ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শ্রোতার মোহাচ্ছন্নতায় পার্বতী বাউলের সঙ্গীতসন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

শ্রোতার মোহাচ্ছন্নতায় পার্বতী বাউলের সঙ্গীতসন্ধ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নূপুরের শব্দ তুলে শিল্পীর আগমন। গায়ে তার গেরুয়া বসন। মাথা থেকে নেমে যাওয়া জটাচুলগুলো ছুঁয়েছে মঞ্চকে। কোমরে বাঁধা ডুবকির সঙ্গে টুংটাং করে বেজে ওঠে হাতে থাকা একতারাটি। এর পর চড়াকণ্ঠে ধাবিত হন শেকড়সংলগ্ন সুরের পথে। বন্দনা সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় আসর। অনবদ্য গায়কীর সঙ্গে গানের বাণীতে মোহাচ্ছন্ন হয় শ্রোতা। এভাবেই টানা দেড় ঘণ্টার পরিবেশনায় সুররসিকের হৃদয় রাঙালেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী পার্বতী বাউল। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় এই শিল্পীর সঙ্গীতসন্ধ্যা। ‘কীরূপ দেখি নয়ন মুদি’ শীর্ষক এ সঙ্গীতাসরের আয়োজক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। পরিবেশনার শুরুর স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বাউলের দেশ। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বাউল সঙ্গীত পেয়েছে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আমরা বাউল সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এদেশের সঙ্গে ভারতের বাউলদের মেলবন্ধন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারই একটি অংশ অনুষ্ঠান। আর পার্বতী বাউলের গানের খ্যাতি শুধু দুই বাংলায় নয়, তার মাধ্যমে বাউল সঙ্গীত পৌঁছে গেছে সারা বিশ্বে। সংক্ষিপ্ত কথন শেষে শ্রোতায় পরিপূর্ণ মিলনায়তনে বয়ে যায় লোকজ সুরের মূর্ছনা। পার্বতী বাউলের সুরের আশ্রয়ে উঠে আসে মাটি ও মানুষের কথা। পরিবেশনায় দেখা মেলে বাউল সাধনা ও তত্ত্বকথা। শুরুতেই পার্বতী পরিবেশন করেন পাঞ্জু শাহের পদ। বন্দনাগীতিধর্মী এ গানে সুরে সুরে নিবেদন করেন ¯্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা। এভাবে একের পর এক মন উচাটন করা সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে সঙ্গীতপ্রেমীর অন্তরে । সুরের সঙ্গে গানের বাণীতে যেন জড়িয়ে নেন শ্রোতাদের। গানের ফাঁকে ফাঁকে ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের প্রতি তার ভাললাগার কথা। বর্ণনা করেন বাউল তত্ত্বকথার নানা বিষয়। পার্বতী দাস বাউল বলেন, বাউল গান সাধনার কথা বলে। মায়ার কথা বলে। এ মায়া কিন্তু নারী নয়, পুরুষও নয়। এ মায়া একটা চুম্বক। যার আকর্ষণে ফুল প্রস্ফুটিত হয়, হাওয়া হয়, মানুষ উদাস হয়। মানুষের মধ্যে তৈরি হয় ভক্তি ও ভালবাসা। দরাজ কণ্ঠে পার্বতী পরিবেশন করেন ‘যে জন পদ্ম হেম স্বরূপ ধরে যায়’। গেয়ে শোনান রাধা শ্যামের ‘মায় চুম্বক’ গানটি। দীর্ঘ জটাচুল শূন্যে ভাসিয়ে পরিবেশন করেন ‘আমি সেই দোকানের খুঁজি সহজ ঠিকানা’। হাতের একতারা ও কোমরের ডুবকি বাজিয়ে গানের তালে তালে নেচে যান পার্বতী বাউল। সেই মোহনীয় পরিবেশনায় সিক্ত হয় শ্রোতার হৃদয়। পার্বতী বাউল উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত বাউল সঙ্গীতশিল্পী। বাউল গানের তত্ত্ব কথাগুলো তিনি তার সাধক শিষ্যদের কাছে গানের সঙ্গে সঙ্গে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। বাউল সাধিকা ফুলমালি দাসী, সনাতন দাস বাউল, শশাঙ্ক গোঁসাই এই তিনজনের কাছ থেকে তিনি বাউল দীক্ষা গ্রহণ করেন। শৈশবে পার্বতী বাউলের নাম ছিল মৌসুমী পারিয়াল। দেশভাগের আগে তার পূর্বপুরুষদের বাস ছিল বাংলাদেশের রাউজানের পশ্চিম গুজরার পারিয়াল গ্রামে। আতিউর রহমানের গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ সাত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন ড. আতিউর রহমান। দীর্ঘ এই সময়ে নানা অনুষ্ঠানে তিনি সবুজ অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। সবুজ অর্থনীতির নতুন ধারণা তুলে সেই বক্তব্যগুলো এবার উঠে এলো বইয়ের মাঝে। প্রকাশিত হলো বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদের নতুন গ্রন্থ ‘টাওয়ার্ডস অন ইনক্লুসিভ গ্রীন বাংলাদেশ : অকেশনাল স্পিচেস বাই গবর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩-২০১৫’। পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচিত হলো শনিবার। শনিবার সকালে শাহবাগের পাঠক কেন্দ্রে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইদুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম, দৈনিক সমকালের উপসম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত ও বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. আহসান হাবিব। