ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ, ঝুঁকিতে চীন

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে  বাণিজ্য যুদ্ধ,  ঝুঁকিতে চীন

বাণিজ্য দ্বন্দ্বে চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যতটা চাপ সৃষ্টি করবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চীনের অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, শুল্কের কারণে আগামী বছর চীনের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কম হতে পারে। সিএনবিসি মার্কিন অর্থনীতিতে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব এখনও ততটা পড়েনি। কিন্তু এ যুদ্ধ দীর্ঘ সময় স্থায়ী হলে বা জনগণের মধ্যে আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাণিজ্যযুদ্ধ চলতে থাকলে রফতানিতে আরও অনেক বেশি নাজুক চীনের অর্থনীতি যক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন কি চীনের নেতারা এ বাণিজ্যযুদ্ধ কতদিন চলতে পারে সে বিষয়ে সম্ভবত স্পষ্টও নয়। যুক্তরাষ্ট্র ২শ’ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যা এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে। চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ৬০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে দেশটির প্রবৃদ্ধির শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পাবে। ব্যাংক অব আমেরিকা মেরিল লিঞ্চে বৈদেশিক অর্থনীতির প্রধান ইয়ান হ্যারিস বলেছেন, দু’দেশেই প্রস্তাবিত শুল্ক আরোপ করা হলে চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চারগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ দেশটির আমদানির চেয়ে রফতানি চারগুণ বেশি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ বৃদ্ধি যেমনটা ঘোষণা করা হয়েছে সে অনুযায়ী চীনের প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব পড়বে অর্ধ শতাংশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রভাব পড়বে কম। কারণ প্রথমত, দেশটি অর্থনীতিতে চাপ পড়বে কম এবং এর অর্থনীতির গতিশীলতা এতটা দৃঢ় যে সংখ্যার দিক থেকেই কেবল ক্ষতিটা হবে। বিওএফএ’র প্রত্যাশা হচ্ছে, ২০১৯ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ জেপি মরগ্যানের প্রত্যাশা, চীনের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশে নেমে যাবে। কারণ, দেশটির রফতানি ও আমদানি তৎপরতা দুর্বল। বিওএফএ মনে করে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। হ্যারিস বলেন, মার্কিন পণ্য গ্রাহকরা বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব যে পর্যন্ত অনুভব করতে না পারবে বা তা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাবে এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগের সৃষ্টি না হবে সে পর্যন্ত এ যুদ্ধের অবসান নাও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত স্টক মার্কেটে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব ও ভবিষ্যত অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকটা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কৌশলবিদরা বলেছেন, শুল্ক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেললে ক্রয় ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পাবে তখন বিষয়টা ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসবে। ব্যানোকবার্ন গ্লোবাল ফরেক্সয়ের প্রধান বাজার কৌশলবিদ মার্ক চ্যান্ডলার বলেন, বাজার এখনও ভাবছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোন না কোনভাবে একটা চুক্তি হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, ট্রাম্প যা চাইছেন তাতে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। কারণ তাকে দুদিকে লড়তে হবে। একটি হচ্ছে সরবরাহ চেইন এবং অন্যটি হচ্ছে চীনের কর্ম-পদ্ধতির বিরুদ্ধে। তিনি চান মৌলিক দিক থেকে চীনের একটা পরিবর্তন ঘটুক। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং সম্প্রতি বলেছেন, চাপের চ্যালেঞ্জ থেকে চীনের অর্থনীতি রক্ষায় তার সরকারের সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য পরিবর্তনের কারণে চীনের অর্থনীতি অনিবার্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, সত্যিকারভাবে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় রাখায় আমরা বেশ দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
×