ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুবরাজ জড়িত থাকতে পারেন

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

যুবরাজ জড়িত থাকতে পারেন

সৌদি সাংবাদিক ও রাজ পরিবারের সমালোচক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত থাকতে পারেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো এমন মন্তব্য করেছেন। খাশোগি ২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর আর বের হননি। পরে জানা যায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যুবরাজ সেখানকার বিষয়গুলো দেখাশোনা করেন।’ গার্ডিয়ান। ২ অক্টোবর খাশোগি ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তুরস্ক দাবি করে আসছিল সৌদি আরব লোক পাঠিয়ে তাকে খুন করেছে। সৌদি আরব প্রথমে তা অস্বীকার করলেও পরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে রিয়াদের পাশে থাকলেও এখন অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, যুবরাজ সেখানকার (কনস্যুলেট) বিষয়গুলো দেখাশোনা করেন। তাই সেখানে কোন কিছু ঘটলে এর দায় তার দিকেই যায়। ট্রাম্প বলেন, খাশোগি হত্যার বিষয়ে আমি যুবরাজকে কাছে থেকে একাধিকবার প্রশ্ন করেছি। তিনি ভিন্ন ভিন্নভাবে জবাব দিয়েছেন। তার কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল- খাশোগি হত্যার প্রাথমিক পরিকল্পনা সম্পর্কে আপনি কিছু জানতেন- জবাবে তিনি বলেন যে তিনি কিছু জানেন না। তাকে দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল পরিকল্পনার শুরুটি কিভাবে হয়, তিনি বলেন- এটি নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু হয়। ট্রাম্পকে এবার প্রশ্ন করা হয় যে তিনি (যুবরাজ) সব অস্বীকার করার চেষ্টা করেছেন, কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের বিশ্বাস করতে চাই। সত্যিকার অর্থে আমি তাদের বিশ্বাস করতে চাই। ট্রাম্পের এ সাক্ষাতকার থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিষয়ে যুবরাজের অস্বীকৃতিকে তিনি একটি সাধারণ বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যুবরাজের সংশ্লিষ্টতাকে তিনি পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে চান না। বাদশাহ সালমানকে ট্রাম্প সন্দেহ না করলেও তার শক্তিধর পুত্রের জড়িত না থাকার বিষয়ে একদম নিশ্চিত হতে পারছেন না। ট্রাম্প যেদিন এ সাক্ষাতকার দেন সেদিনই মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর খাশোগি হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন ২১ জন সৌদি নাগরিকের ভিসা বাতিল করে তাদের ভিসার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে। এর পর থেকে এসব সৌদি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। খাশোগি হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষোভ এখনই থেমে যায়নি। এরই মধ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র রিয়াদের প্রতি কড়া মনোভাব ব্যক্ত করলওয়াশিংটন। বর্তমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র যেসব বিকল্পের কথা বিবেচনা করছে তার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেছেন, এ ধরনের নির্মমতা গ্রহণযোগ্য নয়। এসবের পরও ট্রাম্প সৌদি আরবকে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে উল্লেখ করেন। খাশোগির পরিণতিকে পরিকল্পিত নির্মম হত্যাকা- আখ্যা দিয়ে দায়ীদের সাজা দাবি করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান। তিনি বলেন, ঘাতকরা যত উচ্চপর্যায়েরই হোক তাদের শাস্তি পেতেই হবে। যুবরাজ বিন সালমানের নাম না নিলেও এরদোগান বলেন, খাশোগি হত্যার নির্দেশ যিনি দিয়েছেন তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। এরদোগান বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ খাশোগি হত্যার ঘটনা স্বীকার করে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন আমরা আশা করব, এ ঘটনায় ওপর মহল থেকে নিচ পর্যন্ত দায়ী সবার মুখোশ তারা খুলে দেবে এবং তাদের সমুচিত সাজা দেবে। নির্দেশ দাতা থেকে শুরু করে নির্দেশ পালন করা ব্যক্তি পর্যন্ত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সৌদি আরব সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকা-ের ঘটনাকে ‘সবচেয়ে বাজেভাবে ধামাচাপা’ দিতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিককে মেরে ফেলায় মিত্র দেশ সৌদি আরবের কড়া সমালোচনা করেন। এ ধরনের ঘটনা ‘কখনই ঘটা উচিত ছিল না’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সৌদি রাজপরিবারের সাম্প্রতিক বেশকিছু নীতির সমালোচক খাশোগিকে হত্যার পেছনে নিজেকে ‘সংস্কারবাদী’ হিসেবে চিত্রায়িত করতে চাওয়া মোহাম্মদের হাত আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পশ্চিমা মহলে।
×