ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সিরিজটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ’

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

‘সিরিজটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ’

মিথুন আশরাফ ॥ আর বেশিদিন নেই। হাতে আছে ছয়দিন। ২১ অক্টোবর থেকে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এরপর হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এ সিরিজের উদ্দেশ্যে সোমবার থেকে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা প্রধান কোচ স্টিভ রোডসের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরু করবেন। এ সিরিজকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন। ওয়ানডে দল দেয়া হয়েছে। সেই দল নিয়ে আশাবাদী। তবে প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হয় এই সিরিজটা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হবে। কাল (শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) জিম্বাবুইয়ের ম্যাচ দেখছিলাম। দল হিসেবে তারা এখন অনেক ভাল। অনেক গোছানো দল। আমাদের জন্য এই সিরিজটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’ কঠিন হওয়ারই কথা। জিম্বাবুইয়ে পুরো শক্তির দল নিয়েই নামবে। সেখানে বাংলাদেশ দলের দুই নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল নেই। সিরিজটি যে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে, এ জন্য এ দুইজনের না থাকাটাকেই সামনে তুলে ধরেছেন হাবিবুল, ‘কারণ আমাদের দুইজন বড় পারফর্মার খেলতে পারছেন না। পারফর্মেন্সের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতাটার অভাবটা অনুভব করব এই সিরিজে। এটা আমাদের নতুনদের জন্য একটা সুযোগ। সামনে বিশ্বকাপ আছে। আমাদের কিছু প্লেয়ারকে দেখার বিষয় ছিল। যদি সাকিব-তামিম খেলতে পারত তাহলে একদম নতুন কিছু ক্রিকেটারকে খেলানো যেত। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। তাই আমাদের অভিজ্ঞতার দিকেও তাকাতে হচ্ছে। দলের সেরা কম্বিনেশন ও অভিজ্ঞতার দিকেও দেখেছি আমরা। সবমিলিয়ে আমি আশাবাদী। আমার মনে হয় আমাদের দলের সেরা একাদশটা খারাপ না। যারা বাইরে আছেন তারা যথেষ্ট ভাল খেলছেন এবং অনেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসেছেন। আমি আশাবাদী এই সিরিজটা ভালই হবে।’ ওয়ানডে দলে ৩০ বছর বয়সী ফজলে মাহমুদ রাব্বিকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ১৪ বছর ধরে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলে অবশেষে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন রাব্বি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে রাব্বিই শুধু নতুন মুখ। রাব্বিকে কেন? এই ব্যাখ্যাও দিলেন হাবিবুল, ‘ওর ক্যারিয়ারটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং। সে আমাদের এইচপি স্কোয়াডে ছিল, পাঁচ ছয় বছর আগে। তখন কিন্তু খুবই প্রমিসিং স্টার ছিল। তারপর অফ ফর্মে চলে গিয়েছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানে ছিল। কিন্তু শেষ তিন বছর ধরে সে অনেক বদলে গেছে। ওর খেলায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। সে এখন অনেক পরিণত। এ দলের সফরগুলোতে দেখেছি, খুব ভাল ব্যাটিং করছে। বয়সটা একটু বেশি হয়ে গেছে, আমরা এমন খুব কম দেখি। কিন্তু ওর ফিটনেস খুব ভাল। সে একজন ফিট ক্রিকেটার। আর আমাদের একজন ব্যাটসম্যান দরকার ছিল। ঠিক সাকিব আল হাসানের মতো না হলেও সে বোলিং করতে পারে। আমরা দেখেছি, ওর বোলিংটাও বেশ কার্যকরী। সেই বিবেচনায় এসেছে। আর আমার মনে হয় এখনকার প্রেক্ষাপটে ৩০ বছর খুব একটা বেশি না। শুরু করার জন্য হয়তো বেশি। কিন্তু এখন ওর সামনে অনেক বছর পড়ে আছে। হি ইজ এ্যা ফিট গাই। আশাকরি সে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।’ রাব্বির বিশেষত্ব কী? তা জানাতে গিয়ে হাবিবুল বলেন, ‘আমি তাকে অনেক আগে থেকেই দেখেছি। ওর ব্যাটিংটা এখন অনেক বদলে গেছে। আগে খুব ফ্যাল্মবয়েন্ট ব্যাটিং করত, আগ্রাসী ব্যাটিং করত। কিন্তু এখন আমি দেখছি (আয়ারল্যান্ড সিরিজ), সে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাটিং করে থাকে। প্রান্ত বদল করে খেলে। একই সঙ্গে যখন দরকার তখন বড় শট খেলার সামর্থ্য রাখে। সে এখন একজন পরিণত ব্যাটসম্যান। যেটা তাকে দলে নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। প্লাস সে একজন ভাল ফিল্ডার, সঙ্গে স্পিন বল করতে পারে। সবমিলিয়ে আমাদের জন্য প্যাকেজ বলা চলে। একটু আলাদা লেগেছে। কারণ ওর খেলা আগে দেখেছি আর এখন সে অনেক বেশি পরিণত।’ ম্যাচে রাব্বির রোল কী হবে? এ নিয়েও জানিয়ে দিয়েছেন হাবিবুল, ‘ও শুরু করেছিল একজন ওপেনার হিসেবে। সেখান থেকে ৩ নম্বরে ব্যাট করেছে। এখন সে মিডলঅর্ডারে, পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করছে। এ দলের হয়ে সফরগুলোতে পাঁচ ছয়ে ব্যাট করেছে সে। কিন্তু তিন নম্বরে সে ব্যাট করতে পারে। ওর জন্য তিন থেকে পাঁচ ছয়ের মধ্যে ব্যাট করা আদর্শ হবে। মূলত মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবে।’ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও প্রায় নয়মাস পর জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন। সাইফউদ্দিনকে কেন নেয়া হলো? সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, হুট করে এশিয়া কাপে নেয়া সৌম্য সরকার ও মুমিনুলকে কেন বাদ দেয়া হলো? হাবিবুল জানান, ‘দেখুন, ৭ নম্বরে আমরা একজন বোলিং অলরাউন্ডারের খোঁজে ছিলাম। যে মূলত বোলিং করে থাকেন সঙ্গে ব্যাটিংটা করতে পারবেন। এজন্য আমরা সাইফউদ্দিনকে এই সিরিজে নিয়েছি। আমরা এখন পর্যন্ত ৭ নম্বরে যাকেই খেলিয়েছি সবাই মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার ছিল। সৌম্য কিন্তু বোলিং খুব একটা খারাপ করে না। যাই একটু বোলিং করে, যথেষ্ট ভাল বোলিং করে থাকে। কিন্তু সে একজন জেনুইন বোলার নয়। আরিফুল হক কিন্তু এসেছিল বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। কিন্তু ওভার দ্য ইয়ার্স তার ব্যাটিংটাই বেশি ফোকাস পেয়েছে। আমরা তার কাছ থেকে ১০ ওভার বোলিংয়ের কথা চিন্তা করতে পারছি না। ও যে ম্যাচে খেলেছেন খুব একটা বোলিং করার সুযোগ পাননি। মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিতেই খেলেছেন তিনি। আমরা এমন একজনকে চাচ্ছি যে কিনা ১০ ওভার বোলিং করতে পারবে ও দরকার হলে ব্যাটিং করবে।’ মুমিনুল ও মোসাদ্দেককে বাদ পড়া নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাবিবুল, ‘মুমিনুলের বাদ পড়া একটু দুর্ভাগ্য বলব, তারজন্য আমার সহানুভূতি। আমি মনে করি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার কখনই শেষ হয়ে যায়নি। আমার মনে হয় ওয়ানডেতে তার দেয়ার অনেক কিছুই আছে। মুমিনুল এশিয়া কাপে যে দুটি ম্যাচ খেলল, আমি বলব দুটি ইনিংস একজন ব্যাটসম্যানের জন্য যথেষ্ট না। যদি ওই দুই ইনিংসে রান করত তাহলে ওর জন্য ভাল হতো। যেহেতু রান করতে পারেনি আর আমাদের নতুন দুই একজন প্লেয়ারকে দেখতে হচ্ছে তাই বাদ পড়েছে। আর মোসাদ্দেকের ফর্ম নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নই। যেখানে সে ব্যাট করছে সাত নম্বরে, সেখানে সে কার্যকরী ব্যাটিং করতে পারছে না। তাকে ব্রেক দেয়া হচ্ছে। আশাকরি সে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানে ফিরবে। এই দু’জন কিন্তু আমাদের পরীক্ষিত প্লেয়ার। এরা ফর্মে ফিরলেই আবার সুযোগ পাবে। ওরা বাদ পড়েছে শুধু ফর্মের কারণেই। ফর্ম ফিরে পেলে যে কোন মুহূর্তে চলে আসবে।’
×