ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতার ছক ॥ নির্বাচনকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নাশকতার ছক ॥ নির্বাচনকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে

শংকর কুমার দে ॥ নির্বাচনকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করার ছক কষার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টি করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভন্ডুল করে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনে অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার ছক কষছে তৃতীয় পক্ষ। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী বিদেশী রাষ্ট্রের অশুভ মহল তৃতীয় পক্ষকে সহায়তা দিতে পারে। এই ধরনের ঘটনায় সরকারবিরোধী আন্দোলন রাজপথে সহিংসতায় রূপ নিলে তা মোকাবেলার জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছে র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে খুব শীঘ্রই গঠিত হতে যাচ্ছে ছোট আকারের নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনকালীন সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলনে যে কোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সারাদেশের বিএনপি-জামায়াত, তাদের অঙ্গ সংগঠন-সহযোগী সংগঠন ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মী, ক্যাডারদের তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেসব নেতাকর্মী, ক্যাডারের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে আন্দোলনের নামে সহিংসতা, নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং রাজপথে ওই ধরনের ফৌজদারি অপরাধ করার আশঙ্কা বিদ্যমান তাদের নামের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও ক্যাডারের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজির মামলা রয়েছে, তাদের নামের তালিকা তৈরি করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হলেই বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজপথের আন্দোলনে নামতে পারে। দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে আন্দোলনের জন্য সামনে ইস্যু করা হতে পারে এমন আভাস পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে কিংবা পরে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার পর আসামিদের মুক্তির দাবিও যুক্ত করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজপথের সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। কারণ জামায়াত ইতোমধ্যেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে বিএনপির ছাতার নিচে যুক্ত হয়ে সহিংস আন্দোলনে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের পতন ঘটানোর পক্ষে মতামত দিয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার কর্মসূচীসহ অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দাবি দাওয়াকে সামনে এনে রাজপথ উত্তপ্ত ও অস্থিরতা তৈরি করার ছক কষা হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দিন থেকেই বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট রাজপথে আন্দোলনে নেমে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও, পদযাত্রাসহ নানা ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করে অস্থির ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনজীবন স্থবির করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ ধরনের আলোচনায় তৃতীয়পক্ষ হিসেবে বিদেশী প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর শরণাপন্ন হওয়ার জন্য লবিং ও কূটনৈতিক যোগাযোগ চালানো হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা হতে পারে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের এই ধরনের সহিংস আন্দোলনে বিভিন্ন ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনও মাঠে নামানো হলে করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনা নিচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকা-ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব মামলার আসামির অধিকাংশই এখন জামিনে আছে। কেউ কেউ আবার জামিন না নিয়ে পলাতক জীবনযাপন করছে। হালনাগাদ যে তালিকা তৈরি করছে গোয়েন্দারা, তাতে এসব নেতাকর্মীর নাম গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করছে। এ জন্য সারাদেশের মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে। সারাদেশের জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে বিশেষ অভিযানে। এ ছাড়াও রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে দেশের বিভিন্ন শহরে, জেলা ও উপজেলায় কারা কারা আন্দোলনের নামে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে পারে, আন্দোলন শুরু করার আগেই তাদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান শুরু করার বিষয়টি মাথায় রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপর্যায়ে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করে পরিকল্পনা নিচ্ছে।
×