ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপাস্বপ্নের অন্যতম অস্ত্র স্বপ্না

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২ অক্টোবর ২০১৮

শিরোপাস্বপ্নের অন্যতম অস্ত্র স্বপ্না

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘সিরাত জাহান স্বপ্না, সবাই ওর নাম জপ না!’ ... হ্যাঁ, এক ম্যাচে দল যদি করে ১৭ গোল, আর তার মধ্যে একারই যদি কারুর থাকে ডবল হ্যাটট্রিকসহ ৭ গোল, তাহলে তো তার নাম জপতেই হবে। ভুটানে চলমান সাফ অ-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে (‘বি’) পাকিস্তানের জালে স্বপ্না একাই পাঠিয়েছে ৭ গোল। তার এই গোল হচ্ছে যে কোন লেভেলের ফুটবলে এক ম্যাচে বাংলাদেশের কোন নারী ফুটবলারের বেশি গোল করার রেকর্ড। স্বপ্নার এমন উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে বিমুগ্ধ বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, ‘স্বপ্নার ওপর আমার সবসময়ই আস্থা ছিল। মাঠে নামলেই একটা কিছু করতে পারে সে। তার সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে স্পিড এবং পাওয়ার ফুটবল।’ রবিবার ভুটানে এভাবেই খেলে প্রতিপক্ষদের রক্ষণদুর্গ তছনছ করে দিয়েছে রংপুরের মেয়ে স্বপ্না। ফুটবলার তার যাত্রা শুরু বঙ্গমাতা ফুটবল দিয়ে। সেটা ২০১১ সালের কথা। এরপর ২০১২ সালেও বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট খেলে সে। এরপর থেকেই পাদপ্রদীপের আলোর নিচে চলে আসে সে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি পেছন পানে। নেপালে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালে এএফসি অ-১৪ আঞ্চলিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে জাতীয় দলে নাম লেখায় সে। প্রথম আসরেই নজর কাড়ে সে। এরপর ঢাকায় ২০১৬ সালে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে দলের অন্যতম প্রধান ভরসা ছিল এই ফরোয়ার্ড। সিনিয়র সাফে রানার্সআপ হওয়াতেও তার অবদান ছিল। করেছিল ৫ গোল। এবার ভুটানে অ-১৮ সাফে এক ম্যাচেই করেছে ৭ গোল। এখনও আর কমপক্ষে দুই ম্যাচ খেলা বাকি আছে তার। সেই ম্যাচগুলোতেও গোলবন্যা অব্যাহত রাখতে পারলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে অনেক এগিয়ে যাবে সে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ডাবল হ্যাটট্রিক করার পর কেমন ছিল স্বপ্নার অনুভূতি, ‘দল জিতেছে। আমি সাত গোল করেছি। এজন্য আনন্দিত। তবে আরও বেশি গোল করতে পারলে খুশি হতাম। আমাদের সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যই হলো ভুটান থেকে শিরোপা জিতে দেশে ফেরা।’ আজ গ্রুপসেরা হওয়ার লড়াইয়ে নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে ড্র করলেই গ্রুপ সেরা হতে পারবে লাল-সবুজরা। তবে ড্র নয়, স্বপ্না চায় জিততে, ‘নেপাল শক্তিশালী দল। তবে ড্রয়ের জন্য নয়, জয়ের জন্য খেলব আমরা। শতভাগ মেলে ধরতে চেষ্টা করব সবাই।’ রংপুরের জয়ারামের কৃষক বাবা মোকছার আলীর তিন মেয়ে। সবার ছোট স্বপ্না। সংসারে দারিদ্র্য আর অনটনের কারণে বাকি দুই মেয়ের মতো স্বপ্নাকেও বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা। পাত্র খোঁজাও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাবাকে বুঝিয়ে ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখার মিশনে আপাতত এখনও সফল স্বপ্না। স্বপ্নাই এখন তার পরিবারের আশা-ভরসা। ফুটবল খেলে যা আয় হয়, তার পুরোটাই সে তুলে দেয় বাবার হাতে। নিজের ভুল বুঝতে পারা বাবা এখন আর মেয়ের বিয়ে ভুলেও ভাবেন না। বরং লজ্জিত হন মেয়ের বিয়ের কথা ভেবেছিলেন বলে। তাছাড়া এখন তো ছোটনের শিরোপাস্বপ্নের অন্যতম অস্ত্রই হচ্ছে স্বপ্না। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ভারতের শিলিগুড়িতে হয়েছিল মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ওই আসরে মালদ্বীপের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছিল স্বপ্না। সেটা ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রথম হ্যাটট্রিক। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও গোল ছিল তার। কিন্তু দল জিতেনি। সেদিন স্বপ্নভঙ্গের কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল স্বপ্না। এরপর তো মাঠে নামার খুব একটা সুযোগ আসেনি তার। বয়সের কারণে বাদ পড়ে যায়। ফলে মেয়েদের অ-১৫ এবং অ-১৬ আসরগুলোতে এ বছর খেলতে পারেনি। তবে প্রথমবারের মতো অ-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ম্যাচেই নিজের জাত চেনাল স্বপ্না। এখন দেখার বিষয়, এই আসরে পরের ম্যাচগুলোতে গোলবন্যা বজায় রাখতে পারে কি না স্বপ্না ?
×