অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণে অনিয়মের অভিযোগে ১২টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় সব মিলিয়ে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পাঁচজন কর্মকর্তা রয়েছেন। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সোমবার দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকার রমনা মডেল থানায় মামলাগুলো দায়ের করেন। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৬৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে উল্লম্ফনের সময় কারসাজির ঘটনাগুলো ঘটে। আইসিবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের (আইএসটিসিএল) কিছু কর্মকর্তা গ্রাহককে অনিয়মের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দিয়ে এই অর্থ আত্মসাত করেন। সোমবার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, ১২ মামলায় মোট আসামি ১৫ জন। প্রতিটি মামলায় আসামি হয়েছেন আইসিবির পাঁচ কর্মকর্তা। দুদক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের শেষ দিকে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে ৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মিলেছে এবং আইসিবির কিছু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মামলার আসামিরা হলেন আইসিবির সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) টিপু সুলতান ফারাজি, তিন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোঃ এহিয়া মণ্ডল, মোঃ সামছুল আলম আকন্দ ও শরিকুল আনাম এবং সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ধনঞ্জয় কুমার মজুমদার। অন্য আসামিরা হলেন আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ আব্দুস সামাদ ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার, তেজগাঁও স্টাফ কোয়ার্টারের এ কে এম রেজাউল হক ও তার স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা, মোহাম্মদপুর খিলজী রোডের লাইলা নুর, তেজগাঁও মনিপুরিপাড়ার এ কে এম আতিকুজ্জামান; গ্রিন রোডের কাজী মাহমুদুল হাসান, গুলশানের শেখ মেজবাহ উদ্দিন ও তার মেয়ে শিমা আক্তার এবং শ্যামলীবাগের বুলবুল আক্তার।
এজাহারে বলা হয়, বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের মালিকদের মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে শেয়ার কেনার পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডেবিট স্থিতির ওপর টাকা তুলে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।
এছাড়া ২০০৯ সালের শেষের দিকে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির সময় সরকারী অর্থে অস্বাভাবিক ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার সুযোগ করে দেয়া হয়। পরে শেয়ারের দর পড়ে গেলে সরকারের বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়। প্রমাণ পাওয়া গেছে, মার্জিন ঋণের সীমা অতিক্রম করে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ হিসাবধারীকে আইএসটিসিএলের কর্মকর্তারা সুবিধা দিয়েছেন এবং বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন।
গত ৩০ আগস্ট ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় তিন কোটি সাত লাখ ৫৮ হাজার ৯০৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে টিপু সুলতান ফারাজি, এহিয়া মণ্ডল, সামছুল আলম, ধনঞ্জয় কুমার মজুমদার, মোঃ আবদুস সামাদ ও মোঃ শরিকুল আনামের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই দিনই টিপু সুলতান, এহিয়া মণ্ডল ও সামাদকে গ্রেফতার করে দুদক। তারা এখন কারাগারে আছেন।