ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও গোল করে জয়ের নায়ক ডিফেন্ডার তপু বর্মণ, বাংলাদেশ ১-০ পাকিস্তান

পাকিদের হারিয়ে সেমিতে এক পা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাকিদের হারিয়ে সেমিতে এক পা বাংলাদেশের

জাহিদুল আলম জয় ॥ প্রতিশোধের জয় দিয়ে চলমান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে সেমিফাইনালে এক পা দিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে লাল-সবুজের দেশ। প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ডিফেন্ডার তপু বর্মন। ম্যাচের একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন তিনি। এ জয়ে পাঁচ বছর আগে এই সাফেই পাকিদের কাছে হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পাকিদের হারানোর পর ‘এ’ গ্রুপে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে কোচ জেমি ডে’র দলের। সাফে বাংলাদেশ সর্বশেষ সেমিফাইনালে খেলেছে সেই ২০০৯ সালে। শনিবার গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচের পর নিশ্চিত হবে কোন দু’টি দল ‘এ’ গ্রুপ থেকে শেষ চারের টিকেট পাবে। সাম্প্রতিক সময়ে সাফল্য আর চলমান সাফে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে হারানোর পর স্টেডিয়ামমুখী হয়েছেন বাংলাদেশের দর্শকরা। ভুটানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢেউ নামে। ওই ম্যাচে ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করেন। গতকাল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে এই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে। আনুমানিক ১৫ হাজার দর্শক মাঠে খেলা উপভোগ করেন। যা ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালের পর সবচেয়ে বেশি। ম্যাচের শুরুতে দু’দলই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। নিজেদের দুর্গ আগলে রেখে আক্রমণের ছক কষে। এতে জেমি ডে’র শিষ্যরা বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকে বল দখলে। প্রথমার্ধে বাংলাদেশের অধীনে থাকে ৬২ শতাংশ বলের দখল। আর পাকিদের দখলে থাকে ৩৮ শতাংশ। বলের দখলে পিছিয়ে থাকলেও প্রথম ৪৫ মিনিটে পাকিস্তানকে বেশ সংঘবদ্ধ মনে হয়। বিশেষ করে তাদের রক্ষণভাগ ও মাঝমাঠকে বেশ কার্যকরী দেখা যায়। বাংলাদেশের ফুটবলাররা পায়ে বল বেশি রাখলেও এ অর্ধে একবারের জন্যও গোলমুখে ভাল সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। উল্টো পাকিস্তান বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে। নবম মিনিটে ম্যাচের প্রথম ভাল সুযোগ পায় পাকিস্তান। ডানপ্রান্ত থকে উড়ে আসা বল ডি বক্সে হেড করেন পাকি ফরোয়ার্ড মুহাম্মদ আলি। তার অসাধারণ প্রচেষ্টা বাংলাদেশ গোলরক্ষক শহিদুল আলম ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ২০ ও ২৩ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে আরও দু’টি সুযোগ সৃষ্টি করে পাকিস্তান। কিন্তু কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন মুহাম্মদ, সাদ্দামরা। বাংলাদেশের বলের দখল বেশি থাকলেও তা থেকে গোল করার মতো আক্রমণ শানাতে পারেননি সুফিল, সাদরা। উল্টো পাকিরা যে সুযোগ সৃষ্টি করে তার প্রায় সবগুলোই ছিল ভীতি জাগানিয়া। ৩৩ মিনিটে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভাল সুযোগ পায়। লাল-সবুজদের প্রচেষ্টা কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন পাকি গোলরক্ষক ইউসুফ ইজাজ। এরপর কর্নার থেকে সুযোগ আসলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন তপু বর্মণ। ৪০ মিনিটে মাসুক মিয়া জনি ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নিলেও তা দুর্বল হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিতে সমস্যা হয়নি পাকি কিপারের। ফলে প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। বিরতির পর আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ৪৭ মিনিটে মাঝমাঠের কাছাকাছি থেকে ফ্রিকিক পায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার নেয়া শট সরাসরি চলে যায় অতিথি গোলরক্ষকের গ্লাভসে। ৫৫ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয় পাকিস্তানের। বামপ্রান্তে স্বাগতিক এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে জোরালো শট নেন মুহাম্মদ আলী। কিন্তু তার শট বাংলাদেশ গোলরক্ষক অসাধারণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৫৮ মিনিটে সুযোগ আসে বাংলাদেশের। ডি বক্সের জটলা থেকে বল বাইরে আসে। চলতি বলে দ্রুতগতির শট নেন বিপলো আহমেদ। কিন্তু তার শট সরাসরি চলে পায় পাকিস্তান গোলরক্ষকের হাতে। ম্যাচের শেষ ১০ মিনিট গোল পেতে পাকিদের রক্ষণে আক্রমণে ঢেউ বইয়ে দেন বিশ্বজিৎ, জামালরা। আসতে থাকে সুযোগও। এরই ধারাবাহিকতায় ৮২ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতাছাড়া করে লাল-সবুজের দেশ। ডানপ্রান্ত থেকে মামুনুলের ক্রসে চলতি বলে শট নেন তপু। কিন্তু ভুটানের বিরুদ্ধে এক গোল করা এই ডিফেন্ডারের শট বারপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে বাইরে যায়। তিন মিনিট পর আর হতাশ হয়ে হয়নি তারকা এই ফুটবলারকে। অর্থাৎ ৮৫ মিনিটে কাক্সিক্ষত গোল পায় বাংলাদেশ। বামপ্রান্ত থেকে বিশ্বনাথ ঘোষ লম্বা থ্রো করেন পাকি রক্ষণে। জটলার মধ্যে আলতো হেডে বল জালে জড়ান ডিফেন্ডার তপু বর্মণ (১-০)। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ২০০৩ আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
×