ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গণজোয়ার তুলতে চাইছে আওয়ামী লীগ, বসে নেই শরিকরাও

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৭ অক্টোবর ২০১৮

গণজোয়ার তুলতে চাইছে আওয়ামী লীগ, বসে নেই শরিকরাও

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পুরো দেশ এখন নির্বাচনমুখী। টানা সপ্তাহজুড়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগের মাধ্যমে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই নির্বাচনী গণজোয়ার তুলতে চাইছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী গণজোয়ার তোলার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন বানচালের সকল অপচেষ্টা রাজপথে থেকেই মোকাবেলার জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করছে। বসে নেই জোট শরিকরাও। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিজয় নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ১৪ দলের কার্যকর এখন থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসেই ১৪ দলের নেতারা বিভাগীয় শহরগুলোতে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে মাঠে নামবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত জোট বিগত সময়ের মতো আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস কিংবা নাশকতা চালাতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখেই আগেভাগেই মাঠ দখলের জন্য মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের কোথাও যাতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলটি কোন ধরনের সহিংস তৎপরতা চালাতে না পারে সে জন্য তিন শ’ আসনেই নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী, নির্বাচনমুখী এবং বিরোধী প্রতিপক্ষের সব ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবে রাজপথেই মোকাবেলা করতে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত করে তুলছে দলটি। প্রায় ১০ লাখ প্রচারপত্র ভোটারদের মাঝে বিলি করা হচ্ছে। এই প্রচারপত্রে সন্ত্রাস- নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়ানো এবং নৌকার পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান রয়েছে। জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজপথে বিএনপিসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কোন ধরনের ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত একের পর এক কর্মসূচীর মাধ্যমে মাঠ দখল রাখতে চায় দলটি। এ ছাড়া আগামী ১০ অক্টোবর ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় বের হবে। ওই রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে আন্দোলনের নামে সহিংস তৎপরতার মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করার চেষ্টা করবে। গোয়েন্দা সূত্রে এমন আভাস পেয়ে, আগে থেকেই রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলকে পাশে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারাও বলছেন, শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে নয়, দেশের তিন শ’ আসনেই জোটের কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। গত নির্বাচনের মতো বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাজপথে কোন ধরনের ছাড় দিতে চান না জোটের শরিক দলের নেতারাও। তাঁদের মতে, সাম্প্রদায়িক এই অপশক্তিকে ন্যূনতম ছাড় দিলে তারা দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলবে। নির্বাচন মাঠে নামলেও কোন জায়গায় যাতে বিএনপি-জামায়াত কোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে না পারে সে জন্য এখন থেকেই তিন শ’ আসনে ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে প্রয়োজনে শক্তিশালী একটি প্লাটফরম গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছেন শরিক দলের নেতারা। এ প্রসঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির জোট যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, তা মোকাবেলা করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে ১৪ দলের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৪ দলের নেতারা জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচী নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে, হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা আবার দেশে হাওয়া ভবন তৈরি করতে চায়, সন্ত্রাসী, বোমাবাজি, জঙ্গীবাদের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। দেশকে তারা বার বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল, আবারও সেটা করতে চায়। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, হুমকি-ধমকি বাদ দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। আপনারা যে আন্দোলনের কথা বলছেন সেটা আর হবে না। আন্দোলনের হুমকি বাদ দিয়ে নির্বাচনে আসেন। তিনি বলেন, আমরা এ মাসেই কেন্দ্রীয় ১৪ দল সারাদেশ সফর করব। রাজশাহী, নাটোর ও খুলনায় ১৪ দলের জনসভা হবে। এর পরে আমরা নতুন কর্মসূচী দেব। জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বিএনপির প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি প্রতিহত করতে হলে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে যেতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে ১৪ দলের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। মাঠে থেকেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে তৃণমূলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে ১৪ দলের কার্যক্রম নিয়ে যেতে হবে। সেখানে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে এবং বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাবেশ করে, প্রচারপত্র বিলি করে বিএনপির ষড়যন্ত্র তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সামনে উন্মোচন করতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের মাঠে থাকাটা জরুরী। এ জন্য বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ১৪ দলের সমাবেশ করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি এখন এতই হতাশ যে তারা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। এমন কথাও চালু আছে তারা ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী করতে চায়, বিএনপির কোন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নেই। বিএনপির এ দুর্বলতাকে আমাদের রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলটির সপ্তাহব্যাপী গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারাভিযান আজ রবিবার শেষ হচ্ছে। এ কর্মসূচীর পর দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সড়ক-ট্রেন মার্চের এবার নৌপথে নির্বাচনী প্রচারে বের হবেন। আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও সক্রিয় রাখতে একের পর এক কর্মসূচী দিয়ে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখবে। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ন্যূনতম ছাড় দিতেও নারাজ দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশের টানা কর্মসূচী পালন করবে। এর বড় লক্ষ্য হচ্ছে বিরোধীদের চাপে রাখা, নিজেদের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সার্বিক চিত্র সারাদেশের ভোটারদের সামনে তুলে ধরা। এসব সভা-সমাবেশ থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, তাঁর পুত্র তারেক রহমানসহ জোটের শরিক এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার স্বরূপ এবং তাঁদের অতীত সব নেতিবাচক কর্মকা- ডকুমেন্টারি আকারে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন আওয়ামী লীগসহ জোটের নেতারা। এসব কর্মসূচীর মাধ্যমে মাঠ দখলে রাখার পাশাপাশি মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যেসব এলাকায় দলের মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে কোন্দলযুক্ত জেলাগুলোর নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের ঢাকায় তলব করে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এবার নির্বাচনে দলের কেউ বিরোধিতা করলে তাঁকে যে ন্যূনতম ছাড় দেয়া হবে না সেই ম্যাসেজটিও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। শনিবারও ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত কেউ অমান্য করলে তার খবর আছে। সঙ্গে সঙ্গে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা ছাড়াও অন্য সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
×