ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মানব উন্নয়ন সূচকে ৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মানব উন্নয়ন সূচকে ৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ মানব উন্নয়ন সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য এবং জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সূচক তৈরি করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি)। ১৮৯ দেশকে নিয়ে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। এ সূচকে এবার ১৩৬তম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এতে সবার উপরে নরওয়ে। মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূতি আরও বেড়েছে। এর ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। এছাড়া পণ্য, সেবা ও জনশক্তি রফতানি বাড়বে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি আসার পর মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের আগে আছে কেবল ভারত। তারা লাভ করেছে ১৩১তম স্থান। আর তাদের এইচডিআই মান শূন্য দশমিক ৬৪০। এবারের তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান ও নেপাল। পাকিস্তানের অবস্থান ১৫০, তাদের আগে নেপালের অবস্থান ১৪৯তম। আর ভুটানের অবস্থান বাংলাদেশের দু’ধাপ ওপরে। তারা আছে ১৩৪তম স্থানে। শুক্রবার ইউএনডিপির ওয়েবসাইটে এ সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগের বছর ২০১৭ সালের সূচকে ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৯তম। সূচকে নরওয়ের পরে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও জার্মানি। আর তলানিতে রয়েছে নাইজার, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, চাদ ও বুরুন্ডি। ইউএনডিপির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী মানব উন্নয়নে অগ্রগতি হচ্ছে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ১৮৯ দেশের মধ্যে বর্তমানে ৫৯ দেশ খুব উচ্চ মানব উন্নয়ন গ্রুপে আছে। নিম্ন গ্রুপে আছে মাত্র ৩৮টি দেশ। আট বছর আগে ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৬ ও ৪৯। এই সূচকে আসা ১৮৯ দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের দেশের স্তরে। জানা গেছে, জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজির লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে। এটাকে ভিত্তিক ধরেই মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যেসব দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং মাথাপিছু আয় বেশি, সেসব দেশই তালিকায় সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ বছর থেকে বেড়ে ৭২ দশমিক ৮ বছর হয়েছে, শিশুদের স্কুলে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১০ দশমিক ২ বছর থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ৪ বছর হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বছরে তিন হাজার ৩৪১ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৬৭৭ ডলার। আর সূচকের শীর্ষ অবস্থানে থাকা নরওয়ের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৮২ দশমিক ৩ বছর, শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১৭ দশমিক ৯ বছর এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বছরে ৬৮ হাজার ১২ ডলার। এবারের সূচকের শীর্ষ দশে থাকা ১২ দেশ হল-নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, আইসল্যান্ড, হংকং, সুইডেন, সিঙ্গাপুর ও নেদারল্যান্ডস। এর মধ্যে কেবল সিঙ্গাপুর ও হংকংই এশিয়ার দেশ। সূত্র মতে, মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেতে প্রথমেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এক্ষেত্রে জাতিসংঘ তিনটি সূচক বিবেচনা করে থাকে। এগুলো হচ্ছেÑ মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা। ইতোমধ্যে এই তিনটি সূচকেই বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। মানবসম্পদ সূচকে বিবেচনা করা হয় দেশের মোট জনসমষ্টির কত ভাগ পুষ্টিহীনতার শিকার, শিশুমৃত্যুর হার কত, মাধ্যমিক স্কুলে কতজন লেখাপড়ার সুযোগ পায় এবং বয়স্ক সাক্ষরতার হার কত ইত্যাদি। তিনি বলেন, উল্লিখিত সবগুলো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের সমালোচনা করেছে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানটিই স্বীকৃতি দিল। এবার মানব সম্পদ উন্নয়নে তিনধাপ এগিয়েছে দেশ। জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, এর ফলে ঋণমান সক্ষমতায় আরও এগিয়ে যাওয়া যাবে। বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য এই স্বীকৃতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়াবে। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ প্রণয়ন করে। সেখানে রয়েছে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষার কথা। বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের লক্ষ্য মাথাপিছু আয় ২০০০ ডলার করা। সরকারের পরিকল্পনায় আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এই অবস্থান ৩৮তম। সিটি গ্রুপের বিবেচনায়ও ২০১০ হতে ২০৫০ কালপর্বে বিশ্বের যে ১১টি দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। এ প্রসঙ্গে সোসাইটি ফর লিডারশিপ স্কিলস্ ডেভেলপমেন্টের পরিচালক (এসএলএসডি) অধ্যাপক মঈনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বড় অর্জন। ইউএনএফপির মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৭ দশমিক ছয় মিলিয়ন হল তরুণ সমাজ যাদের বয়স ১০ থেকে ২৪ বছর। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে এই সংখ্যক যুবকদের আত্মোন্নয়ন ও দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত এবং উজ্জীবিত করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে এর অনেক বড় প্রভাব পড়বে। মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। এই লক্ষ্যে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনা, জনসংযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। এদিকে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে জেপি মরগানে ফ্রন্টিয়ার ফাইভ তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক মানের রেটিং এজেন্সি কর্তৃক সার্বভৌম ঋণমান মূল্যায়নে বাংলাদেশ সন্তোষজনক ঋণমান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
×