ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেবাচিম হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 শেবাচিম হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসালয় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে দীর্ঘদিন থেকে দালাল ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি এবার ভুয়া চিকিৎসকের আবির্ভাব ঘটেছে। গত ২৮ আগস্ট দুপুরে হাসপাতালের চতুর্থ তলা থেকে এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আটককৃত ভুয়া চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দির উমারেরপাড় গ্রামের নুরুজ্জামান হাওলাদারের পুত্র। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম চিকিৎসক পরিচয়ে দীর্ঘদিন থেকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তিরত রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। ২৮ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে গলায় স্টেথোস্কোপ দিয়ে হাসপাতালের চতুর্থ তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে এক রোগীকে চিকিৎসক পরিচয়ে দেখার অভিনয় করছিল সাইফুল। বিষয়টি ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে তারা সাইফুল ইসলামকে হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে বিভিন্ন কথাবার্তার সাইফুল ইসলাম চিকিৎসক নয় বলে নিশ্চিত হলে, হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন থানা পুলিশের কাছে ভুয়া চিকিৎসককে সোপর্দ করেন। হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে সাইফুল ইসলাম কখনও নিজেকে ইন্টার্ন, কখনও মেডিক্যাল অফিসার দাবি করে গলায় একটি স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং ইউনিটে রোগীর কাছে গিয়ে রোগী কিংবা স্বজনদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণামূলক কথা বলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিত। পাশাপাশি সে (সাইফুল ইসলাম) হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আব্দুর রশিদের পুত্রকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার দায়িত্বশীল এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, আটককৃত সাইফুল ইসলাম শুধু হাসপাতালেই নয়; চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি সময়ে এক বিত্তবানের কন্যাকে বিয়ে করেছেন। নগরীর সাগরদী এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করা সাইফুল ইসলাম বিয়ের পর নগরীর ইসলাম পাড়ার শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। তবে আটকের পর সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি কোথাও চিকিৎসক পরিচয় দেননি। তার গ্রাম থেকে খাইরুল ইসলাম নামের এক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি তার অবস্থা জানতে শেবাচিম হাসপাতালে গিয়ে এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে স্টেথোস্কোপ নিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখছিলেন। সাইফুল ইসলাম আরও জানান, ক্যান্সার বিভাগের এক চিকিৎসকের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক থাকায় প্রায়ই তার কাছে সে রোগী নিয়ে যেতেন। অতিসম্প্রতি ওই চিকিৎসকের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হওয়ায় নাটকীয়ভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, হাসপাতাল থেকে ভুয়া চিকিৎসক পরিচয়দানকারী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে তাকে (সাইফুল) জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
×