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। অনুভূতি ব্যক্ত করে আতিউর রহমান বলেন, বইটির মাধ্যমে আমার স্বপ্নের বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর থাকাকালীন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্যের মাধ্যমে সবুজ অর্থায়ননির্ভর সেই বাংলাদেশের কথা বলেছি। এ ধরনের অর্থনীতিতে সোরশক্তির প্রয়োগের বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার করে প্রতিটি কারখানাকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলার কথা বলেছিলাম। বৈশ্বিক মন্দার সময়টিতে আমি যখন গবর্নরের দায়িত্ব নেই তখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে নৈতিকতার সঙ্গে দক্ষতার সন্নিবেশ ঘটিয়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তৃণমূলের ব্যাংকার থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাহায্যে সবুজ অর্থনীতির ধারণাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। এছাড়া পিরামিডের পাটানের নিচে থাকা বঞ্চিতজনের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। একদিনে এই ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটবে না। ধীরে ধীরে আমরা এর সুফল পাব। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সবুজ অর্থনীতি ও ইনক্লুসিভ এই দুটি শব্দের মাধ্যমেই চেনা যায় আতিউর রহমানকে। সাধারণ মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বেসরকারী ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অনন্যা। সেই বিবেচনায় তার এই গ্রন্থটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই বইয়ে আটটি অধ্যায়ের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণ, অর্থ পাচার প্রতিরোধ, গ্রীন ব্যাংকিংসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ভাবনাকে তুলে ধরেছেন। আক্ষেপ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতিহাসবিষয়ক একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। সেই বইয়ে অনেক নেতার ছবি রয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কোন ছবি নেই। আমরা এখন কোন্ দেশে অবস্থান করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক নেই। এখন হয়ে গেছে বাংলাস্থান ব্যাংক। দুই বাংলার কবিদের কবিতা আসর ॥ এক আয়োজনে মিলিত হলেন দুই বাংলার কবিরা। কবিতার ছন্দে বাংলাদেশ ও ভারতের মেদিনীপুরের কবিরা বললেন বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির কথা। শুক্রবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কথক। বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে ছিলেন আসাদ চৌধুরী, মুহম্মদ নূরুল হুদা, হাবীবুল্লাহ্ সিরাজী, জাহিদুল হক, তারিক সুজাত ও আমিনুর রহমান। মেদিনীপুরের কবি বিপ্লব মাজী, প্রফুল্ল পাল, তাপস মাইতি, দেবব্রত ভট্টাচার্য, ভবেশ বসু, পবন লোধা, উত্তম কুমার পানি, কমলেশ নন্দ, সুশান্ত কুমার ম-ল, আনন্দরূপ নায়েক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিতা আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ। আয়োজকরা জানান, অঞ্চলভেদে ভাষার তারতম্য, সঠিক শব্দ চয়ন অলংকরণে দুই বাংলার নিজস্ব স্বকীয়তা উপস্থাপন এই আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য। কবিতার প্রকৃত ভাবমূর্তি হৃদয়ঙ্গম করে সাধারণের পাঠকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে এ সন্নিবেশের আয়োজন। আজীবন সম্মাননা পেলেন আসাদ চৌধুরী ॥ পথচলার ১৭ বছর পেরিয়ে ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে পদক্ষেপ বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে বিশ^সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ছিল গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা। এতে পদক্ষেপ আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় কবি আসাদ চৌধুরীকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিশুসাহিত্যিক কাইজার চৌধুরী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ফারুক হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পদক্ষেপ বাংলাদেশের সভাপতি কবি বাদল চৌধুরী। আজীবন সম্মাননার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের পদক্ষেপ পুরস্কার প্রদান করা হয়। পদক্ষেপ পুরস্কার ২০১৬ পেয়েছেন কাজী রোজী (কবিতা), ইসহাক খান (কথাসাহিত্য), সুজন বড়ুয়া (শিশুসাহিত্য), মফিদুল হক (গবেষণা সাহিত্য), নাঈমুল ইসলাম খান (সাংবাদিকতা), উত্তম সেন (চিত্রকলা) ও ইফতেখার আমিন (প্রকাশনা)। পদক্ষেপ পুরস্কার ২০১৭ পেয়েছেন ফারুক মাহমুদ (কবিতা), রফিকুর রশীদ (কথাসাহিত্য), রোমেন রায়হান (শিশুসাহিত্য), আমিনুর রহমান সুলতান (গবেষণা সাহিত্য), ফখরুল ইসলাম (সাংবাদিকতা), মোমিন উদ্দীন খালেদ (চিত্রকলা) ও নিশাত জাহান রানা (প্রকাশনা)।
×