ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউকে ভেতর থেকে বদলে দেয়ার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৭:২১, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

ইইউকে ভেতর থেকে বদলে দেয়ার উদ্যোগ

গত ৬ মাসে ইতালির চরম দক্ষিণপন্থী ও কঠোরবাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তি ও সালভিনির রকেটের মতো উত্থান ইউরোপের এসটাবলিসমেন্টকে নাড়া দিয়েছে এবং গত তিন বছর ধরে জনতুষ্টিবাদী জোয়ারের নিচে চাপ পড়ে থাকা একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আবার সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সালভিনি ইউরোপকে ঢেলে সাজাতে চান। তার জন্য প্রচারাভিযান শুরু করেছেন তিনি। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন তিনি তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্লজ্জ আমলাদের হাত থেকে নিজের হাতে ফিরিয়ে আনতে চান। তিনি বলেন, ইতালিয়াদের স্বার্থ সবার আগে। সালভিনি এমন এক পরিকল্পনা নিয়েছেন যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিত কাঁপিয়েই শুধু দেবে না, সংস্থাটিকে ভিতর থেকে পুনর্গঠিত করতে পারে। গত মার্চ মাসের নির্বাচনে ইতালির ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর শোচনীয় পরাজয় ঘটে যার ফলে সালভিনি কিংসেকারের ভূমিকায় আবির্ভূত হন। নির্বাচনী বিজয়ে প্রথম স্থানে থাকা এসটাবলিশমেন্ট বিরোধী স্টার ফাইভ, স্টার মুভমেন্টের সঙ্গে তার চরম দক্ষিণপন্থী দল লীগ জেটবদ্ধ হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশের বিভাজনময় রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হয়। সালভিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শক্তিশালী পদটি গ্রহণ করেন। এখন ইতালির পুলিশবাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতি তার হাতে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফাইভ স্টার দলটির নেতা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী না হলেও সালভিনি দারুণ ক্ষমতাশীল। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন। দক্ষিণপন্থী এই নেতার উচ্চাভিলাষ অবশ্য দেশের বাইরেও প্রসারিত। আর সেই কারণেই ইউরোপের বুজে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তাকে ইউরোপের জনতুষ্টিবাদী, জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে একটি বিশাল গ্রুপে একীভূত করতে সবচেয়ে সক্ষম বলে মনে করেন। এমন একটি গ্রুপ জাতীয়তাবাদের নামে জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে যাবে। আগামী মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন। কয়েক দশক ধরে ব্রাসেলস এ নেতৃত্ব দিচ্ছে নব্য উদারপন্থী ও মধ্যপন্থী দলগুলো। আগামী নির্বাচনে এদের হটিয়ে দেয়ার জন্য ইউরোপ জুড়ে উপপন্থীদের একটি কোয়ালিশন গঠনের প্রশ্নের আলোচনার জন্য সম্প্রতি আমেরিকার হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন চীফ স্ট্র্যাটেজিস্ট ও জাতীয়তাবাদীদের গডফাদার স্টিফেন ব্যানন সম্প্রতি রোমে গিয়ে সালভিনির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। জানা গেছে, সালভিনি ব্রাসেলসভিত্তিক একটি নতুন সংগঠন দাঁড় করিয়েছেন যার নাম ‘দি মুভমেন্ট’Ñ উদ্দেশ্য আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পপুলিস্টদের জন্য আরও বেশি সংখ্যক আসন দখল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংহতিতে বাধাদানের চেষ্টা করা। ইউরোপে জনতুষ্টিবাদীদের জোয়ার গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতই বাড়ছে। কারও কারও ধারণা সে ২০১৬ সালের জুন মাসে ব্রেক্সিটের পক্ষে ব্রিটনদের ভোট এবং বিশেষভাবে বিশ্বায়নপন্থী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর হাতে চরম দক্ষিণপন্থী মেরিন লা পেনের পরাজয়ের পর এই জোয়ার তুঙ্গে পৌঁছেছে। কিন্তু ইউরোপের দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদীরা বিস্মৃতির গর্ভে চলে যায়নি। হাঙ্গেরী, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড এবং আরও অনেক দেশে তারা নীরবে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেছে কিংবা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন দখল করেছে। জার্মানিতে চরম দক্ষিণপন্থী দল অলটার নেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) আনুষ্ঠানিক বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় ফ্রিডম পার্টি এখন কোয়ালিশন সরকারের অংশ। এই রাজনীতিকরা এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের পদঙ্ক অনুসরণ করে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন না। তারা যা বলছেন তা মেনে নেয় সমন্বিত ইউরোপের পক্ষে আরও কঠিন ও বিঘœসঙ্কুল। তা হলো আমূল আদর্শিক পরিবর্তন। এর মধ্যে আছে মুক্ত বাজার ও উন্মুক্ত সীমান্তের রাশ টেনে ধরা এবং সরকারী অর্থব্যয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ব্রাসেলসের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেয়া। এ কাজে তারা সফল হলে ইউরোপ মহাদেশ পুনর্নিমিত হবে। এই আন্দোলনে যার কণ্ঠ সবচেয়ে উচ্চকিত তিনি মাত্তিও সালভিনি। তিনি বলেন, আমি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ভিতর থেকে বদলে দিতে চাই। সে কাজটা অধিকতর কঠিন ও জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তবে এটাই অধিকতর সুস্পষ্ট সমাধান। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×