ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার

শেখ হাসিনাই হতে পারেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

শেখ হাসিনাই হতে পারেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক

’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। বাংলার ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতী, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশা ও শ্রেণীর মানুষ বাংলার স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ৯ মাসের মরণপণ রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ও লক্ষ কোটি মানুষের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেদিন বাঙালী জাতির অভ্যুদয়ের লক্ষ্যে যে জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে কোন শর্ত ছিল না, লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করে একটি অসাম্প্রদায়িক, উদার জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও বঙ্গবন্ধু দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন। শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ’৭৫-এর কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার মাধ্যমে এই অগ্রযাত্রার অপমৃত্যু ঘটায় পাকিস্তানী ভাবধারার দেশী এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা। একে একে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারী চক্র। জাতির ওই দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্ব গ্রহণে নেতৃত্বশূন্য হতাশাগ্রস্ত জাতি প্রাণ ফিরে পায়। তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিসহ গোটাজাতি আবার সুসংগঠিত হতে থাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে। আন্দোলন সংগ্রাম করে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। তাঁর সরকারের নেতৃত্বেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার শুভযাত্রা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নানামুখী কর্মসূচী গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার বয়স্কভাতা, ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ, ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি, গরিব মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে বই বিতরণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, শ্রমজীবী মানুষের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ, বিদেশ প্রত্যাগত শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, কৃষকদের সার ও কীটনাশক এর উপরে ভর্তুকি প্রদান, কৃষকের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি, বাসস্থানের ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং পৌষ্যদের চাকরির ব্যবস্থাকরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন। পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরির ব্যবস্থা গ্রহণ। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন ও তার সক্ষমতা অর্জনের মতো নেতৃত্বে প্রদান করে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু দেশ রাশিয়া ও ভারতের সহায়তায় পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১ উৎক্ষেপণ, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্র এবং শেখ হাসিনার সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের একাডেমিক লব্দজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় শহর এবং গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন, যার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইটিক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনুসরণ করার জন্য কেনিয়াকে উপদেশ প্রদান করেছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য শক্তিশালী সেনাবাহিনী অপরিহার্য। তাই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরবর্তীতে ৯৬ পর্যন্ত সরকারগুলো সেই লক্ষ্য থেকে সরে আসে। মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীকে ফ্রিগেট ও সাবমেরিনসহ উন্নত অস্ত্রশস্ত্র এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন বিশ্বের নানা দেশে শান্তি মিশনে যাচ্ছে এবং প্রশংসা অর্জন করছে। একইভাবে বিজিবি ও পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণের ব্যবস্থা করেন, তাঁদের বেতন ভাতাদি বৃদ্ধি করে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিকভাবে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের চেতনায় বিশ্বাস করতেন। একই পথ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধের সমাধানের ব্যবস্থা করে বিশ্ব দরবারে ব্যাপক প্রশংসা ও সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুকে আশ্রয় দিয়েছেন নিজ দেশে। এজন্য তিনি সারা বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘মানবতার জননী’ হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেন। ’৭৫-এ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের এবং লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী শোষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্নকে নস্যাত করতে চেয়েছিল। আজকেও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সেই অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। যা জাতিসংঘ কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের অনেক সূচকে উন্নত বিশ্বের সমকক্ষতা অর্জন করেছে এবং অন্য আরও অনেক সূচকের উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর কন্যা এগিয়ে যাচ্ছেন। টিকাদান কর্মসূচীর জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথমসারির সাফল্যের দাবিদারের একটি। খেলাধুলার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সবসময় উৎসাহ প্রদান করতেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাধুলায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। খেলাধুলায় বাংলাদেশের সাফল্য এখন সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বিদেশে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হলে সকলেই সম্মানের চোখে বাংলাদেশকে দেখছে। অনেকেই আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে এশিয়ার টাইগার বলে প্রশংসা করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নরয়নমূলক ও গণমুখী রাজনৈতিক কর্মকান্ড, তাঁর নেতৃত্ব বার বার বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে একটি বিশেষ মহল। এই দেশবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নানা তৎপরতা চালাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তারা জাতীয় ঐক্যের নামে নানা কৌশলে সংগঠিত হওয়ার জন্য মাঠে নেমেছে। এরা ষড়যন্ত্র করবে, যেহেতু এসব গণবিচ্ছিন্ন নেতাদের কোন জনপ্রিয়তা নেই। ভোটের রাজনীতিতে তারা ভালো অবস্থানে নেই, তাই তাদের রাজনীতির সম্বল নানামুখী সরকার ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জাতিকে একাত্তরের ন্যায় ইস্পাতকঠিন দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে নেতৃত্বহীন জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পুনরুদ্ধারে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরীক্ষিত নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। আজকে যখন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করে জাতীর পিতার কন্যা সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে উজ্জীবিত করে, দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক ভাবাদর্শপুষ্ট একটি মহল জাতীয় ঐক্যের সুর তুলেছেন। ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তখন এই ষড়যন্ত্র যাতে কোন অবস্থাতেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আজকের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই পারেন জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে। কারণ ইতোমধ্যে তিনি সেই লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করতে চাই বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তাঁর কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, বাংলাদেশ আর পেছনে হাঁটবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ তৈরি হবে। জাতীয় ঐক্যও হতে হবে এই লক্ষ্যে। সুতরাং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেটাই স্বাভাবিক। লেখক : প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×