা করেন। তিনি মনে করেন জেসিপিওএতে মৌলিক ত্রুটি আছে। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের লাগাম টানা ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তেহরানের প্রভাব কমাতে কোনও শর্ত চুক্তিতে নেই। ওয়াশিংটনের এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় কেবল ইরান নয়, দেশটির সঙ্গে যারা ব্যবসা করবে বা তেল কিনবে তাদের ওপরও মার্কিন প্রশাসনের খড়গ পড়বে। যদিও ভারত, ইতালি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ আট দেশকে আপাতত এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। তুরস্কও ইরানী তেল কেনার ক্ষেত্রে এ ছাড় চায় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। পম্পেও জানিয়েছেন, ছাড় দেয়া দেশগুলোকে ইরানের তেল ক্রয় বন্ধে সময় বেঁধে দেয়া হতে পারে; ওই সময়ের মধ্যে তারা ধীরে ধীরে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। ইউরোপের দেশগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি সত্ত্বেও তারা ইরানের সঙ্গে বৈধ ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে কোনও মূল্যে সুরক্ষা দেবে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ডলার বাদ দিয়ে নতুন বিনিময় পদ্ধতিতে তেহরানের সঙ্গে ব্যবসা অব্যাহত রাখা হবে। শুক্রবার ট্রাম্প ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়ে যে টুইট করেছেন তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক চলছে। নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ট্রাম্প তার ছবির ওপর লিখেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আসছে’, যা জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ গেম অব থ্রোনসের ‘শীত আসছে’-এর মতো করে করা বলে অনুমান অনেকের। কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক পরিচালক ফার্নান্ডেজ ডে কোসাইয়ো শুক্রবার হাভানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের নীতি পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে নয়া নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করেছে তা ব্যর্থ হবে। এটি করা হলে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বৃহস্পতিবার কিউবার সামরিক বা গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ডজনের বেশি কিউবান কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন। কিউবার সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য বর্তমানে যে শতাধিক মার্কিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে নতুন নিষেধাজ্ঞা সেই তালিকার সঙ্গেই সংযুক্ত হবে।
×