ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ড

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহের সময় আটক রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে সাত বছর করে কারাদ- দিয়েছে আদালত। দুই সাংবাদিককে মুক্তি দিতে আন্তর্জাতিক আহ্বানের মধ্যেই ইয়াঙ্গুনের জেলা জজ আদালত সোমবার এই রায় ঘোষণা করে। আসিয়ানে নিযুক্ত মার্কিন দূত বিষয়টিকে উদ্বেগের বলে অভিহিত করেছেন। ব্রিটিশ দূত রায়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সহায়তা সমন্বয়ক রয়টার্সের সাংবাদিকদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। খবর এএফপি ও ইয়াহু নিউজের। বিচারক ইয়ে লইন তা রায়ে বলেন, ‘সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) এবং কিয়াও সোয়ে ওও (২৮) তথ্য সংগ্রহের সময় রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভেঙ্গেছেন। তাদের সাত বছর করে কারাদ- দেয়া হল এবং ইতোমধ্যে হাজতবাসের সময় তাদের সাজা থেকে বাদ যাবে।’ বরাবরই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসা দুই সাংবাদিক মামলার বিচারের সময় আদালতকে বলেছিলেন, গত ১২ ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের এক রেস্তরাঁয় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে দুই পুলিশ সদস্য তাদের হাতে কিছু মোড়ানো কাগজ ধরিয়ে দেন এবং তার পরপরই সেখান থেকে তাদের আটক করা হয়। ওই দুই সাংবাদিককে ধরার জন্য ওই ঘটনা যে সাজানো হয়েছিল, তা মামলার বিচারের সময় প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্যে উঠে এসেছিল। পশ্চিমা কূটনীতিকদের অনেকে ও কোন কোন অধিকার সংগঠন দুই সাংবাদিকের এই বিচারকে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়ায় থাকা মিয়ানমারের জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখছিলেন। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারে রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে এ্যাডলার বলেন, ‘মিয়ানমারের জন্য, রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওওর জন্য এবং বিশ্বের সব সংবাদমাধ্যমের জন্য আজ একটি দুঃখের দিন।’ জরুরী ভিত্তিতে এই রায় সংশোধনের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। আসিয়ানে নিযুক্ত মার্কিন দূত স্কট মারসিয়েল বলেন, আমার ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওও এবং তাদের পরিবারসহ মিয়ানমারের জন্য দুঃখ হচ্ছে। যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য কঠোর লড়াই করে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এটি তাদের সবার জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। মিয়ানমারের জনগণ তাদের বিচার ব্যবস্থায় আস্থা অর্জনের জন্য এই প্রক্রিয়াটি বাড়াবে বা কমানোর চেষ্টা করতে চাইবে বলে আমি মনে করি। মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ দূত ডান চুগ বলেন, সিদ্ধান্তটিতে তিনি চরম হতাশ হয়েছেন। ব্রিটিশ সরকারের হয়ে কথা বলার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর পক্ষে তিনি বলেন, এই রায় খুবই হতাশাজনক। আমরা এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার। এই ক্ষেত্রে আজ দীর্ঘ ছায়া পড়ল। বিচারক উপস্থাপিত প্রমাণ ও মিয়ানমারের আইন উপেক্ষা করেছেন। এটি আইনের শাসনের ওপর চরম আঘাত। জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সহায়তা সমন্বয়ক কুন্ট ওসটবি বলেন, ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওওকে তার পরিবারে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া উচিত। যাতে তারা সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে পারেন। আমরা তাদের মুক্তির দাবি অব্যাহত রাখব। ২০১৬ সালে রয়টার্সে যোগ দেয়া সাংবাদিক ওয়া লোন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আর কিয়াও সোয়ে ওও গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে রয়টার্সের প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গোপন নথিপত্র ছিল তাদের কাছে। পরে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক হওয়ার আগে ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ওও রাখাইনের সেনা অভিযানের সময় এক গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলার একটি ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন দুই সাংবাদিককে আটকের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানালেও মিয়ানমার সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। গত ৯ জুলাই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্টের অধীনে অভিযোগ এনেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তাকে হমকির মুখে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে সামরিক বাহিনীর কর্মকা- সম্পর্কে স্পর্শকাতর তথ্য ও নথি সংগ্রহ করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী গত ২ জুলাই মামলা বাতিলের আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিতেই ঘটনা সাজিয়ে দুই সাংবাদিককে পুলিশ আটক করেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সেদিন আদালতকে জানায়, রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে যখন আটক করা হয় তখন তাদের কাছে সেনাবাহিনীর গতিবিধির বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত নথি পাওয়া যায়। আর মোবাইলে পাওয়া যায় বিভিন্ন মাত্রার গোপনীয় তথ্য।
×